ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ আইন বদলে সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট-২০২৩ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিগত আইনটি সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে ফেইসবুক পোস্ট ও সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলার বিষয়ে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস)। সিজিএস ২০১৮ সালের অক্টোবর থেকে চলতি বছরের ১১ এপ্রিল পর্যন্ত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা ১ হাজার ২৯৫টি মামলার তথ্য বিশ্লেষণ করেছে। তাতে উঠে এসেছে, এসব মামলার মধ্যে ২৭ দশমিক ৪১ শতাংশ মামলা হয়েছে সাংবাদিক ব্লগারদের বিরুদ্ধে। আমি ও এই আইনের একজন ভক্তভোগী।
সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট ২০২৩ এ মানবাধিকারকর্মী, সাংবাদিক এবং জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক কমিশনের অভিযোগের প্রেক্ষিতে শুধুমাত্র গণমাধ্যম কর্মীদের জন্য কারাদণ্ডের বিধান পরিবর্তন করে ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান এবং জামিন অযোগ্য ধারা পরিবর্তন করে জামিনযোগ্য করা হচ্ছে। নতুন এই আইনে সাধারণ মানুষের জন্য কোনো সুরক্ষা দেওয়ার প্রস্তাব নেই। যাদের নাম বা পদের পেছনে সাংবাদিক তকমা নেই তাদের কী হবে? তাদের কি জামিন হবে? তাদের কারাদণ্ডের বিধান কি থেকে যাবে? দেশের বেশিরভাগ মানুষের কাছে ২৫ লাখ টাকা জরিমানার বিধান কারাদণ্ডের চেয়েও ভয়ঙ্কর, সেই ভয়েই দেশের মানুষ বাকরুদ্ধ হয়ে থাকবে।’
আইসিটি আইনের ৫৭ ধারার ভয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কেউ কিছু লিখতে গিয়ে যেমন তটস্থ থাকতেন, ধারাটি রহিত হওয়ার মধ্য দিয়ে সেই ভয় অনেকটা কাটবে বলে মনে করা হলেও কার্যত হয়েছে উল্টো। উপরন্তু তথ্যপ্রযুক্তি আইন এবং পরবর্তীতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনেও যেমন ধর্মীয় অনুভূতির সংজ্ঞা এবং ঠিক কোন কথাটি লিখলে ‘মানহানি’ বলে গণ্য হবে সেটি স্পষ্ট ছিল না বলে যে কেউ যে কারো বিরুদ্ধে এই আইনে মামলা করতে পারতেন, নতুন আইনেও এই ‘ইচ্ছাকৃত অস্পষ্টতা’ থাকলে যে লাউ সেই কদু হবে। অর্থাৎ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধন করে সাইবার নিরাপত্তায় যে নতুন আইন হবে সেটি নতুন বোতলে পুরোনো মদ ছাড়া আর কিছুই না।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে চলমান মামলাগুলোর কী হবে? নিয়ম হচ্ছে নতুন আইন হলে আগের আইনে দায়ের করা মামলাগুলো কীভাবে চলবে, সেটি নতুন আইনে উল্লেখ থাকে। সুতরাং আগামী সেপ্টেম্বরে যদি সাইবার সিকিউরিটি আইন নামে নতুন আইন পাস হয় তাহলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের করা মামলাগুলোর ভবিষ্যৎ কী হবে, সে বিষয়ে নিশ্চয় নতুন আইনে নির্দেশনা থাকবে। অর্থাৎ নতুন আইন হলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের করা মামলাগুলো খারিজ হয়ে যাবে, সেটি ভাবার কোনো কারণ নেই।
দেশে-বিদেশে সমালোচনার মুখে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধনের নামে নতুন করে এমন কোনো আইন করা হবে কি না যেটি সাইবার দুনিয়ায় নাগরিককে সুরক্ষা দেয়ার বদলে তাদের বাকস্বাধীনতাকে আরও বেশি সংকুচিত করবে বলেই মনে হচ্ছে। কেননা তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারাকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে প্রতিস্থাপনের ফলে কী হয়েছে, সেটি গত পাঁচ বছর ধরেই সবাই দেখছে