বছরে দু’বার লক্ষাধিক মুসল্লির সমাগম হওয়ায় কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানের বেশ পরিচিতি আছে। কয়েক বছর আগে এর সঙ্গে জড়িয়ে গেছে একটি ট্র্যাজেডিও। ২০১৬ সালের ৭ জুলাই সেখানে জঙ্গি হামলায় দুই পুলিশ সদস্য ছাড়াও একজন নিরীহ বাসিন্দা প্রাণ হারান। এ ঘটনায় তিন দিন পরই মামলা হলেও সাত বছরেও শুরু হয়নি সাক্ষ্যগ্রহণ। এতে ন্যায়বিচার পাওয়া নিয়ে সন্দিহান নিহতদের স্বজনরা। বিচারের দীর্ঘসূত্রতার কারণে বাড়ছে নিরাপত্তাহীনতাও।
২০১৬ সালের এই দিনে শোলাকিয়ায় ঈদের জামাত শুরু হওয়ার কথা ছিল সকাল ১০টায়। কিন্তু সকাল পৌনে ৯টার দিকে ঈদগাহের অদূরে আজিম উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় এলাকায় পুলিশের চেকপোস্টে সন্ত্রাসীরা বিকট শব্দে বোমা বিস্ফোরণ ঘটায়, কেঁপে ওঠে পুরো এলাকা। এ সময় নব্য জেএমবির সদস্য ও শিক্ষার্থী আবির রহমান এবং শফিউল ইসলাম চাপাতি নিয়ে পুলিশের ওপর হামলা চালায়। এতে গুরুতর আহত হন কনস্টেবল আনসারুল হক ও জহিরুল ইসলাম। তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পথে মৃত্যু হয়।
পুলিশের সঙ্গে বন্দুক যুদ্ধের সময় নিহত হয় জঙ্গি আবির রহমান এবং পার্শ্ববর্তী বাসার গৃহবধূ ঝর্ণা রানী ভৌমিক। আহত অবস্থায় গ্রেপ্তার হয় জঙ্গি শফিউল ও কিশোরগঞ্জ শহরের পশ্চিম তারাপাশা এলাকার জাহিদুল হক তানিম। এ ঘটনায় ১০ জুলাই মামলা করেন আক্রান্ত চেকপোস্টের দায়িত্বে থাকা পাকুন্দিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. সামছুদ্দিন। এতে আসামি করা হয় শফিউল ও তানিমকে। শফিউল পরে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে।
শোলাকিয়ার মামলাটি কিশোরগঞ্জের সন্ত্রাস দমন ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন আছে বলে জানিয়েছেন পাবলিক প্রসিকিউটর আবু নাসের মো. ফারুক সঞ্জু। বিচারকের দায়িত্বে আছেন অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ জান্নাতুল ফেরদৌস ইবনে হক। ফারুক সঞ্জু বলেন, গত ৬ জুন এ মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ ছিল। সেদিন বাদীসহ ১৭ সাক্ষী উপস্থিত ছিলেন। চার আসামিকে এদিন হাজির করা হলেও আনোয়ার হোসেন রাজশাহী কারাগারে থাকায় সেদিন সাক্ষ্য গ্রহণ সম্ভব হয়নি। আগামী ২৫ জুলাই পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ ধার্য আছে। সেদিন সব আসামি হাজির করা গেলে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু করা যেতে পারে।
এদিকে শোলাকিয়ার হামলায় নিহত ঝর্ণা ভৌমিকের ছোট ছেলে শুভদেব এবার শহরের সরকারি গুরুদয়াল কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দেবেন। বড় ছেলে বাসুদেবকে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকে চাকরির ব্যবস্থা করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি এখন মাওয়া শাখায় আছেন বলে জানিয়েছেন তাদের বাবা গৌরাঙ্গ নাথ ভৌমিক।
ন্যায়বিচার পাওয়া নিয়ে আক্ষেপ প্রকাশ করে গৌরাঙ্গ ভৌমিক বলেন, সাত বছরেও ব্যাপক আলোচিত এ মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণই শুরু করতে পারেনি রাষ্ট্রপক্ষ। কবে এ প্রক্রিয়া শুরু হবে, কবে বিচার শেষ! আদৌ অভিযুক্তদের শাস্তি দেখে যেতে পারব কিনা তা নিয়ে সন্দিহান। একই সঙ্গে বিচার প্রক্রিয়া দীর্ঘ হওয়ায় ও আসামিদের সাজা না হওয়ায় পরিবার-পরিজনের নিরাপত্তার বিষয়টি আমাদের ভাবায়।
সুত্রঃ দৈনিক সমকাল