আবু তালহার বিরুদ্ধে এ রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় কমপক্ষে ১০টি মামলা রয়েছে। তার মধ্যে কয়েকটি মামলা রয়েছে রাজ্য পুলিশের এসটিএফের হাতে এবং কয়েকটি মামলা রয়েছে কলকাতা পুলিশের এসটিএফের হাতে। গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, এই রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় ডেরা করেছিল আবু তালহা।
মাস খানেক আগেই ভারতীয় আল–কায়েদার শীর্ষ নেতা তথা দেশের মোস্ট ওয়ায়নটেড জঙ্গি ইকরামুল হক ওরফে আবু তালহাকে গ্রেফতার করেছিল বাংলাদেশ পুলিশ। আপাতত বাংলাদেশের জেলেই বন্দি রয়েছে এই জঙ্গি। তবে গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছে, তালহাকে এ রাজ্যে নিয়ে এসে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চাইছে কলকাতা পুলিশের এসটিএফ। সেই জন্য তাকে পদ্মাপার থেকে এপার বাংলায় নিয়ে আসতে উদ্যোগী হয়েছে কলকাতা পুলিশের এসটিএফ। তাদের আবেদনের ভিত্তিতে কোচবিহারের দিনহাটা আদালতে তালহার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। ইতিমধ্যে তাকে এ রাজ্যে ফিরিয়ে আনার তৎপরতা শুরু হয়েছে।
এসটিএফ সূত্রে জানা গিয়েছে, আবু তালহার বিরুদ্ধে এ রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় কমপক্ষে ১০টি মামলা রয়েছে। তার মধ্যে কয়েকটি মামলা রয়েছে রাজ্য পুলিশের এসটিএফের হাতে এবং কয়েকটি মামলা রয়েছে কলকাতা পুলিশের এসটিএফের হাতে। গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, এই রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় ডেরা করেছিল আবু তালহা। গত জুন মাসে ঢাকার সবুজবাগ থেকে বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থা আবু তালহাকে গ্রেফতার করেছিল। মূলত কলকাতা পুলিশের দেওয়া তথ্য থেকেই তাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল।
গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, আবু তালহা লকডাউন পর্বে পশ্চিমবঙ্গে ঢুকে সংগঠনের কাজ শুরু করে। হাওড়ার বাঁকড়া, কোচবিহারের দিনহাটা এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার নানা জায়গায় ঘাঁটি গেরেছিল এই জঙ্গি নেতা। গোয়েন্দা সূত্রের খবর, কোচবিহারে থাকাকালীন ভুয়ো আধার কার্ড এবং ভোটার কার্ড বানায় আবু তালহা। এরপর সেখানকার বাসিন্দা ফারিয়া আফরিন আনিকাকে বিয়ে করে। গত এপ্রিল মাসে হাওড়া স্টেশন থেকে আবু তালহার শ্বশুরকে গ্রেফতার করেছিল রাজ্য পুলিশের এসটিএফ। তার আগেই স্ত্রীকে নিয়ে বাংলাদেশের পালিয়ে ছিল আবু তালহা। সেখানে আবু তালহার সঙ্গে তার স্ত্রীকেউ গ্রেফতার করেন বাংলাদেশের গোয়েন্দারা।
কলকাতা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এই জঙ্গি মডিউল তৈরি করেছিল আবু তালহা। মধ্যপ্রদেশে প্রথম এই জঙ্গি মডিউলের সন্ধান পায় পুলিশ। এর পরে ধরপাকড় শুরু করে পুলিশ। সেই সময় তালহা পশ্চিমবঙ্গে ছিল। ধরপাকড়ের খবর পেয়ে অসম হয়ে চোরা পথে বাংলাদেশে পালিয়ে যায় আবু তালহা। তবে সেখান থেকে বিভিন্ন অ্যাপের মাধ্যমে এ রাজ্যের জঙ্গিদের নির্দেশ দিচ্ছিল শীর্ষ জঙ্গি নেতা।
উল্লেখ্য, কলকাতা এবং বাংলাদেশ ছাড়াও মধ্যপ্রদেশ, গুজরাট, বিহার, অসম, দিল্লি, ঝাড়খণ্ড সহ বিভিন্ন রাজ্যে নেটওয়ার্ক তৈরি করেছিল আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আল কায়েদা ইন ইন্ডিয়ান সাব কন্টিনেন্টের এই শীর্ষ নেতা। তার উদ্যোগে বিভিন্ন রাজ্যে আল–কায়েদার স্লিপার সেল তৈরি হয়েছিল বলে জানতে পারে পুলিশ।
জানা গিয়েছে, এই জঙ্গি আদতে বাংলাদেশের ময়মনসিংহের বাসিন্দা। ঢাকায় পড়াশোনার শেষ করে ২০১৮ সালে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে আসে। সেখানে আসার পরে উত্তরপ্রদেশে জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যোগ দেয়। এর পরে শুরু করে জঙ্গি কার্যকলাপ। পুলিশের নজরে আসতেই সেখান থেকে কোচবিহারে পালিয়ে যায় ওই জঙ্গি নেতা। পরে কলকাতায় এবং সেখান থেকে জয়নগর ও মথুরাপুরে এসে ডেরা তৈরি করে। সেখান থেকেই এ রাজ্য সহ ভিন রাজ্যে জঙ্গি নিয়োগ শুরু করে ধৃত জঙ্গি নেতা। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যেই রাজ্য পুলিশের এসটিএফ তার বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা দিয়েছে। তাছাড়া বেশ কয়েকজনের গোপন জবানবন্দি নিয়েছে। আরও বেশ কয়েকজনের খোঁজ করেছে পুলিশ।
সুত্রঃ হিন্দুস্থান টাইমস বাংলা