শামীমা বেগমকে ‘কয়েক দিনের মধ্যেই’ সিরিয়ার আটক শিবির থেকে মুক্তি দেওয়া হতে পারে। ২৫ বছর বয়সী শামীমা বর্তমানে আল রোজে বন্দী, যা একটি নোংরা, নৃশংস অস্থায়ী তাঁবুর শহর যেখানে বিপজ্জনক আইএসআইএস অনুগতরা বাস করে। কিন্তু ডিসেম্বরে স্বৈরশাসক বাশার আল-আসাদের শাসনের পতনের পর আইএসআইএস কনেকে সেখানে আটকে রাখা রক্ষীরা হয়তো ছেড়ে দিয়ে থাকতে পারে।
এক্সপ্রেসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ক্যাম্পটি পরিচালনাকারী কুর্দি-নেতৃত্বাধীন সিরিয়ান প্রতিরক্ষা বাহিনী গত ২৪ ঘণ্টা ধরে তুর্কি বিমান হামলা এবং দেশটির নতুন সরকার হায়াত তাহরির আল-শামের তীব্র আক্রমণের শিকার হয়েছে।
একজন কুর্দি-সিরীয় সাবেক প্রহরী সংবাদপত্রকে বলেছেন, ‘যদি এইচটিএস এবং তুর্কিরা কারাগার শিবিরের কাছাকাছি চলে আসে, তাহলে এসডিএফ সমস্ত বন্দীকে মুক্তি দিতে পারে’।
‘যদি তারা মনে করে যে, তারা তাদের বাড়িঘর এবং প্রিয়জনদের রক্ষা করার জন্য ক্যাম্পগুলোকে রক্ষা করতে পারবে না, তাহলে তারা নরকের দরজা খুলে দেবে’। বৃহস্পতিবার ডেভিড ল্যামি বলেন যে, সিরিয়ায় আটক থাকা বেগম বা ব্রিটিশ-সংশ্লিষ্ট ইসলামিক স্টেট সদস্যকে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন মার্কিন প্রশাসনের যেকোনো দাবি ব্রিটেন প্রত্যাখ্যান করবে, তারপর এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হল। ট্রাম্পের নতুন প্রশাসনের একজন সদস্য ইঙ্গিত দেওয়ার পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ মন্তব্য করেন যে, তিনি চান জিহাদি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক লড়াইয়ের ‘প্রতিশ্রুতি’র অংশ হিসেবে যুক্তরাজ্য তার নাগরিকদের দেশে ফিরিয়ে আনুক। সন্ত্রাসবাদ বিরোধী ব্রিফের জন্য প্রেসিডেন্টের উপ-সহকারী হিসেবে নিযুক্ত সেবাস্তিয়ান গোর্কা টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে স্যার কেয়ার স্টারমারকে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। গত বছর সরকারের ব্রিটিশ নাগরিকত্ব বাতিলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বেগম তার চূড়ান্ত আপিল হারানোর পর তার মন্তব্য এলো। ধারণা করা হচ্ছে, কট্টর ডানপন্থী ভাষ্যকার গোর্কার পরিকল্পনা অনুযায়ী, তাকে নির্বাসিত করা হবে এমন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সদস্যদের মধ্যে একজন হিসেবে তিনি বিবেচিত হবেন। এ অঞ্চলে কর্মরত দাতব্য সংস্থাগুলোর মতে, বর্তমানে উত্তর-পূর্ব সিরিয়ার কারাগার শিবিরে প্রায় ২০ জন ব্রিটিশ মহিলা, ৪০ জন শিশু এবং ১০ জন পুরুষ আটক রয়েছেন।
কিন্তু মি. ল্যামি বৃহস্পতিবার গুড মর্নিং ব্রিটেনকে স্পষ্ট ভাষায় বলেন : ‘শামীমা বেগম যুক্তরাজ্যে ফিরে আসবেন না’। ‘বিষয়টি আদালতের মাধ্যমে গড়ে উঠেছে, তিনি ব্রিটিশ নাগরিক নন এবং আমরা তাকে যুক্তরাজ্যে ফিরিয়ে আনব না’। আমরা এ ব্যাপারে খুবই স্পষ্ট।
‘আমরা আমাদের নিরাপত্তার স্বার্থে কাজ করব এবং ক্যাম্পগুলোতে বসবাসকারী অনেক মানুষই বিপজ্জনক, উগ্রপন্থী’।
তিনি বলেন, জনসাধারণের নিরাপত্তার জন্য ক্যাম্পে বসবাসকারী কিছু লোককে ‘বাড়ি পৌঁছানোর সাথে সাথেই কারাগারে পাঠানো হবে’। গোর্কা টাইমসকে বলেন, দেশগুলোকে এমনভাবে কাজ করতে হবে যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র হওয়ার তাদের ইচ্ছাকে প্রতিফলিত করে।
এবং যখন জিজ্ঞাসা করা হয় যে, ব্রিটেনকে আইএসআইএস বন্দীদের ফিরিয়ে নিতে বাধ্য করা উচিত কিনা, তিনি বলেন : ‘যে কোনো দেশ বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী জাতির একজন গুরুতর মিত্র এবং বন্ধু হতে চায় তাদের এইভাবে আচরণ করা উচিত। এমন কিছু করা উচিত যা সেই গুরুতর প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে’।
