লিভ-ইন সঙ্গীকে খুনের পর ঠাণ্ডা মাথায় প্রমাণ নিশ্চিহ্ন করেছিলেন আফতাব আমিন পুনাওয়ালা। শ্রদ্ধা ওয়ালকারের দেহটাই গায়েব করেছিলেন তিনি। সেটাও করেছিলেন ছক কষে, ঠাণ্ডা মাথায়। তদন্তে নেমে জানতে পেরেছে ভারতের দিল্লি পুলিশ।
তাদের দাবি, এর সবটাই আফতাব করেছিলেন অপরাধ নিয়ে সিনেমা আর সিরিজ দেখে। সেসব থেকেই খুনের প্রমাণ নিশ্চিহ্নের ছক কষেছিলেন।
২৮ বছরের আফতাবের বিরুদ্ধে অভিযোগ, ছয় মাস আগে ২৭ বছরের লিভ-ইন সঙ্গী শ্রদ্ধাকে খুন করেছিলেন তিনি। প্রেমিকার দেহ ৩৫ টুকরা করেছিলেন তিনি। তারপর দিল্লির বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে দিয়েছিলেন সেই টুকরা।
শ্রদ্ধার বাবার অভিযোগের ভিত্তিতে শনিবার গ্রেপ্তার হন আফতাব। তাকে পাঁচ দিনের পুলিশি হেফাজতে পাঠিয়েছেন আদালত। তাকে জেরা করে পুলিশ জেনেছে, অপরাধ নিয়ে সিরিজ ‘ডেক্সটার’ দেখতেন তিনি।
জেরায় তিনি স্বীকার করেন, বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছিলেন বলেই শ্রদ্ধাকে খুন করেছেন তিনি। জিজ্ঞাসাবাদে আফতাব জানিয়েছেন, শ্রদ্ধা বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছিলেন তাকে। আবার শ্রদ্ধার সঙ্গে সম্পর্কে থাকাকালীন ডেটিং অ্যাপে একাধিক নারীর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন। ফলে বিষয়টি নিয়ে শ্রদ্ধার সঙ্গে মনোমালিন্য লেগেই থাকতো
আমেরিকার এই জনপ্রিয় সিরিজ ২০০৬ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত চলেছিল। সিরিজের নায়ক ডেক্সটার মর্গান পুলিশের ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ ছিলেন। অবসর সময়ে খুন করে বেড়াতেন। ওই সিরিজ দেখেই ছক কষেছিলেন আফতাব।
পুলিশ জানিয়েছে, আফতাব মূলত মুম্বাইয়ের বাসিন্দা। শ্রদ্ধাও মুম্বাইয়ের মেয়ে। একটি কল সেন্টারে কাজ করার সময় ডেটিং অ্যাপের মাধ্যমে আলাপ হয় দুজনের। দক্ষিণ দিল্লির অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার অঙ্কিত চৌহান জানিয়েছেন, তিন বছর আগে একসঙ্গে থাকতে শুরু করেন আফতাব ও শ্রদ্ধা। এর পরই মুম্বাই ছেড়ে দিল্লি চলে আসেন। এক পর্যায়ে বিয়ের জন্য আফতাবকে চাপ দিতে শুরু করেন শ্রদ্ধা। এ নিয়ে রোজই চলত ঝামেলা।
চৌহান বলেছেন, ‘১৮ মে দুজনের ঝামেলা চরমে ওঠে। রাগের বশে শ্রদ্ধার গলা টিপে খুন করেন আফতাব। এরপর মেয়েটির দেহ টুকরা টুকরা করে ছাতারপুর জঙ্গল এলাকায় ফেলে আসেন। ’
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, শ্রদ্ধার দেহের ৩৫টি টুকরা করেছিলেন আফতাব। টুকরাগুলোর পচন এড়ানোর জন্য নতুন একটি ফ্রিজও কিনে ফেলেছিলেন আফতাব। সেখানেই ভরে রাখেন দেহের টুকরা। পরে ১৮ দিন ধরে রাতের অন্ধকারে দিল্লির বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে দেহের টুকরা ফেলে আসতেন আফতাব।
জানা গেছে, যেই ঘরে খুন করে শ্রদ্ধার দেহ টুকরা টুকরা করেছিলেন, সেখানেই রোজ রাতে ঘুমাতেন আফতাব। রোজ রাতে ফ্রিজে রাখা শ্রদ্ধার কাটা মাথা দেখতেন। দেহের সব টুকরা ফেলে দেওয়ার পর ফ্রিজটি ধুয়েমুছেও রেখেছিলেন আফতাব। শ্রদ্ধার আগে আফতাবের আরো অনেক নারীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিল বলেও জানা গেছে।
দিল্লি পুলিশের দাবি, গুগল করে মানবদেহ টুকরা করে কাটা এবং রক্তের দাগ পরিষ্কারের পদ্ধতি খুঁজেছিলেন আফতাব। গতকাল সোমবার রাতে আফতাবের ‘গুগল করার পরিসংখ্যান’ও প্রকাশ করা হয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকে।
তবে শুধু ডেক্সটার নয়, লিভ-ইন সঙ্গী শ্রদ্ধা ওয়ালকারকে খুনের আগে আফতাব একাধিক অপরাধমূলক সিনেমা ও ওয়েব সিরিজ দেখে পরিকল্পনা করেছিলেন বলে তদন্তকারী দলের সদস্যরা মনে করছেন। তাদেরই একজন জানিয়েছেন, এই চাঞ্চল্যকর খুনের ঘটনায় বেশ কয়েকটি অপরাধমূলক সিনেমা ও ওয়েবসিরিজের ‘ছায়া’ দেখা যাচ্ছে।
সেপ্টেম্বরে শ্রদ্ধার এক বন্ধু তার পরিবারকে জানান, আড়াই মাস ধরে শ্রদ্ধার কোনো খোঁজ মিলছে না। এমনকি তার মোবাইলও বন্ধ। এর পরই শ্রদ্ধার পরিবার সোশ্যাল মিডিয়ায় তার অ্যাকাউন্ট খতিয়ে দেখেন। কিন্তু এই আড়াই মাস কোনো পোস্ট দেননি তিনি।
নভেম্বরে শ্রদ্ধার বাবা বিকাশ মদন ওয়ালকার মুম্বাই পুলিশের দ্বারস্থ হন। আফতাবের সঙ্গে মেয়ের সম্পর্কের কথাও জানান। মুম্বাই পুলিশ শ্রদ্ধার ফোনের তথ্য খতিয়ে জানতে পারে, দিল্লিতে গিয়েছিলেন তিনি। এরপর দিল্লি পুলিশ তদন্ত শুরু করে এবং শনিবার ধরা পড়েন আফতাব।
সুত্রঃ আমার সংবাদ