পাঁচ বছরের একটি শিশু। নারায়ণগঞ্জ বন্দর এলাকায় বাবা-মার সাথেই তার বেড়ে ওঠা। বাবা বাসা বাড়িতে দারোয়ান ও মা মানুষের বাড়িতে কাজ করেই সংসার চালান তারা। তাই জীবিকার তাগিদে তাদের ছোট ৫ বছরের কন্যা সন্তানকে বাসায় একা রেখেই প্রতিদিন চলে যান তাদের কাজে।
বেশি দিন হয়নি গত সেপ্টেম্বেরের কথা, বাসায় থাকা ছোট ৫ বছরের অবুঝ শিশুটিকে বাসায় একা পেয়ে ধর্ষণ করে ৬০ বছরের এক বৃদ্ধ। একই মাসে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে এক বিবাহিতা নারীকে গণধর্ষণ করে তার এলাকারই কয়েকজন লম্পট। ভুক্তভোগীর স্বামী প্রবাসে থাকায় তিনি তার সন্তান নিয়ে তার মার বাড়িতেই থাকতেন। এলাকায় চলাচলের সময় অভিযুক্তরা প্রায়ই তাকে উত্তক্ত করতো এবং কুপ্রস্তাব ও দিতো। রাজি না হওয়ায় রাতের বেলা বাড়িতে ঢুকেই ওই নারীকে মারধর ও গণধর্ষণ করে তারা।
প্রতিদিন আমাদের সমাজে এমন অনেক ঘটনা ঘটে লোক চক্ষুর আড়ালে। নারীদের প্রতি সহিংসতা, হত্যা, ধর্ষণ করার এই বিষয়টি দিন দিন বেড়েই চলেছে। এর থেকে ছাড় পাচ্ছে না শিশুরাও।
নারী ও শিশু নির্যাতনের তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে নারায়ণগঞ্জ মহিলা পরিষদ জানিয়েছে, গত একবছরে নারায়ণগঞ্জে এ বছর ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৯৭ জন নারী। হত্যা করা হয়েছে ৩৯ জন কে।
যা গত বছরের তুলনায় বেশি। এছাড়াও আত্মহত্যা ও আত্মহত্যার প্ররোচনায় পরেছেন ৩৭ জন নারী, অপহরণের শীকার হয়েছে ২১ জন, যৌন হয়রানীর শিকার হয়েছেন ৩২ জন, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার ৪০ জন, যৌতুকের জন্য নির্যাতন ২৭ জন নারী, শ্লীলতাহানীর শিকার হয়েছে ১৭ জনের, বলাৎকার করা হয়েছে ১১ জন কে, সাইবার ক্রাইমের শিকার ১২ জন, উত্ত্যক্তকরণের শিকার ৫১ জন, সব মিলিয়ে এবছর নারায়ণগঞ্জে নারী ও শিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছে ৩৮৪ জন। এর মধ্যে ধর্ষণের সংখ্যাই বেশি।
হিসেবের বাইরে অনেক নারীই লোকলজ্জার ভয়ে তাদের নির্যাতনের কথা কাছের মানুষ বা পরিবারের কাছে বলতে দ্বিধাবোধ করেণ। যার ফলে এমন অনেক নারী তাদের নির্যাতিত হওয়ার কথা প্রকাশ করতে না পেড়ে বেছে নেয় আত্মহত্যার পথ। এখনকার এই সময়ে নারীরা যেখানে বিভিন্ন ধরণের সামাজিক কুসংস্কার কাটিয়ে এগিয়ে আসছে সেখানে তাদের অগ্রযাত্রায় বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে যৌননিপীড়ন ও ধর্ষণের মতো নির্যাতন। আর দিনে দিনে এর সংখ্যা যেন বেড়েই চলেছে। আগামিতে নারী নির্যাতনের এই সংখ্যা কোথায় গিয়ে দাঁড়াতে পারে এ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করাই যায়।
নারী ও শিশু নির্যাতনের বিষয় সচেতন মহলের একজন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির সভাপতি লক্ষ্মী চক্রবর্তী যুগের চিন্তাকে বলেন, আমাদের প্রশাসনের সাহায্য নিতে হবে। নারীদের সুশিক্ষিত হতে হবে। নিজের ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। আমাদের সমাজের প্রতিটি মানুষের সচেতন হতে হবে।
এ বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) নারায়ণগঞ্জ জেলা সভাপতি ধীমান সাহা বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতন তো বাড়ছেই আমাদের সমাজের মূল্যবোধের অবক্ষয়, আইনের প্রয়োগ না করা সর্বোপরি মানসিকতার পরিবর্তন। নারী শিশুদের প্রতি আমাদের পুরুষ ক্রান্তিক যে দৃষ্টিভঙ্গি সেটা পরিবর্তন করার জন্য রাষ্ট্রকে এবং সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে।
কিন্তু রাষ্ট্র এবং সমাজ দুটোই ভেঙ্গে গেছে। যে কারণে এসব নির্যাতন গুলো পুরো দেশ ব্যাপী বাড়ছে। আমি মনে করি এটা অব্যশই একটি বড় সমস্যা। মানুষের সেই দৃষ্টি ভঙ্গি পরিবর্তন করার জন্য রাষ্ট্রকে এগিয়ে আসতে হবে। এ ধরনের ঘটনা আর না ঘটুক এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
সুত্রঃ দৈনিক যুগের চিন্তা