একজন কর্মজীবী মায়ের হাহাকার শিরোনাম হলেও এটা আসলে একজন মায়ের নয়, এই শহরের শত সহস্র মায়ের বুকেরটা খা খা করে ওঠ্যে যখন প্রিয় সন্তানকে রেখে অফিস যেতে হয়। এমনই একটি অন্তরালে থাকা বাস্তবতাকে নেটিজেনদের সামনে এনেছেন তাসনিম কবির নামের এক তরুণী মা। নিজের ফেসবুকে সন্তানকে লেখা একটি বুক হাহাকার করা লেখা পোস্ট করেছেন। এই লেখার নাম দিয়েছেন ‘একজন অপরাধী মা বলছি!’
লেখার শুরুতে বলেছেন তাসনিম, ‘সকাল বেলা আজ জরুরি মিটিং, তাই রাসিনকে তড়িঘড়ি নাস্তা করিয়ে দিয়ে বের হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি, কিন্তু রাসিন কিছুতেই আমাকে যেতে দিবেনা, পা ধরে আছে। যদিও এই কাজটা অনেক বেশি কঠিন, তবুও আমি তাকে ফাঁকি দিয়ে বের হয়ে যাই ওকে ওর নানুর কাছে রেখে, কাজের মেয়েটা যখন দরজা লাগাচ্ছে কানে আসছে আমার ছেলের কান্না, ” মা আমায় নেয় নি”
তাসনিম লিখেছেন, বুকের ভিতর চিনচিনে ব্যথা নিয়ে শুনেও না শোনার ভান করে নেমে গেলাম লিফট দিয়ে, এ যেন নিজেই নিজের মনকে বুঝ দেয়ার বৃথা আস্ফালন! এরপর গাড়িতে আম্মুর ভিডিও কল পাই, ভিডিও তে যা দেখি—আমার ফেরেশতার মতো রাসিন আমার ওড়না জড়িয়ে আমার ওয়াশরুমের সামনে মাটিতে শুয়ে আছে, আম্মু কান্না করছে! আমাকে বকা দিচ্ছে! আমার ভিতরটা হাহাকার করে উঠল!
মায়ের বরাত দিয়ে তাসনিম কবির বলেন, আম্মু জানাল, আমি যাওয়ার পর রাসিন কোথাও থেকে আমার ব্যবহার করা এই ওড়নাটা বের করে এটার ঘ্রাণ নিচ্ছিল আর ফুপিয়ে ফুপিয়ে বলছিল, “মা আমায় নেয় নি” আম্মু তখন ওকে বলল “মা টয়লেটে গেছে, তোমাকে নিয়ে যাবে বের হয়েই”
এই কথা বলে আম্মু রাসিনের জন্য ফিডার আনতে কিচেনে যায়,কিছুক্ষণ পর এসে দেখে এই দৃশ্য! আমি ওয়াশরুমে আছি জেনে সে দরজার সামনেই পাহারা দিতে দিতে ঘুমিয়ে পরে এই ভয়ে যে আবার ওকে মা ফেলে যায় কিনা !
তাসনিম জারা বলেন, ভিডিও কলে আম্মু বকা দিচ্ছিল ওকে কেন এত কষ্ট দেই আমি! আমি নিশ্চুপ! এরকম নিশ্চুপ আমাকে থাকতে হয় অনেক সময়েই, অনেক কর্মজীবি “মা” দের মতন! মাঝেমাঝে ভাবি সব কাজ বাদ দিয়ে ওকে বুকে নিয়ে থাকি! কিন্তু কর্মময় এই জীবনে আমারো আছে ছোট ছোট কিছু স্বপ্ন!
কঠিন বাস্তবতার কথা উল্লেখ করে তাসনিম কবির বলেন, তাই প্রতিদিন আমার নিরন্তর যুদ্ধ চলে Motherhood + Work Life ব্যালেন্স করতে করতে, জানি না কতদিন পারব! দোয়া করবেন সবাই আমার ছোট্ট রাসিনের জন্য, সেইসাথে আমার ছোট ছোট স্বপ্নগুলোর জন্য! স্বপ্নের দিকে এই পথচলা মাঝেমাঝে ভীষণ কঠিন মনে হয়।
তাসনিম কবিরের এই পোস্টে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন ২১ হাজার সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারী। শতশত মন্তব্য আর হাজার হাজার শেয়ার যেন এক অব্যক্ত, অপ্রকাশ্য কঠোর বাস্তবতাকে তীর্যকভাবে আঘাত করছে।
kalerkantho
3 comments
মায়েরদের বুঝা উচিত শিশুরা তাদের অনুভব করে পাশে থাকতে চায় অনেক সময় ধরে
সতি্য বেদনাদায়ক এ ঘটনা শুনে খুব খারাপ লাগলো যা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়
আপনি যে সমস্যাটি বুঝতে পারছেন আশা করি আপানার সন্তানেকে আরেএকটু বেশি সময় দিয়েন