নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া নিজেদের আত্মপ্রকাশের ঘোষণা দিতে বড় ধরনের হামলার পরিকল্পনা করেছিল। এরমধ্যে তারা কাশিমপুর কারাগারে হামলা চালিয়ে বন্দি থাকা জঙ্গি সংগঠনের নেতাকর্মীদের মুক্ত করতে চেয়েছিল। একই সঙ্গে একটি ভিডিওচিত্র ইন্টারনেটে প্রকাশ করে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনের দৃষ্টি আকর্ষণের লক্ষ্যে এগোচ্ছিল। যদিও ভিডিওটি উদ্ধার করেছে এলিট ফোর্স র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
বুধবার (২৫ জানুয়ারি) র্যাবসহ সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাত দিয়ে একাধিক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে এমনটা জানানো হয়েছে।
র্যাবের উদ্ধার করা ৮ মিনিট ৪৩ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা গেছে, বান্দরবানের দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে জর্দান ক্যাম্প, ডা. আহমেদ ক্যাম্প, রেতলাঙ ক্যাম্প, রামজুদান ক্যাম্পে জঙ্গি প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। বিশেষ ধরনের পোশাক পরে ২২ থেকে ২৩ জন একে-২২ রাইফেল ও শটগান নিয়ে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে।
এতে আরও দেখা যায়, জামাতুল আনসারের আমির আনিসুর রহমান ওরফে মাহমুদ এবং বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) একজন প্রশিক্ষক, জঙ্গি সংগঠনটির সামরিক কমান্ডার শিব্বির আহমেদ ওরফে হামিদ কারছে, দাওয়াতি শাখার প্রধান আবদুল্লাহ মায়মুন ও তাদের বোমা তৈরির কারিগর আবুল বাশার মৃধা ওরফে আলমকে। তবে জঙ্গি সংগঠনটির সামরিক শাখার প্রধান মাসুকুর রহমান ওরফে রনবীরকে ভিডিওতে দেখা যায়নি। যদিও গত ২৩ জানুয়ারি কক্সবাজারের কুতুপালংয়ে র্যাবের অভিযানে গ্রেপ্তার হয়েছেন রনবীর ও আবুল বাশার।
ভিডিওটি রনবীরের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে র্যাব। জিজ্ঞাদসাবাদে রনবীর র্যাবকে জানায়, ভিডিওটিতে রণকৌশল, অস্ত্র বহন, পুলিশের মুখোমুখি হলে তাদের অবস্থান, শত্রু ক্যাম্পে আক্রমণের সময় ৩৬০ ডিগ্রি কৌণিক দূরত্বে অবস্থানসহ অভিযানের মহড়া দেখানো হয়েছে।
ভিডিওতে হাস্যোজ্জ্বল জঙ্গিদের মাথায় কাফনের কাপড়, হাতে অস্ত্র-ওয়াকিটকি এবং তাদেরকে রান্না করতে, আড্ডা দিতে ও খাওয়া-দাওয়া করতে দেখা গেছে। কাউকে আবার পাহাড়ে তৈরি বাঙ্কার ও ক্যাম্প পাহারা দিতে দেখা গেছে।
এই ভিডিও প্রসঙ্গে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, রনবীরের কাছ থেকে উদ্ধার করা ভিডিওতে দেখা যায় কীভাবে তারা পাহাড়ের বিচ্ছিন্নতাবাদীর সহায়তায় দেশি-বিদেশি অস্ত্র নিয়ে সামরিক প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। হামলার মাধ্যমে নিজেদের অস্তিত্বের জানান দেওয়ার পরিকল্পনায় পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের কাছ থেকে অস্ত্র নিয়ে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। প্রশিক্ষণের নিতে গিয়ে দুজন মারা যাওয়ার তথ্য জানা গেছে। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে যাদের পাহাড়ে আনা হচ্ছে, তাদের এ ভিডিও দেখে প্রশিক্ষণের প্রাথমিক ধারণা দিতেই তা বানানো হয়েছে।
র্যাবের এই মুখপাত্র বলেন, একের পর এক সাড়াশি অভিযানে পাহাড়ে কয়েকজন আত্মগোপনের চলে যাওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন জায়গায় গা ঢাকা দিয়েছে।
এর আগে, সোমবার (২৩ জানুয়ারি) ভোরে কুতুপালং ৭ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ‘এ’ ব্লক এলাকায় অভিযান চালিয়ে ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার’ সামরিক শাখার প্রধান রনবীর ও তার সহযোগী বোমা বিশেষজ্ঞ আবু বাশারকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
অভিযানে একটি বিদেশি পিস্তল, তিনটি ম্যাগজিন, ১০ রাউন্ড গুলি, দুটি একনলা বন্দুক, ১১টি ১২ বোরের কার্তুজ, একটি খালি কার্টিজ, ১০০ রাউন্ড ২২ বোরের গুলি ও চাঞ্চল্যকর ভিডিও কনটেন্ট উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানায় র্যাব।
সুত্রঃ আরটিভি