মাগুরায় শিশু আছিয়া ধর্ষণ ও হত্যা মামলার রায় আগামী ১৭ মে ঘোষণা করবে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল। মঙ্গলবার (১৩ মে) বেলা ১১টার দিকে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে ট্রাইব্যুনালের বিচারক এম জাহিদ হাসান এ রায়ের দিন ধার্য করেন।
এর আগে, সোমবার (১২ মে) সকাল ১০টা থেকে মামলার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু হয় এবং প্রথম দফায় দুপুর ১২টা পর্যন্ত চলে। যুক্তিতর্ক সম্পূর্ণ না হওয়ায় পরদিন মঙ্গলবার পুনরায় তা উপস্থাপনের দিন ধার্য করা হয়।
মামলায় রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের আইনজীবীরা বিচারকের সামনে তথ্য-প্রমাণ ও সাক্ষ্য বিশ্লেষণ করে নিজেদের যুক্তি তুলে ধরেন।
রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনিরুল ইসলাম মকুল জানান, মামলার মোট ২৯ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৬ জন ছিলেন বিভিন্ন আলামত জব্দের সাক্ষী। এদের মধ্যে ১২ জন জব্দকৃত আলামতের সত্যতা আদালতে প্রমাণ করেছেন। মামলায় তিনটি মেডিকেল সার্টিফিকেট উপস্থাপন করা হয়, যার প্রত্যেকটিতে স্বাক্ষরকারী পাঁচজন চিকিৎসক সাক্ষ্য দিয়ে তাদের রিপোর্ট ও স্বাক্ষর আদালতে স্বীকার করেন।
তিনি বলেন, ‘উপস্থাপিত সাক্ষ্য ও প্রমাণের ভিত্তিতে স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে, প্রধান আসামি হিটু শেখ ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন (সংশোধিত ২০০৩) এর ৯(২) ধারায় দোষী। রাষ্ট্রপক্ষ আদালতে সন্দেহাতীতভাবে তা প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছে।’
ঘটনার পটভূমিতে জানা যায়, ২০২৪ সালের ৬ মার্চ মাগুরা সদর উপজেলার নিজনান্দুয়ালী গ্রামে বোনের শ্বশুরবাড়ি বেড়াতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার হয় ৮ বছরের শিশু আছিয়া। ধর্ষণের পর শিশুটিকে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, পরে অবস্থার অবনতি হলে ঢাকায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) স্থানান্তর করা হয়, যেখানে ১৩ মার্চ সে মৃত্যুবরণ করে।
এই মর্মান্তিক ঘটনায় দেশজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে আসে। স্থানীয় আইনজীবীরা ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে আসামিদের কোনো ধরনের আইনি সহায়তা না দেওয়ার ঘোষণাও দেন।
মামলার মূল আসামি হিটু শেখ ১৫ মার্চ আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন, যেখানে তিনি ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার দায় স্বীকার করেন। তবে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মাগুরা সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আলাউদ্দিন গত ১৩ এপ্রিল আদালতে চার আসামির বিরুদ্ধেই অভিযোগ এনে তদন্ত প্রতিবেদন (চার্জশিট) জমা দেন।
চার্জশিটে হিটু শেখকে ধর্ষণ ও হত্যার মূল আসামি হিসেবে উল্লেখ করা হয়। বাকি তিন আসামি—শিশুর বোনের জামাই সজিব শেখ, তার ভাই রাতুল শেখ এবং বোনের শাশুড়ি জাহেদা বেগমকে সহযোগিতা, ভয়ভীতি প্রদর্শন ও তথ্য গোপনের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়।
সু্ত্র: ঢাকা মেইল