তরুণদের দলে ভেড়াতে চাইছে জঙ্গিরা। ফাইল ছবি।
জঙ্গিদের ট্রেনিং সিলেবাস অনুসারে তারা ভিতু, কৃপণ, বাচাল, ঘরকুনো লোকজনের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলে যুক্তদের নিজ সংগঠনে নিতে আগ্রহী নয়। এই পাঁচ শ্রেণির ব্যক্তিদের সংগঠনের জন্য ক্ষতিকর বলে মনে করছে তারা। সংক্ষেপে তাদের উল্লেখ করা হয়েছে ‘মরণব্যাধি’ নামে।
নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া নতুন সদস্য বাছাইয়ে চরম সতর্কতা অবলম্বন করছে। ধরা পড়ার ভয়সহ নানা কারণে দাওয়াত কার্যক্রমে সংগঠনটি গুরুত্ব দিচ্ছে পাঁচ বিষয়ে।
সম্প্রতি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হওয়া জঙ্গিদের কাছে থেকে পাওয়া ‘ট্রেনিং সিলেবাস’ অনুসারে তারা ভিতু, কৃপণ, বাচাল, ঘরকুনো লোকজনের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলে যুক্তদের নিজ সংগঠনে নিতে আগ্রহী নয়। এই পাঁচ শ্রেণির ব্যক্তিদের সংগঠনের জন্য ক্ষতিকর বলে মনে করছে তারা। সংক্ষেপে তাদের উল্লেখ করা হয়েছে ‘মরণব্যাধি’ নামে।
র্যাবের দেয়া তথ্য অনুসারে, নতুন জঙ্গি সংগঠনটি সদস্য সংগ্রহে দুটি পদ্ধতি অনুসরণ করছে। যার একটি দাওয়াতুল আম্মাহ (ব্যাপক দাওয়াত), অপরটি দাওয়াতুল খাচ্ছা (একক দাওয়াত)।
ট্রেনিং সিলেবাস অনুযায়ী তারা একক দাওয়াতকে গুরুত্ব দিচ্ছে। কাউকে দাওয়াত দেয়ার জন্য টার্গেট করা থেকে শুরু করে জিহাদের কৌশল শেখানো পর্যন্ত ৬টি ধাপে কাজ করে সংগঠনের দাওয়াতি শাখার সদস্যরা। যার মধ্যে রয়েছে টার্গেট ও নির্বাচন, সম্পর্ক ও যাচাইকরণ, ইমান জাগ্রতকরণ, চিন্তার বীজ বপন করা, মানহাজ ও যুদ্ধকৌশল।
কাউকে টার্গেট করে দাওয়াত দেয়ার প্রথম ধাপ ‘মারহালা’। এ সময় টার্গেট নির্বাচন ও বিশ্লেষণের কাজ করা হয়। মূলত এই ধাপেই পাঁচ ধরনের ব্যক্তিদের ‘মরণব্যাধি’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে তারা।
সিলেবাসে বলা হয়েছে, সর্বপ্রথম টার্গেট করতে হবে আমি কাকে কাকে দাওয়াত দেব, তারপর টার্গেট ব্যক্তিদের পাঁচটি ‘মরণব্যাধি’ বিশ্লেষণের মাধ্যমে নির্বাচন করতে হবে।
যার মধ্যে পাঁচ মরণব্যাধির একটি পাওয়া যাবে, তাকে সৈনিক হওয়ার অযোগ্য হিসেবে ধরা হবে। এমন ব্যক্তিদের দাওয়াত দেয়া হলে লাভের থেকে ক্ষতির সম্ভাবনাই বেশি থাকে বলে সিলেবাসে মত দেয়া হয়েছে।
পাঁচ শ্রেণির ব্যক্তিদের জঙ্গিদের পক্ষে নেয়া কঠিন বলেই মনে করছেন তাদের নীতিনির্ধারকেরা। এ জন্যই লিখিত নির্দেশনার মাধ্যমে সতর্ক করা হয়েছে সংগঠনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের।
এ বিষয়ে নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) মো. আব্দুর রশীদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নিঃসন্দেহে জঙ্গিরা এখন বৈজ্ঞানিক উপায়ে মগজ ধোলাই করার চেষ্টা চালাচ্ছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, যেসব প্রকৃতির লোকদের প্রভাবিত করা কঠিন, যাদের হিজরত করতে নিয়ে যাওয়া দুষ্কর হয়ে যায়, তাদের জঙ্গিরা দাওয়াত দেয়া বা দলভুক্ত করা থেকে বিরত থাকে।
