বিনোদন জগতের ঝলমলে আলোর নিচে হোক কিংবা সাধারণ কোনো ঘরের শান্ত পরিবেশে, চরম অন্ধকার যে সর্বত্র লুকিয়ে থাকতে পারে—তারই এক মর্মান্তিক প্রমাণ হিসেবে সামনে এসেছে সম্প্রতি এক প্রতিষ্ঠিত দম্পতির দাম্পত্য কলহ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া কিছু ছবি এবং ভুক্তভোগী নারীর মুখ থেকে বেরিয়ে আসা অভিযোগ, তাদের ব্যক্তিগত জীবনের কঠিন সত্যকে জনসমক্ষে এনে দিয়েছে। ছবিগুলোতে ভুক্তভোগী নারীর চোখে আঘাতের যে ভয়াবহ চিহ্ন দেখা যায়, তা কেবল একটি বিচ্ছেদ নয়, বরং সমাজের গভীরে প্রোথিত গার্হস্থ্য সহিংসতার এক নগ্ন চিত্র তুলে ধরে।
ভুক্তভোগী এই নারী তার প্রাক্তন স্বামীর বিরুদ্ধে যে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ এনেছেন, তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এই ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় যে, খ্যাতি, অর্থ বা সামাজিক অবস্থান—কোনো কিছুই একজন নারীকে তার মৌলিক মানবাধিকার এবং ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে না। আমাদের বর্তমান সমাজে নারী যখন অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছে, কর্মক্ষেত্রে সফলতার স্বাক্ষর রাখছে, তখনও তাকে ঘরের ভেতরেই ক্ষমতা ও নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে। এটি প্রমাণ করে যে, সমাজে দৃশ্যমান পরিবর্তন এলেও, অনেক পুরুষের মানসিকতার পরিবর্তন হয়নি; তারা আজও নারীকে নিয়ন্ত্রণ করার পুরোনো মানসিকতা আঁকড়ে ধরে আছে, যা নারীর এগিয়ে চলার পথে একটি বড় বাধা।
নারী অধিকার কেবল কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ কোনো তত্ত্ব নয়; এটি প্রতিটি নারীর নিরাপদে ও সম্মানের সাথে বেঁচে থাকার অধিকার। এই আলোচিত ঘটনাটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, নারীর প্রতি এই অন্যায়-অবিচারকে সমাজ বহু বছর ধরে নীরবতা দিয়ে ঢেকে রেখেছে।
আমাদের করণীয়: নীরবতা ভেঙে প্রতিরোধ গড়ে তোলা
এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য আমাদের সম্মিলিতভাবে কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে:
নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিকে সমাজের ভয়, লাজ বা সংকোচকে জয় করে সাহসের সাথে মুখ খোলার জন্য উৎসাহিত করতে হবে এবং তাকে সম্পূর্ণ মানসিক ও আইনি সহযোগিতা দিতে হবে।
গার্হস্থ্য সহিংসতা দমন ও প্রতিরোধের জন্য প্রণীত আইনের কঠোর ও দ্রুত প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে, যাতে অপরাধীরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পায় এবং সমাজে দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়।
পরিবার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছোটবেলা থেকেই লিঙ্গ সংবেদনশীলতা (Gender Sensitivity) এবং পারস্পরিক সম্মানের শিক্ষা দিতে হবে, যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম সহিংসতা নয়, বরং সমতাকে বেছে নেয়।
এই ঘটনা যেন শুধু একটি সংবাদের শিরোনাম হয়ে না থাকে, বরং প্রতিটি মানুষকে নারীর উপর নির্যাতনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে উৎসাহিত করে এবং সমাজে নারীর প্রতি সম্মান ও নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসি—এটাই আমাদের একান্ত প্রত্যাশা।
