ঢাকার আদালত প্রাঙ্গণ থেকে প্রকাশক দীপন হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গিকে ‘ছিনিয়ে নেওয়ার’ ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করেছে পুলিশ। তবে ওই দুই জঙ্গি মইনুল হাসান শামীম ও আবু সিদ্দিক সোহেল আদালত থেকে ‘পালিয়েছে’ বলে প্রতিবেদন দিয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ। তাদের প্রতিবেদনকে ‘কাল্পনিক’ বলে মনে করছে রাষ্ট্রপক্ষ।
ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আব্দুল্লাহ আবু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কারা কর্তৃপক্ষ যে প্রতিবেদন দিয়েছে তা কাল্পনিক। সেদিন দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নিয়েছিল তাদের সহকর্মীরা। কারা কর্তৃপক্ষ ঘটনাস্থলে না এসে কাল্পনিক প্রতিবেদন দিয়েছে। তাদের উচিত ছিল ঘটনাস্থলে এসে বিষয়টা বিস্তারিত জেনে প্রতিবেদন দেওয়া।’
গত ২০ নভেম্বর সকাল ৮টা ৫ মিনিটে কাশিমপুর থেকে ১২ জন আসামিকে প্রিজনভ্যানে ঢাকার আদালতে নিয়ে আসা হয়। সকাল ৯টা ৪০ মিনিটের দিকে প্রসিকিউশন বিভাগে আসামিদের মোহাম্মদপুর থানার একটি মামলায় হাজিরা দেওয়ার জন্য ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (সিজেএম) আদালত ভবনের সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনাল ৮-এ নিয়ে যাওয়া হয়। এদিন এ মামলায় তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত। শুনানি শেষে জামিনে থাকা ১৩ নম্বর আসামি মো. ঈদী আমিন (২৭) ও ১৪ নম্বর আসামি মেহেদী হাসান অমি ওরফে রাফি (২৪) আদালত থেকে বের হয়ে যান।
এরপর বেলা ১১টা ৫৫ মিনিটের দিকে আদালতের মূল ফটকের সামনে পৌঁছামাত্র আগে থেকেই দুটি মোটরসাইকেলে আনসার আল ইসলামের অজ্ঞাতনামা পাঁচ থেকে ছয় জন সদস্য, আদালতের আশপাশে অবস্থানরত তাদের আরও ১০ থেকে ১২ জন সদস্য হামলা করে। তারা কনস্টেবল আজাদের হেফাজতে থাকা আসামি মইনুল হাসান শামিম ওরফে সিফাত ওরফে সামির ওরফে ইমরান (২৪), মো. আবু সিদ্দিক সোহেল (৩৪) মো. আরাফাত রহমান (২৪) ও মো. আ. সবুর ওরফে রাজু ওরফে সাদ ওরফে সুজনকে (২১) ছিনিয়ে নিতে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যদের হত্যার উদ্দেশ্যে আক্রমণ করে। পুলিশ সদস্যরা তাদের বাধা দিলে আসামিদের মধ্যে কোনও একজন তার হাতে থাকা লোহা কাটার যন্ত্র দিয়ে কনস্টেবল আজাদের মুখে আঘাত করে।
পরবর্তী সময়ে এ ঘটনায় ঢাকা চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট আদালতের পরিদর্শক জুলহাস বাদী হয়ে কোতোয়ালী থানায় একটি মামলা করেন। মামলায় অজ্ঞানামা আসামি করা হয় আরও সাত থেকে আট জনকে।
পুলিশের মামলায় বলা হয়েছে জঙ্গি ‘ছিনতাই হয়েছে’
পুলিশের মামলার এজাহারে দুই জঙ্গি ‘ছিনতাই হয়েছে’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এজাহারে বলা হয়, আনসার আল ইসলামের সামরিক শাখার নেতা সৈয়দ মোহাম্মদ জিয়াউল হক ওরফে সাগর ওরফে বড় ভাই ওরফে মেজর জিয়ার (চাকরিচ্যুত মেজর) পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় আয়মান ওরফে মশিউর রহমান (৩৭), সাব্বিরুল হক চৌধুরী ওরফে আকাশ ওরফে কনিক (২৪), তানভীর ওরফে সামশেদ মিয়া ওরফে সাইফুল ওরফে তুষার বিশ্বাস (২৬), রিয়াজুল ইসলাম ওরফে রিয়াজ ওরফে সুমন (২৬) ও মো. ওমর ফারুক ওরফে নোমান ওরফে আলী ওরফে সাদ (২৮) পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে আসামিদের ছিনিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করে। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে দুটি মোটরসাইকেলযোগে আনসার আল ইসলামের অজ্ঞাতনামা পাঁচ থেকে ছয় সদস্য অবস্থান নেয়। এছাড়া আদালতের আশপাশে ও মূল ফটকের সামনে অবস্থান করা অজ্ঞাতনামা আরও ১০ থেকে ১২ জন আনসার আল ইসলামের সদস্য। এরপর তারা পুলিশের কাছ থেকে আসামি ছিনিয়ে নিয়ে যায়।
