ধর্ষণের শিকার এক তরুণীকে (২৮) খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে থেকে ফিল্মি কায়দায় তুলে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আজ রবিবার (২৮ জানুয়ারি) বিকাল ৫টার দিকে হাসপাতালের ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার (ওসিসি) থেকে ছাড়পত্র নিয়ে অপেক্ষারত মা ও ভাইয়ের সামনে থেকে ২০-২৫ জন যুবক তাকে একটি মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে দ্রুত চলে যায়।
এ সময় ওই মাইক্রোবাসকে পাহারা দিয়ে নিয়ে যায় আরও একটি প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেলে থাকা যুবকরা।
এদিকে, ভুক্তভোগী তরুণীকে তুলে নিয়ে যাওয়ার সময় হাসপাতালের অভ্যন্তরে থাকা লোকজন ডুমুরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান গাজী এজাজ আহমদের চাচাতো ভাই ৩ নং রুদাঘরা ইউপি চেয়ারম্যান গাজী তৌহিদুজ্জামানকে আটক করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করেছে স্থানীয়রা।
উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ আনা তরুণীকে অপহরণউপজেলা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ আনা তরুণীকে অপহরণ
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিকাল ৫টার দিকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওসিসিতে পরীক্ষা শেষে ছাড়পত্র নিয়ে ভুক্তভোগী তরুণী ওসিসির সামনে অপেক্ষারত তার মা ও ভাইয়ের কাছে যাচ্ছিলেন। এ সময় ওই তরুণীকে ধর্ষণ করার অভিযোগ ওঠা ডুমুরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান গাজী এজাজ আহমদের চাচাতো ভাই রুদাঘরা ইউপি চেয়ারম্যান গাজী তৌহিদুজ্জামানের নেতৃত্বে ২০-২৫ জন যুবক ফিল্মি কায়দায় ভুক্তভোগী তরুণীকে একটি মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে দ্রুত স্থান ত্যাগ করে। এ সময় অপহরণকারীদের হাতে কয়েকজন সাংবাদিক লাঞ্ছিত হন। একপর্যায়ে হাসপাতালের অভ্যন্তরে থাকা লোকজন রুদাঘরা ইউপি চেয়ারম্যান গাজী তৌহিদুজ্জামানকে আটক করে। পরে তাকে দায়িত্বরত পুলিশের হাতে সোপর্দ করা হয়।
ওসিসির কো-অর্ডিনেটর ডা. সুমন রায় জানান, ভুক্তভোগী তরুণী শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বিকাল ৫টার দিকে তার (ভুক্তভোগী কিশোরী) সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মা ও ভাইয়ের হেফাজতে দেওয়া হয়েছে। এর আগে ডুমুরিয়া থানার ওসি-তদন্ত মেয়েটির জবানবন্দি নিয়েছেন।
তিনি জানান, মেয়েটি জবানবন্দিতে বলেছে, সে থানায় মামলা করতে ইচ্ছুক নয়। সে থানার পরিবর্তে আদালতে মামলা করতে চায়। তার ধারণা থানায় মামলা করলে বিচার পাবে না বলে তার সন্দেহ রয়েছে। তাকে বলা হয়েছে, তার ভয়ের কোনো কারণ নেই। তার ডকুমেন্ট ওসিসিতে রয়েছে। এরপর সে তার ভাই ও মায়ের সঙ্গে চলে গেছে। তবে বাইরে যাওয়ার পর কি হয়েছে সেটা আমি বলতে পারব না।
তবে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী কমিশনার (সোনাডাঙ্গা) আবু নাসের মো. আল আমিন বলেন, ঘটনাটি তদন্ত করা হচ্ছে। গাজী তৌহিদ আমাদের হেফাজতে রয়েছে।’
এর আগে গত শনিবার রাতে খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য গাজী এজাজ আহমেদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ করেন ওই তরুণী। বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে তাকে অনেক দিন ধরে ধর্ষণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ তার। গতকাল শনিবার রাত সোয়া ১১টায় কিশোরী খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি হন।
ভুক্তভোগী তরুণী বলেন, মধুগ্রাম কলেজে পড়ার সময় উপজেলা চেয়ারম্যান গাজী এজাজ আহমেদের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তারপর বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে তিনি শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেছেন। কিন্তু পরে বিয়ের কথা বললে টালবাহানা শুরু করেন।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে ওই উপজেলা চেয়ারম্যান এজাজ আহমেদ বলেন, এ রকম কোনো ঘটনা ঘটেনি।
ডুমুরিয়া থানার ওসি সুকান্ত সাহা বলেন, এখনও পর্যন্ত কেউ থানায় এ ধরনের কোনো অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।
সুত্রঃ দেশ রূপান্তর