জাতীয় দলে খেলার সময় যৌন হয়রানির অভিযোগ তুলেছেন জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক জাহানারা আলম। বিষয়টি এখন ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’। তার অভিযোগ, জাতীয় নারী দলের সাবেক নির্বাচক এবং নারী বিভাগের সাবেক ইনচার্জ তাকে যৌন হয়রানি করেছিলেন। যৌন হয়রানির এমন অভিযোগ শোনা গেছে অনেক অভিনেত্রীর মুখেও। আমাদের আজকের আয়োজন যৌন হয়রানি নিয়ে নির্মিত বাংলাদেশি সিনেমা ও তথ্যচিত্র নিয়ে। লিখেছেন- ফয়সাল আহমেদ
আই স্ট্যান্ড ফর ওমেন
একসঙ্গে একাধিক চলচ্চিত্র নির্মাণ করে যৌন হয়রানির প্রতিবাদ জানানোর নজির পৃথিবীতে আর নেই। ‘#আই স্ট্যান্ড ফর ওমেন’ কার্যক্রম সেদিক থেকে ছিল অনন্য। ‘সিনেমা হোক অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিপ্লবের হাতিয়ার’ স্লোগান নিয়ে ক্যামেরা আর গল্পে নিজের পয়সা খরচ করে একটি করে স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমা তৈরি করেছেন ঢাকার আট নির্মাতা। ২০১৮ সালে নেওয়া এই উদ্যোগের নাম দেওয়া হয়েছিল ‘#আই স্ট্যান্ড ফর ওম্যান’। কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি ঠেকাতে গত বছর হলিউড তারকারা শুরু করেন ‘#মিটু’ ও ‘টাইমস আপ’ কর্মসূচি। তবে সেগুলো সীমাবদ্ধ ছিল কেবলই সামাজিক মাধ্যম কিংবা বিভিন্ন উৎসবে। বাংলাদেশে ‘#আই স্ট্যান্ড ফর ওম্যান’ তেমনই একটি কার্যক্রম। তবে তার অংশ হিসেবে নির্মিত হলো ৮টি ছোট দৈর্ঘ্যরে ছবি। সব ছবিতেই উঠে এসেছে নারীর সঙ্গে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ধরনের যৌন নিপীড়ন ও হয়রানির ঘটনা। এ ছাড়া আছে একটি পিএসএ। এই উদ্যোগের ছবিগুলো হলো আফজাল হোসেন মুন্নার ‘দ্য ওল্ডম্যান অ্যান্ড দ্য গার্ল’ (নুসরাত ইমরোজ তিশা), জসীম আহমেদের ‘চকোলেট’ (গোলাম ফরিদা ছন্দা, শতাব্দী ওয়াদুদ, আজিজুল হাকিম), সাকি ফারজানার ‘দ্য পার্ক, দ্য বেঞ্চ অ্যান্ড দ্য গার্ল’, প্রতীক সরকারের ‘মুখোশ’ (ইন্তেখাব দিনার), আশিকুর রহমানের ‘অসম্ভাবিত’ (মৌসুমী হামিদ, শতাব্দী ওয়াদুদ), রাজু আহসানের ‘লিপস্টিক’ (জয়রাজ, তারিন রহমান) এবং আসিফ খানের ‘দ্য মাদার’। আর খিজির হায়াত খানের পিএসএ’র নাম ‘সে নো টু রেপ’।
টিয়ার গপ্পো
আন্না পুনমের ছোটগল্প ‘ভেনাসের ঝলসানো কিশোর ডানা’ অবলম্বনে নির্মাতা সোহেল রানা বয়াতি চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করছেন। ২০১৯ সালের ২২ নভেম্বর স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রটি মুক্তি পায়। চলচ্চিত্রটি প্রসঙ্গে বয়াতি বলেন, “সমাজের প্রতিটি মানুষ ধর্ষণের সঙ্গে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ বা মানসিকভাবে জড়িত। যখন দেখি ছোট শিশু যৌন নির্যাতনের হাত থেকে রেহাই পায় না তখন নিজেকে অপরাধী মনে হয়, অথচ আমাদের সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা পারে এই ব্যাধি দূর করতে। আমি ‘টিয়ার গপ্পো’তে ধর্ষিতার না-বলা কথাগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।” চলচ্চিত্রটির একটি বিশেষ চরিত্রে অভিনয় করেছেন গুণী অভিনেতা আশিষ খন্দকার। আরও অভিনয় করেছেন ইকবাল হোসেন, জয়িতা মহলানবিশ, নিলুফার ওয়াহিদ ও শিশু শিল্পী বৃষ্টি।
মুনতাসীর
নারীর বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি নানাভাবে উঠে এসেছে টিভি নাটক, ওয়েব সিরিজ বা চলচ্চিত্রে। কিন্তু দেশে যৌন হয়রানির শিকার পুরুষদের নিয়ে সেভাবে কাজ হয়নি। এটিকেই তাই নিজের প্রথম সিনেমার বিষয় হিসেবে বেছে নিয়েছেন তরুণ নির্মাতা ইফ্ফাত জাহান। ‘মুনতাসীর’ নামের ওয়েব ফিল্মটি ২০২২ সালের ১৯ নভেম্বর বিশ্ব পুরুষ দিবসে মুক্তি পায়। এতে অভিনয় করেছেন শতাব্দী ওয়াদুদ, অশোক বেপারী, মনোজ প্রামাণিক, এলিনা শাম্মী, ফারহানা হামিদ, ইকবাল হোসেইন। ‘বাংলাদেশে বেশির ভাগ সময়ই নারীদের যৌন হয়রানি নিয়ে কথা হয়। পুরুষরাও কিন্তু যৌন হয়রানির শিকার হয়। মেয়ে শিশুদের মতো ছেলে শিশুরাও নানাভাবে যৌন হয়রানির শিকার হয়। আমার বন্ধু, আশপাশের পরিচিত অনেকের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, ছেলেরাও নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। তখন মনে হলো এটা নিয়ে কাজ করা উচিত,’ বলছিলেন ইফ্ফাত জাহান।
সুত্র: আমাদের সময়
