ফরিদপুরের পৌর এলাকায় শোভারামপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে এক শিক্ষকের যৌন হয়রানির কারণে এক শিক্ষার্থীর স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও তার পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ থেকে জানা যায়, ওই স্কুলের ধর্মীয় শিক্ষক মো. নাজমুল হকের শ্লীলতাহানির কবলে পড়ে নবম শ্রেণির এক ছাত্রীর পড়ালেখা বন্ধ হবার পথে। বর্তমানে ওই শিক্ষার্থী স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। এমনকি এ ঘটনার পর সে ঘর থেকেও বের হচ্ছে না। ঘরে বসে শুধু কেঁদেই চলেছে। গোসল ও খাওয়া দাওয়া প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে ওই ছাত্রী।
বিষয়টি নিয়ে স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির কাছে ছাত্রীর মা সুবিচার চাইতে গেলে তাকে নানা ভয়ভীতি দেখানো হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। উপায়ন্তর না পেয়ে ছাত্রীর মা ফরিদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লিটন ঢালির কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। ছাত্রীর সঙ্গে অশালীন আচরণ করায় ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে স্থানীয়রা। তবে বিষয়টি ধামাচাপা দিতে একটি মহল জোর তৎপরতা শুরু করেছে বলে জানা গেছে।
স্থানীয় এলাকাবাসী ও পরিবারের অভিযোগে, অম্বিকাপুর ইউনিয়নের জ্ঞানদিয়া এলাকার জনৈক আবুল কাসেমের মেয়ে শোভারামপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির বাণিজ্য বিভাগের ছাত্রী ৩ অক্টোবর স্কুলের শিক্ষক প্রকাশ কুমারের কাছে কালীবাড়ি এলাকায় প্রাইভেট পড়তে যায়। শিক্ষক সেই সময় একটি ফোন পেয়ে সবাইকে ছুটি দিয়ে বাড়ি চলে যান। ভুক্তভোগী ছাত্রীসহ কয়েকজন বাড়ি ফেরার পথে বৃষ্টি শুরু হলে তারা শোভারামপুর স্কুলের ভেতরে প্রবেশ করে। সেই সময় দুর্গাপূজার ছুটিতে স্কুল বন্ধ ছিল। কিন্তু স্কুলের একটি রুমে প্রাইভেট পড়াচ্ছিলেন ওই স্কুলের ধর্মীয় শিক্ষক মো. নাজমুল হক।
ভুক্তভোগী ছাত্রী তার এক বান্ধবীকে নিয়ে ওই রুমে গিয়ে বসে। পরে শিক্ষক নাজমুল হক সবাইকে ছুটি দিয়ে ভুক্তভোগী ছাত্রীকে জরুরি কথা আছে বলে থাকতে বলেন। এ সময় ওই ছাত্রীর সঙ্গে থাকা বান্ধবীকেও বের হয়ে চলে যেতে বলেন। সবাই চলে যাবার পর শিক্ষক নাজমুল হক ওই ছাত্রীর হাত ধরে কাছে টেনে নেয়ার চেষ্টা করেন। ছাত্রীটি হাত ছেড়ে দেয়ার কথা বললে তাকে চেপে ধরেন। ছাত্রীটি তখন কান্নাকাটি ও চিৎকার দিলে নাজমুল তার মুখ চেপে ধরে শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেন। ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে ছাত্রীটি রুম থেকে বের হয়ে যায়। বিষয়টি ভুক্তভোগী ছাত্রী ভয়ে প্রথমে কাউকে জানায়নি।
পূজার বন্ধের পর স্কুল খুললে স্কুলে না যাবার কারণ জানতে চাইলে ঘটনার ১২ দিন পর সে তার মাকে ঘটনাটি খুলে বলে এবং কাঁদতে থাকে। ছাত্রীর বাবা কাজের সুবাদে নোয়াখালী থাকায় ছাত্রীর মা বিষয়টি স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের কাছে জানান এবং বিচার চান। স্কুলের প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি জাফর খান ‘এ বিষয় নিয়ে বেশি কথা হলে মেয়ের মান সম্মান চলে যাবে, মেয়েকে বিয়ে দিতে পারবেন না, শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যাবে না’- এ ধরনের কথা বলে বিদায় করেন। বিষয়টি এক পর্যায়ে ফরিদপুর পরিবার নামে একটি ফেসবুক একাউন্ট থেকে প্রচার হলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এতে মেয়েটি স্কুল যাওয়া বন্ধ করে দেয়। পড়ালেখা বাদ দিয়ে ওই শিক্ষার্থী গোসল খাওয়া দাওয়া ভুলে কেবল কেঁদেই চলেছে।
এদিকে স্কুল শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের কাছে বিচার না পেয়ে ছাত্রীর মা উপজেলা প্রশাসন বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন।
দীর্ঘদিন ধরে স্কুলে না যাওয়ার কথা জানতে চাইলে ভুক্তভোগী ছাত্রী কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমি ভয়ে আছি। স্কুলে গেলে স্যার যদি আবার আমার সঙ্গে খারাপ কিছু করেন। ওই ঘটনার পর আমি আর আমার সহপাঠীদের সঙ্গে লজ্জায় কথা বলতে পারছি না। এ ধরনের ঘটনার জন্য কঠোর বিচার চাই।’
স্থানীয়রা অভিযোগ জানায়, এর আগে সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্রীকে বিরক্ত করতেন বলে ওই শিক্ষক নাজমুল হকের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে।
মঙ্গলবার (২৬ অক্টোবর) শোভারামপুর স্কুলে গিয়ে স্কুলের প্রধান শিক্ষক বা অভিযুক্ত শিক্ষককে পাওয়া যায়নি।
প্রধান শিক্ষক ঢাকায় থাকায় দায়িত্বে থাকা সহকারী প্রধান শিক্ষক কানাই লাল দাস জানান, তিনি এ বিষয়টি লোকমুখে শুনেছেন। তবে ভুক্তভোগী ও তার পরিবার কোনো অভিযোগ না দেয়ায় তারা শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছেন না।
এদিকে অভিযুক্ত শিক্ষক নাজমুল হক তিনদিনের ছুটি নিয়েছেন বলে জানান দায়িত্বে থাকা সহকারী প্রধান শিক্ষক।
মোবাইল ফোনে কথা হয় স্কুলের প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি জানান, এ ঘটনাটি আমাকে কেউ জানায়নি। মেয়েটি স্কুলে আসছে না, তাও আমি জানি না। আপনার মাধ্যমেই জানতে পারলাম যে মেয়েটি স্কুলে আসছে না।
এ বিষয়ে স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি জাফর আহমেদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলে তিনি ভারতে চিকিৎসাধীন থাকায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে, ম্যানেজিং কমিটির সদস্য সফি খান জানান, তারা বিষয়টি শুনেছেন। এ বিষয়ে লিখিত কোনো অভিযোগ না পাওয়ায় তারা কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছেন না।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লিটন ঢালি বলেন, এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করার জন্য উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সুত্রঃ সময় টিভি