ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য উড়িষ্যার থানায় এক নারীকে পুলিশ সদস্যদের শারিরীক ও যৌন নির্যাতনের ঘটনায় ভারতজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, যৌন নির্যাতনের অভিযোগ তদন্ত করে দেখবেন হাইকোর্টের এক অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি।
গত সপ্তাহে ৩২ বছর বয়সী ওই নারী ও তার বাগদত্তা ভারতীয় এক সেনা কর্মকর্তা পুলিশের কাছে যৌন নির্যাতনের শিকার হওয়ার অভিযোগ তোলার পর দেশজুড়ে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে।
ঘটনার জেরে তিন নারীসহ চার পুলিশ সদস্যকে বরখাস্ত করা হয়েছে। বদলি করা হয়েছে আরেক পুলিশ কর্মকর্তাকেও। উড়িষ্যার অপরাধ তদন্ত শাখা এ মামলার তদন্ত শুরু করার পরই এসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়।
গত ১৫ সেপ্টেম্বর সকালে পুলিশ নির্যাতন চালায় বলে যে অভিযোগ করেছেন ওই নারী। উড়িষ্যা হাইকোর্টের নির্দেশে তিনি জামিন পাওয়ার পরেই জেলের ভেতরে কীভাবে তাকে অত্যাচার করা হয়েছিল সেকথা একটি ভিডিওতে বর্ণনা করেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে সেই ভিডিও ফুটেজ। ফুটেজটি দেখাও কঠিন।
পেশায় আইনজীবী ওই নারী উড়িষ্যার রাজধানী ভুবেনেশ্বরে একটি রেস্তোরাঁ চালান। তার সেনা কর্মকর্তা বাগদত্তাও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
ভিডিওতে দেখা যায়, এক নারী হুইলচেয়ারে বসে আছেন। তার ভেঙে যাওয়া একটি হাত গলার সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখা। যৌন নির্যাতনের শিকার হওয়ার কথা সাংবাদিকদের বর্ণনা করতে গিয়ে বারবার কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন তিনি।
ওই নারী বলেন, রাত একটা নাগাদ রেস্তোরাঁ বন্ধ করে তিনি ও তার বাগদত্তা ভরতপুর থানায় গিয়েছিলেন অভিযোগ দায়ের করতে। রাস্তায় একদল লোক তাদের উত্যক্ত করেছে এমন অভিযোগ জানাতে গিয়েছিলেন তারা।
অভিযুক্তদের ধরার জন্য যাতে দ্রুত ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়, সেই অনুরোধ করেছিলেন তারা। কারণ, সেই লোকগুলো তখনও ঘটনাস্থলের আশপাশেই ছিল।
নির্যাতনের শিকার নারী বলেন, “আমাদের অভিযোগ পুলিশ নিতে চাইছিল না। উল্টো তারা খারাপ আচরণ করতে শুরু করে। যখন জানাই আমি আইনে স্নাতক এবং আমার অধিকার জানি, তখন তারা আরও রেগে যায়।” এক পর্যায়ে পুলিশ তার বাগ্দত্তাকে হাজতে ঢোকালে ঘটনা অন্যদিকে মোড় নেয়।
নির্যাতিতা বলেন, “আমি আপত্তি জানালে দু’জন নারী পুলিশ আমার চুল ধরে টানতে থাকে এবং মারধর শুরু করে। আমি বারবার তাদের থামার জন্য অনুরোধ করি। কিন্তু তারা আমাকে করিডোর দিয়ে টেনে নিয়ে যায় এবং তাদের একজন আমার শ্বাসরোধ করার চেষ্টা করে। আমি বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে তারা আমার দুই হাত বেঁধে একটি ঘরে নিয়ে আটকে রাখে।
“একজন পুরুষ কর্মকর্তা এসে আমার ঊর্ধ্বাঙ্গের অন্তর্বাস খুলে বুকে লাথি মারতে শুরু করে। সকাল ছ’টার দিকে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কক্ষে ঢোকেন। তিনি আমার প্যান্ট টেনে নামিয়ে দেন। এরপর নিজের প্যান্টও নামিয়ে ফেলে আমাকে হুমকি দেন যে, সাহায্যের জন্য চিৎকার বন্ধ না করলে আমাকে একাধিকবার ধর্ষণ করা হবে।”
তবে পুলিশের ভাষ্য, মদ্যপ অবস্থায় থানায় গিয়েছিলেন ওই নারী ও তার বাগ্দত্তা। সে সময় ওই নারীর আচরণ ছিল মারমুখী। তিনি একজন নারী পুলিশ কর্মকর্তাকে থাপ্পড় দিয়েছিলেন এবং আরেকজন কর্মকর্তাকে কামড়েছিলেন। এরপরই ওই নারীকে গ্রেপ্তার করে কাস্টডিতে নেওয়া হয়।
কিন্তু ঘটনার তিন দিন পর হাইকোর্ট ওই নারীকে জামিনে মুক্তি দেয় এবং পুলিশ ও নিম্ন আদালতের সমালোচনা করে।
হাইকোর্টের বিচারপতি আদিত্য কুমার মহাপাত্র বলেন, রেকর্ডগুলো সাবধানতার সঙ্গে পরীক্ষা করে মনে হচ্ছে যে, ওই নারী যে অভিযোগ করেছেন তা গুরুতর। এটা আমাদের গণতান্ত্রিক ও সুশৃঙ্খল সমাজের ধারণার প্রেক্ষিতে ঘৃণ্য।” নারীটিকে গ্রেপ্তারের সময় আইন অনুযায়ী যেসব বিধি মানার কথা ছিল তা পুলিশ মানেনি।
বিচারপতি বলেন, সরকার পক্ষের আইনজীবী তাকে জানিয়েছেন, “অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে… এবং দোষ প্রমাণ হলে দায়ীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসার পর ভারতের অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পুলিশের এমন আচরণের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
অনেক সাবেক ও বর্তমান সেনা কর্মকর্তা ওই নারীর ভিডিওটি শেয়ার করে তার লড়াইয়ে সামিল থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। অভিযোগকারী একজন অবসরপ্রাপ্ত সেনা ব্রিগেডিয়ারের মেয়ে।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে উড়িষ্যা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতিকে একটি চিঠিও পাঠানো হয়েছে। ‘একজন সেনা কর্মকর্তাকে কোনও অভিযোগ ছাড়াই প্রায় ১৪ ঘণ্টা পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়েছিল এবং এতে তার সম্মানহানি হয়েছে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
সুত্র বিডি নিউজ ২৪.কম