একাই বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশে গাজীপুরের জয়দেবপুর রেলওয়ে স্টেশনে ট্রেনে ওঠার জন্য অপেক্ষা করছিল ষষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রী। এ সময় হুইসেল বাজিয়ে ট্রেন এসে দাঁড়ায় প্লাটফরমে। কিন্তু গন্তব্য যেতে ময়মনসিংহের ট্রেনে না উঠে ভুলবশত লালমনি এক্সপ্রেস ট্রেনে উঠে পড়ে মেয়েটি। টিকিট না পেয়ে সেই ট্রেনেই রেলওয়ে অ্যাটেনডেন্ট ধর্ষণ করে ওই কিশোরীকে।
ট্রেনটি বুধবার সকালে গাইবান্ধা পৌঁছলে মেয়েটি চিৎকার শুরু করে। ট্রেনে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা তাকে উদ্ধার করেন এবং গ্রেফতার করেন অভিযুক্ত অ্যাটেনডেন্ট আক্কাছ গাজীকে। এ বিষয়ে লালমনিরহাট জিআরপি থানায় মামলা করেছে রেলওয়ে পুলিশ। ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থীর বাড়ি ময়মনসিংহে। তার মা গাজীপুরে একটি ছাত্রাবাসে রাঁধুনি হিসাবে কাজ করেন।
গ্রেফতার অ্যাটেনডেন্ট আক্কাছ গাজী বরিশাল সদরের পাতাং এলাকার বজলু গাজীর ছেলে। তিনি লালমনিরহাট রেলওয়ের সেলুন বেয়ারা ভারপ্রাপ্ত অ্যাটেনডেন্ট ক্যারেজ অ্যান্ড ওয়াগান ডিপোতে কর্মরত।
মামলার বিবরণে জানা গেছে, ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার ওই কিশোরী মঙ্গলবার মধ্যরাতে জয়দেবপুর রেলওয়ে স্টেশনে ময়মনসিংহ জেলার ট্রেনে না উঠে ভুলবশত লালমনি এক্সপ্রেস ট্রেনে উঠে পড়ে। টিকিট চেকিংয়ের সময় তার কাছে টিকিট না পাওয়ায় অ্যাটেনডেন্ট আক্কাছ গাজী তার কক্ষে নিয়ে যায়। একপর্যায়ে কেবিন ফাঁকা পেয়ে বুধবার সকাল ৮টার দিকে ওই কিশোরীকে ধর্ষণ করে। এ সময় তার চিৎকারে ট্রেনে থাকা পুলিশ সদস্যরা বিবস্ত্র অবস্থায় ওই কিশোরীকে উদ্ধার করেন। সেইসঙ্গে অভিযুক্ত অ্যাটেনডেন্ট আক্কাছ গাজীকে হাতেনাতে আটক করেন।
লালমনিরহাট রেলওয়ে জিআরপি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফেরদৌস আলী সাংবাদিকদের বলেন-‘জয়দেবপুর রেলস্টেশনে ওই মেয়ে ময়মনসিংহের ট্রেনে ওঠার কথা ছিল, কিন্তু ভুলবশত সে লালমনি এক্সপ্রেসে উঠে পড়ে। কিন্তু তার কাছে টিকিট না থাকায় অ্যাটেনডেন্ট তাকে প্রথমে বসতে দিয়েছে। পরে সকালে যখন কেবিন খালি হয়েছে তখন ওই অ্যাটেনডেন্ট তাকে ওই কেবিনে নিয়ে গেছে। সেই কেবিন থেকে চিৎকার ও কান্না শুনতে পেয়ে ডিউটিরত রেলওয়ে পুলিশ দরজা খুলে দেখে যে ওই অবস্থা (আপত্তিকর)।
এরপর আমাদের পুলিশ অভিযুক্ত অ্যাটেনডেন্ট আক্কাছ গাজীকে আটক করে লালমনিরহাট নিয়ে আসে। পাশাপাশি মেয়েটির ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ ঘটনায় রেলওয়ে থানার এএসআই ইদেল হোসেন বাদী হয়ে মামলা করেছেন। আসামিকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।’
লালমনিরহাট জেলা সদর হাসপাতালে ওই কিশোরী চিকিৎসাধীন রয়েছে বলে বুধবার রাতে জানিয়েছেন হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. রমজান আলী। লালমনিরহাটের একটি মহিলা ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান সোহেল যুগান্তরকে বলেন, ‘চলন্ত ট্রেনে শিক্ষার্থী ধর্ষণের ঘটনা প্রথম শুনলাম। এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় আমাদের শিক্ষার্থীরা ট্রেন ভ্রমণে নিরাপদবোধ করবে না।’
সুত্রঃ যুগান্তর