এজাহারে আরও বলা হয়, রবিবার সকাল ৮টা ৫ মিনিটে কাশিমপুর থেকে ১২ জন আসামিকে ঢাকার আদালতে প্রিজনভ্যানে নিয়ে আসা হয়। সকাল ৯টা ৪০ মিনিটের দিকে ঢাকার প্রসিকিউশন বিভাগে আসামিদের হাজিরা দেওয়ার জন্য সিজেএম আদালত ভবনের সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনাল ৮-এ নিয়ে যাওয়া হয়। এ মামলার শুনানি শেষে জামিনে থাকা ১৩ নম্বর আসামি মো. ঈদী আমিন (২৭) ও ১৪ নম্বর আসামি মেহেদী হাসান অমি ওরফে রাফি (২৪) আদালত থেকে বের হয়ে যায়। এরপর বেলা ১১টা ৫৫ মিনিটের দিকে আদালতের মূল ফটকের সামনে পৌঁছামাত্র আগে থেকেই দুটি মোটরসাইকেলে আনসার আল ইসলামের অজ্ঞাতনামা পাঁচ থেকে ছয় জন সদস্য এবং আদালতের আশপাশে অবস্থান নেওয়া তাদের আরও ১০ থেকে ১২ জন সদস্য হামলা করে। তারা কনস্টেবল আজাদের হেফাজতে থাকা আসামি মইনুল হাসান শামিম ওরফে সিফাত ওরফে সামির ওরফে ইমরান (২৪), মো. আবু সিদ্দিক সোহেল (৩৪) মো. আরাফাত রহমান (২৪) ও মো. আ. সবুর ওরফে রাজু ওরফে সাদ ওরফে সুজনকে (২১) ‘ছিনিয়ে নিতে’ কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যদের হত্যার উদ্দেশ্যে আক্রমণ করে। কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যরা তাদের বাধা দিলে আসামিদের মধ্যে কোনও একজন তার হাতে থাকা লোহা কাটার যন্ত্র দিয়ে কনস্টেবল আজাদের মুখে আঘাত করে।
দুই জঙ্গিকে ‘ছিনতাই করা হয়েছে’ উল্লেখ করে মামলার বাদী জুলহাস বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গত ২০ নভেম্বর ঢাকার চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত প্রাঙ্গণ থেকে পুলিশের ওপর পিপার স্প্রে করে প্রকাশক দীপন হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামিকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়। মামলার এজাহারে আমি সেটাই উল্লেখ করেছি। কারা কর্তৃপক্ষ যে প্রতিবেদন দিয়েছে তা ঠিক নয়।’
কারা কর্তৃপক্ষের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ‘পালিয়েছে’
কারাগারের প্রতিবেদনে দুই আসামি ‘পালিয়েছে’ উল্লেখ করে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ এর সিনিয়ার জেল সুপার (ভারপ্রাপ্ত) আমিরুল ইসলাম গত ৩০ নভেম্বর সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালে দুই আসামির বিষয়ে একটি প্রতিবেদন দাখিল করেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, আবু সিদ্দিক সোহেল ও মইনুল হাসান শামীম মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত আসামি হিসেবে কারাবন্দি ছিলেন। ২০২১ সালের ১০ ফেব্রুয়ারির মামলায় সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল তাদের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন। গত ২১ নভেম্বর রাত ১টা ৪০ মিনিটে তাদের কারাগারে বুঝে পাওয়া যায়নি। পুলিশকে জিজ্ঞেস করলে জানায়, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বন্দি আবু সিদ্দিক সোহেল ও মইনুল হাসান শামীম পালিয়ে গেছে।
এ বিষয়ে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ এর সিনিয়ার জেল সুপার (ভারপ্রাপ্ত) আমিরুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আসামিদের আনা-নেওয়ার দায়িত্বে থাকা পুলিশ দল তাৎক্ষণিক যে প্রতিবেদন দিয়েছে তার উপর আমরা আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেছি।
পরবর্তী সময়ে গত ৫ জানুয়ারি মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য দিন ধার্য ছিল। এদিন আসামিরা আদালতে উপস্থিত না হওয়ায় ঢাকা সন্ত্রাস দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মজিবুর রহমানের আদালত মোহাম্মদপুর থানার করা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি মইনুল হাসান শামীম ও আবু সিদ্দিক সোহেলের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন এবং মামলার পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ২৭ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেন আদালত।
সুত্রঃ বাংলা ট্রিবিউন