বাংলাদেশে কমপক্ষে অর্ধশত উগ্রবাদ ও জঙ্গি সংশ্লিষ্ট সংগঠনের কার্যক্রম চলছে। এর মধ্যে নিষিদ্ধ মাত্র ৮টি সংগঠন। বাকি আরো সাতটি কালো তালিকাভুক্ত দলকে নিষিদ্ধ করার জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনালয়ে আবেদন পড়েছে। তবে যে ৮টি সংগঠনকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে সেগুলোর কর্মকাণ্ডও পুরো বন্ধ হয়নি। বরং নিষিদ্ধগুলোই বেশি সক্রিয়।
এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, বেশ কয়েকটি জঙ্গি সংগঠন কালো তালিকাভুক্ত রয়েছে। এসব সংগঠনকে আমরা মনিটরিং করছি। এর মধ্যে তামীরউদ্দীন বাংলাদেশ, নব্য জেএমবি সহ বেশ কয়েকটি জঙ্গি সংগঠনের সক্রিয় অ্যাক্টিভিস্টদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যখন যেখানে গোপনে বা প্রকাশ্যে কার্যক্রম চালানোর চেষ্টা চালাচ্ছে সেখানেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের গ্রেপ্তার করছে।
এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, নতুন করে সাতটি জঙ্গি সংগঠনকে নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা হয়েছে। এ ব্যাপারে প্রস্তাবটি যাচাইবাছাই করা হচ্ছে। এই আটটি জঙ্গি সংগঠন ছাড়াও আরো প্রায় অর্ধশত সংগঠনের ব্যাপারে তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করছে পুলিশ-র্যাবসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা।
সূত্র জানায়, ১৯৮৯ সালে শ্লোগান দিয়ে বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিক জঙ্গিবাদের সূচনা ঘটে। ১৯৯২ সালের ৩০ এপ্রিল হরকাতুল জিহাদ জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে আত্মপ্রকাশ করে। তারা ভেতরে ভেতরে সংঘটিত হতে থাকে। এ অবস্থায় সশস্ত্র ‘শাহাদাত আল হিক্কমা’ নামে একটি জঙ্গি সংগঠন ১৯৯৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এরপর ১৯৯৮ সালে শায়খ আবদুর রহমান ও সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলাভাইর নেতৃত্বে জেএমবি নামে আরেকটি জঙ্গি সংগঠনের আত্মপ্রকাশ ঘটে। একই সময়ে (জেএমজেবি) জাগ্রত মুসলিম জনতা বাংলাদেশ ও হিজবুত তাওহিদ নামে আরো ২ টি জঙ্গি সংগঠনের উত্থান ঘটে। সর্বশেষ ২০১৬ সালের ১ জুলাই হলি আর্টিজানে বড় ধরনের হামলার মধ্য দিয়ে তারা আবারও শক্ত অবস্থান জানান দেয়। এ প্রসঙ্গে ডিআইজি (প্রশাসন) মো. হাবিবুর রহমান বলেন, বড় ধরনের হামলা চালানোর মত সক্ষমতা জঙ্গিদের নেই। জঙ্গিদের গড ফাদার, মাস্টারমাইন্ড জঙ্গি, অর্থ ও অস্ত্র যোগানদাতার এখন আর সক্রিয় নয়। তারা ইতিমধ্যে কেউ পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে, কেউ জেলে আছে আবার কেউ কেউ দেশের বাইরে পালিয়ে গেছে। মাঠ পর্যায়ের কিছু নবীন সদস্য ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতে পারে। সারাদেশে পুলিশ বাহিনী সতর্ক আছে। গুরুত্বপূর্নস্থান ও স্পর্শকাতর স্থাপনাগুলোতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে দেশের মসজিদ, স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে জঙ্গিবিরোধী প্রচারণা চালানো হচ্ছে।
সূত্র জানায়, বিগত জোট সরকারের আমলে জঙ্গি কার্যক্রমের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে শাহাদত-ই-আল হিকমা, হরকাতুল জিহাদ (হুজি), জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) ও জাগ্রত মুসলিম জনতা বাংলাদেশ (জেএমজেবি) সংগঠনগুলো নিষিদ্ধ করা হয়। মহাজোট সরকারের আমলে ২০০৯ সালের ২২ অক্টোবর হিজবুত তাহরিরকে নিষিদ্ধ করা হয়। এ ছাড়াও আরো প্রায় অর্ধশত সংগঠনের ব্যাপারে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে পুলিশ-র্যাবসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা। ওই সময় গোয়েন্দা সংশ্লিষ্টরা নিশ্চিত করে, ছদ্মনাম ব্যবহার করে জঙ্গি নেতারা সংগঠনকে শক্তিশালী করার চেষ্টা চালাচ্ছে।
২০১৩ সালে পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রাজনৈতিক শাখায় সক্রিয় জঙ্গি সংগঠনের একটি তালিকা দেয়। আনসারুল্লাহ বাংলা টিম, আল্লাহর দল, ইসলামিক সলিডারিটি ফ্রন্ট, তামীরউদ্দীন বাংলাদেশ, তৌহিদী ট্রাস্ট, হিজবু তাওহিদ, শাহাদত-ই-নবুত ও জামাত-আস-সাদাত নিষিদ্ধ করার জন্য প্রস্তাব দেয়া হয়।
ওই বছরের ২৬ আগস্ট স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, ৮টি জঙ্গি সংগঠনকে নিষিদ্ধ করা হচ্ছে। তবে এর মধ্যে শুধুমাত্র আনসারুল্লাহ বাংলা টিমকে (এবিটি) নিষিদ্ধ করা হয়।
সুত্রঃ বাংলাদেশ জার্নাল