‘তারা মনে করছে, যে ব্যক্তি ভিতু অথবা ঘরকুনো সে হিজরতে যেতে চাইবে না। কৃপণ ব্যক্তি দলে অর্থায়ন করবে না। নিজেদের জন্য ঝুঁকি বিবেচনায় জঙ্গিরা এসব ব্যক্তিকে এড়িয়ে চলতে চায়।’
সম্প্রতি কুমিল্লা থেকে বেশ কয়েকজন তরুণ নিখোঁজ হলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অনুসন্ধান শুরু করে। তখন উগ্রবাদে জড়িয়ে ঘর ছেড়ে বের হওয়ার প্রস্তুতিকালে ৪ তরুণকে আটক করা হয়।
একই সময়ে হিজরতে গিয়ে ফিরে আসা এক তরুণের দেয়া তথ্য ও গোয়েন্দা অনুসন্ধানে জানা যায়, জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া নামে নতুন একটি জঙ্গি সংগঠনের কথা। বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের নেতা ও সদস্যদের নিয়ে ২০১৭ সালে এ সংগঠনের কার্যক্রম শুরু হয়। যারা জঙ্গিবাদ বিস্তারের জন্য নতুন সদস্য সংগ্রহ করছে।
ধারাবাহিক অভিযানে এক মাসের মধ্যে এই সংগঠনের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাসহ ৩২ জনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব ও ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। এ ছাড়াও ৫৫ জনের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দারা।
র্যাব জানিয়েছে, পার্বত্য অঞ্চলে সক্রিয় বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কি চীন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) আশ্রয়ে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে নতুন জঙ্গিদের অনেকে। প্রতি মাসে নগদ ৩ লাখ টাকা ও কেএনএফ সদস্যদের খাবার খরচ বহন করার চুক্তিতে সেখানে জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।
জঙ্গি এবং কেএনএফ সদস্যদের গ্রেপ্তারে গত ৯ অক্টোবর থেকে যৌথ বাহিনীর অভিযান চলছে বলে জানান র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি বলেন, ‘হুজিবি, জেএমবি ও আনসার আল ইসলাম নিষিদ্ধ হওয়ায় তাদের অনুসারীরা এখন নতুন নামে সংগঠিত হতে চাচ্ছে। তারা সদস্য সংগ্রহে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের কোমলমতি তরুণদেরকে টার্গেট করেছে। সশস্ত্র হামলার প্রস্তুতি নিতে তরুণদের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করা হচ্ছে, তাদের মোটিভেশনাল কার্যক্রম চালাতেই নেয়া হচ্ছে দুর্গম অঞ্চলে। এ চক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তারে দেশের বিভিন্নস্থানে অভিযান চলমান।’
কুমিল্লা থেকে হিজরতে যাওয়া আবরারুল হককে শনাক্তের পর ডিএমপির সিটিটিসি গত ১৩ সেপ্টেম্বর মগবাজার থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে। তার দেয়া তথ্যে জঙ্গি সংগঠনের শীর্ষস্থানীয় নেতা ডাক্তার শাকির বিন ওয়ালীকে রামপুরার হাজীপাড়া থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার ও সিটিটিসি প্রধান মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘জঙ্গি তৎপরতা চালাতে ৭০-৮০ জন যুবককে সদস্য করেছে একটি গ্রুপ। তাদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’
সুত্রঃ নিউজবাংলা২৪.কম