বাংলাদেশে যেসব নারীরা হত্যার শিকার হন তাদের অধিকাংশই স্বামীর হাতে এমনটায় বলছেন বিশ্লেষকরা। এছাড়া শ্বশুর বাড়ি ও নিজের বাবা-মার বাড়িতেও হত্যাকাণ্ডের শিকার হন তারা। পরিসংখ্যান বলছে, এইসব হত্যাকাণ্ডের শতকরা ৫০ ভাগ ঘটনায় মামলাই হয় না। আর মামলা যেগুলো হয় তার মধ্যে বিচার হয় শতকরা পাঁচ ভাগেরও কম।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) হিসেবে চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে ১৮০ জন নারী তাদের স্বামীর হাতে হত্যার শিকার হয়েছেন। এইসব হত্যা ঘটেছে স্বামীর বাড়িতেই। আর এইসব হত্যাকাণ্ডে মামলা হয়েছে মাত্র ৯১টি। ৮৯ টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মামলার কোনো তথ্য নাই এই প্রতিষ্ঠানের কাছে।
এই সময়ে ৬০ জন নারী তার শ্বশুর বাড়ির লোকজনের হাতে নিহত হয়েছেন। আর নিজ বাড়ির লোকজনের হাতে নিহত হয়েছেন ৬৩ জন। এইসব হত্যাকাণ্ডের ঘটনায়ও মামলার সংখ্যা অর্ধেকেরও কম।
আসক বলছে, বাংলাদেশে নারীরা প্রচলিত হত্যা, ডাকাতি বা ছিনতাইয়ের মত অপরাধের মুখে পড়ে প্রাণ হারান খুবই কম। তারা স্বামীর হাতে এবং বাড়িতে হত্যার শিকার হন বেশি।
আসকের পর্যবেক্ষণে জানা যায়, প্রধানত দুইটি কারণে নারীরা তাদের স্বামীর হাতে হত্যার শিকার হচ্ছেন। যৌতুক এবং বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক। আসকের উপ-পরিচালক নীনা গোস্বামী বলেন, স্বামী অন্য নারীর সঙ্গে সম্পর্কের কারণে স্ত্রীকে হত্যা করছেন। আর অন্য পুরুষের সাথে সম্পর্ক আছে সন্দেহেও হত্যার শিকার হচ্ছেন স্ত্রী। আর বাংলাদেশে যৌতুকের বিষয়টি তো রয়েই গেছে।
যদিও বাংলাদেশে আইন করে যৌতুক নিষিদ্ধ করা আছে। শ্বশুর বাড়ির অন্য লোকজন প্রধান যৌতুকের কারণেই নারীকে হত্যা করেন। এছাড়া দাম্পত্য কলহের আরো কিছু কারণ আছে। তারমধ্যে প্রাধান্য বিস্তার এবং মতের মিল না হওয়াও কারণ। অন্যদিকে নারীরা তার বাবা-মায়ের বাড়িতে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন পারিবারিক দ্বন্দ্ব এবং জমি-জমা বা সম্পত্তি নিয়ে বিরোধের জেরে।
আসকের কর্মকর্তা নীনা গোস্বামী বলেন, ধর্ষণের ঘটনায় আমরা শতকরা পাঁচ ভাগ মামলায় বিচার পেতে দেখি। আর স্ত্রী হত্যা মামলায় বিচারের হার তার চেয়েও কম।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান বলেন, অভিজ্ঞতায় দেখেছি এই ধরনের হত্যা মামলায় শেষ পর্যন্ত সাক্ষী পাওয়া কঠিন। আবার দারিদ্র্য বা সামাজিক চাপ ও প্রভাবের কারণে মেয়ের পরিবার শেষ পর্যন্ত সমঝোতা করে ফেলেন।
সুত্রঃ চ্যালেন ২৪