গ্রেপ্তার মাহমুদুল হাসান শিকদার।
গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলায় ধর্ষণের শিকার হয়ে এক ছাত্রী ‘আত্মহত্যার’ ঘটনায় করা মামলায় মাদ্রাসা সুপারের পর এবার এক শিক্ষিকাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে; যাকে সহায়তাকারী বলছে পুলিশ।
ঘটনার পরদিন ওই ছাত্রীর মা শুক্রবার সকালে মামলা করলে ওই শিক্ষিকাকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানান মুকসুদপুর থানার ওসি মোস্তফা কামাল।
এর আগে বৃহস্পতিবার সকালে ১৪ বছর বয়সি ওই ছাত্রী ‘আত্মহত্যার’ পর গ্রামবাসী মাদ্রাসা সুপারকে আটক করে পিটুনি দিয়ে পুলিশে দেয় বলে জানান মুকসুদপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শীতল চন্দ্র পাল।
মারা যাওয়া ওই ছাত্রী উপজেলার গোহালা ইউনিয়নের বামনডাঙ্গা আয়েশা সিদ্দিকা মহিলা হাফেজিয়া মাদ্রাসার পঞ্চম জামাতের ছাত্রী ছিল।
গ্রেপ্তার মোহাম্মদ মাহমুদুল হাসান শিকদার (৫১) বামনডাঙ্গা গ্রামের আয়েশা সিদ্দিকা মহিলা হাফেজিয়া মাদ্রাসার সুপার ও স্থানীয় মসজিদের ইমাম। তিনি বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার বারাশিয়া গ্রামের আব্দুল হামিদ শিকদারের ছেলে।
অপর গ্রেপ্তার খাদিজা বেগম (৩০) উপজেলার বামনডাঙ্গা গ্রামের ফজলু খালাসীর মেয়ে। তিনি একই মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষিকা।
পুলিশ জানায়, সকালে ওই ছাত্রীর মা বাদী হয়ে শিক্ষক মাহমুদুল হাসান শিকদার ও শিক্ষিকা খাদিজা বেগমকে আসামি করে মামলা করেন। পরে পুলিশ খাদিজাকে গ্রেপ্তার করে। আর আগের দিন আটক মাহমুদুল হাসান মুকসুদপুর থানায় আছেন।
মামলার বরাতে ওসি মোস্তফা কামাল বলেন, “২৬ নভেম্বর ওই ছাত্রী মাদ্রাসায় গেলে তাকে ধর্ষণ করেন শিক্ষক মাহমুদুল হাসান। সেই সময় মোবাইলে ধর্ষণের ভিডিও ধারণ করা হয় বলে জানা গেছে। আরে এ কাজে তাকে সহায়তা করেন শিক্ষিকা খাদিজা বেগম।
“ঘটনাটি পরিবারে জানাজানি হলে বৃহস্পতিবার সকালে নিজ বাড়িতে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ওই ছাত্রী ‘আত্মহত্যা’ করে বলে দাবি করছেন স্বজনরা।”
তিনি বলেন, বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে বিকালে এলাকাবাসী শিক্ষক মাহমুদুল হাসানকে আটক করে পিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করে। এতে অসুস্থ হওয়ায় তাকে পার্শ্ববর্তী মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
ওই ছাত্রীর বড় বোনের দাবি, “আমার বোনকে ধর্ষণের ভিডিও ধারণ করে রাখেন শিক্ষিকা খাদিজা বেগম। এরপর বিভিন্ন সময় মাদ্রাসার ছাত্রদের পাঠিয়ে আমার বোনকে ডেকে পাঠাতে তিনি।
“যেতে না চাইলে ওই শিক্ষিকা ফোন করে ওই শিক্ষককে বিয়ে করার জন্য বোনকে চাপ দিতেন। এসব কারণে আমার বোন আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। এ ঘটনায় জড়িতদের ফাঁসি চাই।”
ওই কিশোরীর মায়ের দাবি, “২৬ নভেম্বর শিক্ষক মাহমুদুল হাসান মাদ্রাসা ছুটির পর আমার মেয়েকে ধর্ষণ করেন। আর এই দৃশ্য মোবাইল ফোনে ধারণ ও ধর্ষণে সহযোগিতা করেন খাদিজা বেগম। ঘটনার পর মেয়ে বাড়িতে এসে বিষয়টি আমাদের জানায়।
“এরপর থেকে মেয়ে মাদ্রাসায় যাওয়া বন্ধ করে দেয়। লোকলজ্জায় আমরা বিষয়টি চেপে যাওয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু ওই শিক্ষক তার সহযোগী শিক্ষিকার মাধ্যমে মেয়েকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। এ কারণে আমার মেয়ে আত্মহত্যা করেছে। এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।”
ওসি মোস্তফা কামাল বলেন, ধর্ষণ ও আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে মাদ্রাসা শিক্ষক ও শিক্ষিকাকে আসামি করে মামলা হয়েছে।
ময়নাতদন্ত শেষে ওই ছাত্রীর মৃতদেহ বিকালে পরিবারের সদস্যদের কাছে স্থানান্তর করা হয়েছে বলে জানান এ পুলিশ কর্মকর্তা।
সুত্র: বিডিনিউজ ২৪ ডটকম
