রংপুর নগরের গণেশপুর এলাকার বকুলতলা জান্নাতবাগ মাদ্রাসার এক শিশু শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশের প্রাথমিক ধারণা, বলাৎকারের পর শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে শিশুটিকে। এ ঘটনায় মাদ্রাসার এক শিক্ষক ও ছাত্রকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে মাদ্রাসার তৃতীয় তলার একটি পরিত্যক্ত কক্ষ থেকে শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করা হয়। শিশুটি ওই মাদ্রাসার নাজেরা শাখার ছাত্র ছিল ও লিল্লাহ বোর্ডিংয়ে (আবাসিক ভবনে) থাকত। গ্রেপ্তার শিক্ষকের নাম আব্দুর রহমান।
বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) বকুলতলা জান্নাত বাগ হাফেজিয়া মাদ্রাসা ও লিল্লাহ বোর্ডিংয়ের তিন তলার একটি পরিত্যক্ত কক্ষ থেকে উদ্ধার করা হয় মরদেহ।
জানা যায়, আরবি শিক্ষার জন্য সপ্তাহ তিনেক আগে সিয়াম নামে ১০ বছরের শিশুকে রংপুর নগরীর বকুলতলা জান্নাতবাগ মাদ্রাসায় ভর্তি করান বাবা ভুট্টা মিয়া। গতকাল (২৭ নভেম্বর) বিকেলেও সিয়ামের সঙ্গে ফোনে কথা বলে পরিবারের লোকজন। অথচ রাত ৮টার দিকে খবর যায় সিয়াম অসুস্থ। পরে পরিবারে লোকজন মাদ্রাসায় এলে জানানো হয় সিয়াম মারা গেছে। নিহতের পরিবারের অভিযোগ, যৌন নির্যাতনের পর শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে সিয়ামকে।
সিয়ামের চাচা আনোয়ার ইসলাম বলেন, ‘বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর আমাদের খবর দেয়া হয় আমার ভাতিজা অসুস্থ। আমরা দ্রুত মাদ্রাসায় গেল হুজুর জানায় সিয়াম মারা গেছে। পরে হাসপাতালে এসে দেখি ওর শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। মলদ্বার দিয়েও রক্ত ঝরছে। এটা স্পষ্ট আমার ভাতিজা সিয়ামকে বলাৎকারের পরে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। আমরা দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’
সিয়ামের বাবা ভুট্টু মিয়া বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। টাকা পয়সা নাই। ইচ্ছা ছিল ছেলেকে আরবি শিখাবো। তাই তিন সপ্তাহ আগে এই মাদ্রাসায় ভর্তি করাই। গতকাল বিকেলেও বাচ্চার সঙ্গে আমার কথা হইছে। কি কি লাগবে আনতে বলছে। অথচ সন্ধ্যার সময় হুজুর ফোন দিয়ে বলে সিয়াম অসুস্থ তাড়াতাড়ি আসেন। পরে আসে শুনি আমার বাবা আর নাই। এসময় ছেলের হত্যার বিচার দাবি করে হত্যাকারীদের আইনের আওতায় আনার জন্য পুলিশ প্রশাসনের কাছে আকুতি জানাই।’
পুলিশ ও মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ জানায়, বৃহস্পতিবার মাগরিবের নামাজের পর নিয়মিত ক্লাস চলাকালীন মাদ্রাসার শিক্ষক সিয়ামকে দেখতে না পেয়ে সবাই মিলে তাকে খোঁজাখুঁজি করে। এক পর্যায়ে আব্দুর রহমান ওরফে আবদুল্লাহ নামের এক শিক্ষক মাদ্রাসার সদ্য নির্মিত ৩ তলার পরিত্যক্ত কক্ষে (বাথরুম) অচেতন অবস্থায় দেখতে পায় সিয়ামকে। পরে তাকে উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
আরও পড়ুন: মাদ্রাসাছাত্রকে বলাৎকার, গণপিটুনি দিয়ে শিক্ষককে পুলিশে
এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতেই রংপুর মেট্রোপলিটন কোতোয়ালি থানায় হত্যা মামলা করেছেন নিহত সিয়ামের বাবা।
রংপুর মেট্রোপলিটন কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আতাউর রহমান বলেন, এ ঘটনায় তিন শিক্ষকসহ সন্দেহভাজন পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। খুব শিগগিরই প্রকৃত ঘটনার সত্যতা উন্মোচন করা হবে।’
সুত্রঃ সমকাল