অলাভজনক প্রতিষ্ঠান অর্থাৎ, এনজিও পরিচালিত শিক্ষাকেন্দ্র ও ইনস্টিটিউট অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে আফগানিস্তানের তালেবান সরকার। এই ঘোষণাটি শুধুমাত্র দেশটির দক্ষিণাঞ্চলের জন্য প্রযোজ্য।
আজ সোমবার (১৭ এপ্রিল) তালেবান সরকার থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। এসব শিক্ষাকেন্দ্র ও ইনস্টিটিউটে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বেশিরভাগই নারী। সংবাদ সংস্থা এপির বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় গণমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস।
২০২১ সালের আগস্টে ফের আফগানিস্তানের ক্ষমতায় আসে তালেবানরা। এরপর থেকেই দেশটির পটভূমি পরিবর্তন হতে থাকে। সবচেয়ে বেশি পরিবর্তন হয়েছে নারীদের ক্ষেত্রে। বর্তমানে নারী নিপীড়নে বিশ্বের শীর্ষ দেশের তালিকায় রয়েছে আফগানিস্তান। মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে দেশটির নারীরা।
ক্ষমতায় এসেই নারীদের শিক্ষায় হস্তক্ষেপ করে তালেবান সরকার। মাধ্যমিক হতে শুরু করে উচ্চ শিক্ষা থেকে বঞ্চিত করা হয় নারীদের। তাদের জন্য চালু রাখা হয় শুধুমাত্র প্রাথমিক শিক্ষা অর্থাৎ পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়ার ব্যবস্থা।
প্রতিবেদনে হিন্দুস্তান টাইমস জানায়, আফগানিস্তানের হেলমান্দ ও কান্দাহার প্রদেশের এনজিও পরিচালিত শিক্ষাকেন্দ্র ও ইনস্টিটিউট বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে দেশটির শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে একটি কমিটিও করে দিয়েছে তারা। বন্ধ করা প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রমে নজর রাখবে ওই কমিটি। কেন শিক্ষাকেন্দ্র বন্ধ করা হয়েছে এ নিয়ে কোনো কিছু জানায়নি শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে কান্দাহার শিক্ষা বিভাগের মুখপাত্র মুতাওয়াকি আহম্মদ বলেন, ‘আগামী নোটিশ না দেওয়া পর্যন্ত ওসব শিক্ষাকেন্দ্রের কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। জনগণের অভিযোগের প্রেক্ষিতেই এমনটি করা হয়েছে।’
ক্ষমতায় এসে তালেবান কর্তৃপক্ষ যেসব সরকারি চাকরিতে নারী থাকা অপরিহার্য, সেসব জায়গা ছাড়া অন্য সব ক্ষেত্র থেকে নারীদের সরিয়ে দিয়েছে। আবার কাউকে বাড়িতে থাকার জন্য আগের বেতনের একটি অংশ দেওয়া হচ্ছে।
উদ্যান, বিনোদনকেন্দ্র, ব্যায়ামাগার, সরকারি গোসলখানায় নারীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। নারীদের প্রকাশ্যে আসতে হলে বোরকা পরে আসা বাধ্যতামূলক করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে নারীদের লেখাপড়া নিষিদ্ধ করা হয়।
শিক্ষাকেন্দ্র বন্ধের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে হেলমান্দ প্রদেশের দুটি এনজিও। তবে, তারা নাম প্রকাশ করতে রাজি হয়নি।
আফগানিস্তানের ৯ জেলায় কার্যক্রম চালাচ্ছে এমন একটি এনজিওর এক কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রতিটি ক্লাসে ২০ থেকে ৩০ শিক্ষার্থী নিয়ে আমরা প্রায় ৬৫০টি ক্লাস চালিয়ে আসছিলাম। ছেলে-মেয়ে উভয়েই ক্লাসগুলোতে আসতে পারতো। কিন্তু, আমাদের এখানে আসা বেশিরভাগ মেয়েরা স্কুলে যেতে পারে না।’
হিন্দুস্তান টাইমস বলছে, আফগানিস্তানে এনজিওভিত্তিক যেসব শিক্ষাকেন্দ্র চালু রয়েছে, সেগুলোর বেশিরভাগের অর্থায়ন আসে ইউনিসেফ থেকে। স্থানীয় এনজিওগুলো সাব-কন্ট্রাক্টর হিসেবে কাজ করে। নারী ও পুরুষ শিক্ষকেরা আলাদা আলাদা ক্লাস নিতেন সেখানে। তবে বিষয়টি নিয়ে এখনও কোনো মন্তব্য করেনি ইউনিসেফ।
সুত্রঃ এনটিভি নিউজ