আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিয়মিত অভিযানে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের কার্যক্রম প্রায় স্তিমিত হয়ে পড়েছে। এজন্য তারা ‘শাহাদাত’ নামে নতুন একটি জঙ্গি সংগঠন গ্রুপ তৈরি করে সদস্য সংগ্রহসহ দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলেন।
আনসার আল ইসলামের রিক্রুটিং শাখার প্রধান মোহাম্মদ ইসমাইল হোসেন (২৫), দুই আঞ্চলিক প্রশিক্ষক জিহাদ হোসেন ওরফে হুজাইফা (২৪) ও আমিনুল ইসলামকে (২৫) গ্রেফতারের পর এ তথ্য জানিয়েছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
শুক্রবার (২৪ মে) র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-৩ এর যৌথ অভিযানে রাজধানীর গুলিস্তান ও নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এসময় তাদের কাছ থেকে তিনটি উগ্রবাদী বই উদ্ধার করা হয়।
শনিবার (২৫ মে) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার আরাফাত ইসলাম।
তিনি জানান, গ্রেফতার ৩ জন ‘আনসার আল ইসলামের’ সদস্য। তারা তালেবানের উত্থানে উদ্বুদ্ধ হয়ে আল কায়েদা মতাদর্শের জঙ্গি সংগঠন ‘আনসার আল ইসলামে’ যোগদান করেন। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়মিত অভিযানে আনসার আল ইসলামের কার্যক্রম প্রায় স্তিমিত হয়ে পড়েছে। তাই তারা আনসার আল ইসলাম মতাদর্শী ‘শাহাদাত’ নামে নতুন গ্রুপ তৈরি করে সদস্য সংগ্রহসহ দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করতে থাকেন। এই গ্রুপের সদস্য সংখ্যা শতাধিক। ইসমাইল হোসেন আনসার আল ইসলামের রিক্রুটিং শাখার প্রধান এবং ‘শাহাদাত’ গ্রুপেরও প্রধান হিসেবে কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলেন।
ইসমাইলের বরাতে কমান্ডার আরাফাত জানান, এই গ্রুপটি সালাহউদ্দিন নামক এক ব্যক্তির মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে, যিনি বর্তমানে বিদেশে অবস্থান করছেন। এই গ্রুপের অন্যান্য সদস্যরা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান করছেন। তারা বিভিন্ন সময় অনলাইনে উগ্রবাদী নেতাদের বক্তব্য দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে সংগঠনের সদস্যদের মাধ্যমে যোগদান করেন।
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, তারা বিভিন্ন সময়ে মসজিদ, বাসা বা বিভিন্ন স্থানে সদস্যদের নিয়ে গোপন সভা পরিচালনা করতেন এবং সংগঠনের সদস্যদের শারীরিক কসরত প্রশিক্ষণ দিতেন। তারা বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিশেষত চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, যশোর, সাতক্ষীরাসহ ঢাকার আশেপাশের বিভিন্ন এলাকাকে প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য নির্ধারণ করেছে বলে জানা যায়। যোগাযোগ রক্ষা এবং সংগঠনের সব প্রকার নির্দেশনা গোপনীয় অ্যাপসের মাধ্যমে তারা আদান প্রদান করতেন বলেও জানা গেছে।
তিনি আরও জানান, এ সংগঠনের অধিকাংশই মাদরাসার ছাত্র ও শিক্ষক। এ সংগঠনে মাদরাসা শিক্ষক ও সদস্যরা অত্যন্ত সু-কৌশলে মাদরাসাপড়ুয়া কোমলমতি ছাত্রদের এ বিষয়ে অনুপ্রাণিত করতেন।
র্যাবের মুখপাত্র বলেন, গ্রেফতার ইসমাইল নারায়ণগঞ্জের একটি মাদ্রাসায় দাওরায়ে হাদিসে অধ্যয়নরত। ১ বছর আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিদেশে অবস্থানরত জঙ্গি নেতা সালাউদ্দিনের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। সেই সূত্রে সে তার মাধ্যমে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে আনসার আল ইসলামে যোগদান করেন। এক পর্যায়ে তাকে সংগঠনের রিক্রুটিং শাখার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
গ্রেফতার জিহাদ একটি মাদরাসার শিক্ষক। সেও প্রায় ১ বছর আগে আনসার আল ইসলামে যোগদান করে। এরপর থেকে তার মাদরাসাসহ বিভিন্ন এলাকায় দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করতে থাকে। পরবর্তীতে সে সংগঠনের আঞ্চলিক প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পান।
গ্রেফতার আমিনুল পেশায় একজন পোশাক শ্রমিক। প্রায় ৬ মাস আগে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে বিদেশে অবস্থানরত এক জঙ্গি নেতার সঙ্গে পরিচয়সূত্রে সেও সংগঠনে যোগ দেয়।
সুত্রঃ জাগোনিউজ.২৪.কম