নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হিজবুত তাহরীরের শীর্ষ নেতা তৌহিদুর রহমান ওরফে তৌহিদ ওরফে সিফাতকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)।
নিষিদ্ধ ঘোষণার ১৪ বছর পর জঙ্গি সংগঠনটির এই শীর্ষ নেতাকে বুধবার (৬ ডিসেম্বর) কক্সবাজার থেকে গ্রেফতার করা হয়।
বৃহস্পতিবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে সিটিটিসি জানায়, গ্রেফতার তৌহিদ হিজবুত তাহরীরের শীর্ষ নেতাদের ২-৩ জনের মধ্যে একজন। ২০০৯ সালে নিষিদ্ধ হলেও সদস্য সংগ্রহসহ সাংগঠনিক নানা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে সংগঠনটি। তবে বিভিন্ন সময় সংগঠনটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা গেলেও আড়ালে থেকে গেছেন শীর্ষ নেতারা।
হিজবুত তাহরীর কাটআউট পদ্ধতিতে নিজেদের কার্যক্রম পরিচালনা করায় কোনোভাবেই সংগঠনটির শীর্ষ নেতাদের শনাক্ত করা যাচ্ছিল না বলে জানায় সিটিটিসি।
সংস্থাটি জানায়, হিজবুত তাহরীরের শীর্ষ নেতাদের শনাক্ত করে গ্রেফতার করা ছিল বড় একটা চ্যালেঞ্জ। তারা হাইলি রেডিকালাইজড এবং কাটআউট পদ্ধতিতে বিভিন্ন সাংগঠনিক কাজ চালিয়ে আসছিল। এজন্য কোনোভাবেই শীর্ষ নেতাদের শনাক্ত করতে পারছিলেন না গোয়েন্দারা। অবশেষে হিজবুত তাহরীরের শীর্ষ নেতা তৌহিদুর রহমান ওরফে তৌহিদ ওরফে সিফাত (২৯) নামে একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর গেয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার ও সিটিটিসি প্রধান মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘বুধবার (৬ ডিসেম্বর) রাতে কক্সবাজার থেকে তৌহিদকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গত ৩০ সেপ্টেম্বর হিজবুত তাহরীর অনলাইনে একটি সম্মেলন করে। তারা সম্মেলনের জন্য রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় পোস্টার টানায়, অনলাইন প্রচারণা ও এসএমএস পাঠানো হয়। সম্মেলনে নানা ধরনের বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘২০০৩ সালের একটি সম্মেলনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ করে হিজবুত তাহরীর। সে সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষকের প্রকাশ্য প্রচেষ্টায় সংগঠনটি যাত্রা শুরু করে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে হিজবুত তাহরীর প্রচলিত রাষ্ট্র ব্যবস্থায় বিশ্বাস করে না। তারা প্রচলিত আইন মানে না বলেও প্রচারণা চালিয়ে আসছে। বর্তমান রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করে খেলাফত প্রতিষ্ঠার জন্য দাওয়াতি কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। যার মাধ্যমে মানুষের মধ্যে এক ধরনের সাম্প্রদায়িক উসকানি দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। ২০০৯ সালে হিজবুত তাহরীরকে নিষিদ্ধ করে সরকার। এরপর থেকে আত্মগোপনে থেকে সংগঠনটির নেতারা তাদের কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। এরমধ্যে আমরা অনেককে গ্রেফতার করেছি। তবে শীর্ষ পর্যায়ের নেতা গ্রেফতার এবারই প্রথম।’
ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, সংগঠনটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে দেশে জঙ্গি ও মৌলবাদী কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল। তারা প্রচলিত সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে বিশ্বাস করে না এবং যেকোনো বড় ধরনের ঘটনা ঘটাতে পারে। শুরু থেকেই এ সংগঠনের সদস্যরা দেশের সার্বভৌমত্বকে আঘাত ও মানুষের জানমালের নিরাপত্তা বিঘ্নিত ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির প্রয়াসে একটি অনলাইনে দেশবিরোধী প্রচারণায় অংশগ্রহণ করে। এরই ধারাবাহিকতায় তারা গত কয়েক বছর ধরে অনলাইন সম্মেলন আয়োজনের মাধ্যমে নিষিদ্ধ সত্তা বা সংগঠনকে সমর্থন করে প্রচারণায় অংশগ্রহণ করে এবং দেশের সার্বভৌমত্বকে আঘাত, গণতন্ত্রকে উৎখাত ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করার ষড়যন্ত্র করে আসছে।
তিনি বলেন, গত ৩০ সেপ্টেম্বর তারা সরকারবিরোধী অনলাইন সম্মেলনের আয়োজন করে। এ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করার জন্য তারা ঢাকাসহ সারা দেশে পোস্টারিং করে এবং অনলাইনে প্রচারণা চালায়। সম্মেলনে দুইজন বক্তা ও একজন উপস্থাপক অংশগ্রহণ করে এবং সবাই ছদ্মনাম ব্যবহার করে। সম্মেলনে বক্তারা সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সরকারের সম্পর্ক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ভুল তথ্য দিয়ে উপস্থাপন করে। আবার ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়েও দেশের সাধারণ মানুষকে হিজবুত তাহরীরের নেতৃত্বে শাসন ব্যবস্থা কায়েমের মাধ্যমে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য উস্কানি দেয়। অনলাইন সম্মেলনটি লেবাননভিত্তিক একটি ইউটিউব চ্যানেলে সরাসরি প্রচার করা হয়।
সিটিটিসিপ্রধান বলেন, সম্মেলনে নবী মুহাম্মদ (স.) ও ইসলামের ইতিহাসের বিভিন্ন ঘটনা তাদের মতো করে উদাহরণ দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করে হিজবুত তাহরীরের অনুসারী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন ঘটনা ও ব্যক্তিকে ভুলভাবে উপস্থাপনের মাধ্যমে দেশের সার্বভৌমত্বকে খাটো করা হয়েছে। তাদের এ ধরনের কাজ দেশের বিদ্যমান আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন হিসেবে প্রতীয়মান হয়।
সুত্রঃ দৈনিক যুগান্তর