‘এটা যুক্তরাজ্যের জন্য দ্বিগুণ সত্য, যার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের হৃদয়ে একটি বিশেষ স্থান রয়েছে এবং আমরা সকলেই ‘বিশেষ সম্পর্ক’ সম্পূর্ণরূপে পুনরুদ্ধার দেখতে চাই’। আমেরিকার মাটিতে আইসিস-অনুপ্রাণিত সবচেয়ে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার মধ্যে একটিতে ১৪ জন নিহত হওয়ার মাত্র কয়েকদিন পর তিনি একথা বলছিলেন।
নিউ অরলিন্সে নববর্ষ উদযাপনকারী লোকজনের ওপর একটি পিক-আপ ট্রাক চালিয়ে দেন সেনাবাহিনীর সাবেক সৈনিক শামসুদ্দিন জব্বার। মধ্যপ্রাচ্যে আইসিসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ওয়াশিংটন দেশগুলোর একটি জোটের নেতৃত্ব দিচ্ছে, যার মধ্যে ব্রিটেনও রয়েছে।
সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর হাজার হাজার বন্দী সদস্য বর্তমানে পশ্চিমাদের সাথে জোটবদ্ধ সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সেসের বৃহৎ শিবিরে বন্দী রয়েছে।
২০১৯ সালে আইসিসের পরাজয়ের পর থেকে আমেরিকা তার মিত্রদের ওপর তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে, যাদের অনেকেই বছরের পর বছর ধরে আটক রয়েছে। মার্কিন বিচার বিভাগ যুক্তি দিয়েছে যে, বন্দীদের বাড়িতে এনে সেখানে বিচার করার ‘নৈতিক দায়িত্ব’ তাদের রয়েছে। যুক্তরাজ্য এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কঠোর অবস্থান নিয়েছে এবং বেশিরভাগ প্রত্যাবাসনের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছে – সবচেয়ে কুখ্যাত হল বেগমের মামলা। এখন ২৫ বছর বয়সী এ তরুণী ১৫ বছর বয়সে সিরিয়ায় যান, কিন্তু পরে ২০১৯ সালে আল-রোজ শরণার্থী শিবিরে তাকে পাওয়া যায়।
জাতীয় নিরাপত্তার কারণে নাগরিকত্ব বাতিলের পর থেকে তিনি তার নাগরিকত্ব পুনরুদ্ধারের জন্য লড়াই করে আসছিলেন, যতক্ষণ না গত বছর তার চূড়ান্ত আপিল প্রত্যাখ্যান করা হয়।
তবে, দাতব্য সংস্থাটি সতর্ক করেছে যে, সিরিয়ার শরণার্থী শিবিরে আরো প্রায় ২০ জন জিহাদি কনে থাকতে পারে যারা যুক্তরাজ্যে ফিরে যেতে চাইছে। আল-রোজ ক্যাম্পে বেগমের সাথে আটক থাকা এসব মহিলার কিছু সাক্ষ্য পরে দ্য গার্ডিয়ানের দেখা হোয়াটসঅ্যাপ বার্তায় উঠে আসে।
২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে পাঠানো এক বার্তায় ২০ বছর বয়সী একজন ব্রিটিশ মা বলেছিলেন যে, তিনি যুক্তরাজ্য কর্তৃপক্ষের দ্বারা অবহেলিত বোধ করছেন। ব্রিটিশ পরিবারের সদস্যদের কাছে পাঠানো বার্তায় বলা হয়েছিল : ‘যদি তারা আমাকে শিগগিরই বের না করে, তাহলে আমি এখানেই মারা যাব’। ‘আমি সত্যিই ফিরে যেতে চাই এবং তোমাদের সাথে থাকতে চাই’। আমার সত্যিই হাসপাতালের যতেœর প্রয়োজন।
২০২৩ সালে কিছু ব্রিটিশ মায়ের পাঠানো অন্য ছবিগুলোতে ক্যাম্পের ভেতরে শোচনীয় পরিস্থিতির চিত্র তুলে ধরা হয়েছে, যেখানে প্রায় ৩ হাজার লোক বাস করে, যার মধ্যে ৬৫ শতাংশই শিশু। ২০১৯ সালে মার্কিন সহায়তায় কুর্দি বাহিনী সিরিয়ায় ইসলামিক স্টেটকে উৎখাত করার পর পুরুষ যোদ্ধাদের – যাদের মধ্যে ব্রিটিশ পুরুষরাও ছিলেন – দেশটির উত্তরের কারাগারে পাঠানো হয়। কিন্তু উত্তর সিরিয়ার রোজ এবং আল-হোল নামে দুটি শরণার্থী শিবিরে নারী ও শিশুদের আটক রাখা হয়েছিল। জাতিসংঘের মতে, ক্যাম্প রোজ হল বেশ কয়েকটি শিবিরের মধ্যে একটি যেখানে গত পাঁচ বছর ধরে আইএসআইএল-এর সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে ব্যক্তিদের পরিবারকে আটকে রাখা হয়েছে। স্পেন এবং ফ্রান্সসহ বেশিরভাগ ইউরোপীয় দেশও তাদের নাগরিকদের বিচারের মুখোমুখি করার জন্য ফেরত পাঠিয়েছে। তারা খারাপ অবস্থার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং বলেছে যে, তাদের ফেরত না দিলে সন্ত্রাসবাদ নির্মূলের বিশ্বব্যাপী প্রচেষ্টা ব্যাহত হবে। ব্রিটিশ সরকার বেশিরভাগ নারীর নাগরিকত্ব কেড়ে নিয়েছে। সূত্র : দ্য ডেইলি মেইল।