এক সপ্তাহের মধ্যে দুটি ধর্ষণের অভিযোগ এবং এর সহিংসতার মাত্রা বাংলাদেশে নারীর নিরাপত্তার ইস্যুটিকে আবারও সামনে এনেছে।
পরিস্থিতিটাকে উদ্বেগজনক বলে উল্লেখ করছেন মানবাধিকার কর্মী ও নারী অধিকার নিয়ে আন্দোলনকারিরা। তারা প্রশ্ন তুলছেন রাষ্ট্রের ভূমিকা নিয়ে।
গত শুক্রবার কুমিল্লার মুরাদনগরে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের এক নারীকে ধর্ষণ এবং শনিবার সেই ঘটনার ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর তোলপাড় সৃষ্টি হয়। মুরাদনগরের ঘটনার আলোচনা সমালোচনার ও বিতর্কের মধ্যে মঙ্গলবার ভোলায় সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ এসেছে।
ভোলায় সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার নারী জানান, তার স্বামীকে আটক করে নির্যাতন চালিয়ে অর্থ আদায়ের জন্য ডেকে নেওয়ার পর তাকে নির্যাতন করেন।
“হেগো পা ধরছি যে ভাই আমনেরা আমার লগে এই কাজ কইরেন না। আমনেগো ছোড বইনের মতো কিন্তু হেরা মানে নাই। আমার লগে অত্যাচার করছে। এইডা হওয়ার পর আমার বাইচে থাকার কোনো ইচ্ছাই আর ছিল না। আমি দুইবার গেছিলাম আত্মহত্যা করতে আমি পারি নাই।”
এর আগে কুমিল্লার মুরাদনগরে সংখ্যালঘু নারীকে অভিযুক্ত ব্যক্তির সঙ্গে মারপিট করার ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। ভুক্তভোগী নারীকে পরিবারের সামনে বিবস্ত্র অবস্থায় ভিডিও করা হয়। ঘটনার পর ভুক্তভোগী পরিবারটি এলাকা ছাড়ার চেষ্টা করে।
মুরাদনগরে ভুক্তভোগীর মায়ের সামনে ওই ঘটনা ঘটে। তিনি বলেন, এখন আমরা বিচার চাই।
“বদনাম না এইডা? এতে তো মইরা যাওনের কথা। এই দুনিয়ায় না থাইকা তো মইরা যাওনের কথা। মুখ দেহানোর কথা?”
কুমিল্লার মুরাদনগরের পরিবারটি সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন হিউম্যান রাইটস কংগ্রেস ফর বাংলাদেশ মাইনরিটিজের কনভেনর লাকী বাছাড়।
বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, “সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে বিষয়গুলো আমরা দেখতে পেলাম, সেটা অত্যন্ত হৃদয়বিদারক এবং ঘটনাটা আমাদের সংখ্যালঘুদের জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে আরও পড়ে যাচ্ছি দিনে দিনে।”
পরিস্থিতি নিয়ে মানবাধিকার আইনজীবী সালমা আলী বলেন, “সংখ্যালঘুদের যে ঘটনাগুলো ধর্ষণসহ ঘটছে, এগুলো কিন্তু ভয়াবহ।”
লাকী বাছাড় বলেন, বিভিন্ন সংবাদপত্রের রিপোর্ট থেকে তাদের হিসাব হলো কুমিল্লায় এ বছর মার্চ থেকে জুন মাসের মধ্যে অন্তত ১২টি ধর্ষণের অভিযোগ এসেছে। এছাড়া পাঁচই অগাস্টের পর থেকে ৩০০টি ধর্ষণের অভিযোগ নিয়ে হাইকোর্টে রিট করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা।
“গত পাঁচই আগস্টের পর থেকে আমাদের কাছে ৩০০-এরও অধিক ধর্ষণ এবং গণধর্ষণের যে কেইসগুলো আসছে, যেটা আমরা হাইকোর্টে একটা রিট দায়ের করার চেষ্টা করতেছি যে ধর্ষকদের যেন প্রকৃত সাজা দেওয়া হয়।”
“অধিকাংশ থানাগুলো থেকে যখন আমরা সঠিক তথ্যগুলো নেওয়ার চেষ্টা করছি, সেখানে বেশি প্রমাণিত হচ্ছে প্রশাসনের কিছুটা নেগলিজেন্সি আছে” বলে উল্লেখ করেন লাকী বাছাড়।
সুত্রঃ বিবিসি বাংলা