নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র কাছে দেশি-বিদেশি অস্ত্রের ভান্ডার রয়েছে। এসব অস্ত্র চক্রটি তাদের প্রশিক্ষণের জন্য ব্যবহার করে আসছিলো। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে চক্রটির অস্ত্র সরবরাহকারীসহ তার দুই সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)।
রোববার (৮ জানুয়ারি) বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি ও রাজধানীর কদমতলী এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয় বলে আজ সোমবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
গ্রেপ্তার ৩ জন হলেন- কবীর আহাম্মদ (৫০), মো. ইয়াসিন (৪০) ও আব্দুর রহমান ইমরান (২৬)।
তাদের কাছ থেকে ৩টি দেশীয় পিস্তল, ৬টি একনলা বন্দুক, ১১ রাউন্ড গুলি, ১৪০ রাউন্ড সিসার তৈরি গুলি, ২ লিটার এসিড, গান পাউডার, ৩ লিটার অকটেন, ২ কার্টন ম্যাচ বক্স, ১ কয়েল বৈদ্যুতিক তার, ২ বোতল দাহ্য রাসায়নিক পদার্থ, ২টি স্প্রে ক্যান, ১টি লোহার করাত, স্কচ টেপ ও সুপার গ্লু, ট্রেনিংয়ের পোশাক ও টুপি এবং করাত ও ব্লেড উদ্ধার করা হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে সিটিটিসি প্রধান মো. আসাদুজ্জামান বলেন, গত বছরের ২১ ডিসেম্বর কাউন্টার টেরোরিজম ইনভেস্টিগেশন বিভাগের একটি টিম পার্বত্য চট্টগ্রামের দুর্গম পাহাড়ি এলাকা থেকে সাইফুল ইসলাম তুহিন ও নাঈম হোসেনকে গ্রেপ্তার করে। তাদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য ও সংগৃহীত গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে সংগঠনে অস্ত্র সরবরাহকারী হিসেবে কবির আহাম্মদকে শনাক্ত করতে সক্ষম হয় সিটিটিসি। পরে সিটিটিসির একটি আভিযানিক দল তাকে বান্দরবান থেকে গ্রেপ্তার করে। তার কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে বান্দরবানের নাইক্ষ্যাংছড়ি থানার বাইশারী এলাকার দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে অভিযান চালিয়ে মাটির নিচে লুকানো ২টি প্লাস্টিকের ড্রাম থেকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে কবিরের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, কবির জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়াকে অস্ত্র সরবরাহ করেছিল এবং উদ্ধারকৃত অস্ত্রের কিছু অংশ বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর কাছে সরবরাহ করার পরিকল্পনা ছিল। প্রাথমিকভাবে তার বিরুদ্ধে নাইক্ষ্যংছড়ি থানায় অস্ত্র মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার মাস্টারমাইন্ড হিসেবে পরিচিত পলাতক আসামি শামিন মাহফুজ দুর্গম পার্বত্য এলাকায় উক্ত সংগঠনের সশস্ত্র প্রশিক্ষণের জন্য বিভিন্ন ধাপে অস্ত্র সংগ্রহের জন্য তার সঙ্গে যোগাযোগ করে।
পরে কবির আহাম্মদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ঢাকার কদমতলী থেকে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার আরও দুই সক্রিয় সদস্য মো. ইয়াসিন ও আব্দুর রহমান ইমরানকে গ্রেপ্তার করা হয় বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
সিটিটিসিপ্রধান মো. আসাদুজ্জামান জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, মো. ইয়াসিন ও আব্দুর রহমান ইমরান জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার সক্রিয় সদস্য। তারা উভয়েই পলাতক আসামি শামিন মাহফুজের ঘনিষ্ঠ সহযোগী। আব্দুর রহমান ইমরানের মাধ্যমে শামিন মাহফুজ বিভিন্ন সময় তার সাংগঠনিক আর্থিক লেনদেন করত বলে জানা যায়। এছাড়া ইয়াসিন বিভিন্ন সময়ে শামিন মাহফুজের জন্য সেল্টার হাউস ব্যবস্থাপনাসহ সংগঠনের উগ্রবাদী আদর্শে দীক্ষিত হয়ে কথিত হিজরতে গমনকারীদের জন্য ব্যবহৃত সেল্টার হাউস ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে ছিলেন।
ডিএমপির সিটিটিসি’র সিটি ইন্টেলিজেন্স এ্যানালাইসিস ডিভিশন এ অভিযানটি পরিচালনা করে উল্লেখ করে সিটিটিসিপ্রধান জানান, গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে রাজধানীর ডেমরা থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটি মামলা হয়েছে।
সুত্রঃ সমকাল