ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, স্যামসাংসহ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান অদম্য শোভা এবং তাঁর মায়ের পাশে থাকার ইচ্ছা ব্যক্ত করে কালের কণ্ঠ এবং শোভার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। দেশে তো বটেই যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, নেদারল্যান্ডস, জার্মানি, লেসেথোসহ বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকেও প্রবাসী বাঙালিরা শোভা ও তাঁর মায়ের পাশে দাঁড়াবার ইচ্ছা পোষণ করেছেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অদম্য শোভা এবং তাঁর মায়ের জীবনসংগ্রাম নিয়ে কালের কণ্ঠে’র অবসরে পাতায় প্রচ্ছদ প্রতিবেদন ছাপা হয়েছিল গত ৩০ নভেম্বর। শিরোনাম ‘ঠিকানাহীন’ শোভার ঠিকানা এখন বুয়েট। প্রকাশের পর থেকে প্রতিবেদনটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রীতিমতো ভাইরাল হয়েছে। ৩০ তারিখে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি নিয়ে এখনো ফেসবুকে আলোচনা চলছে। কেবল কালের কণ্ঠের ওয়েবসাইট থেকেই শেয়ার হয়েছে ৪০ হাজারের বেশিবার। কালের কণ্ঠে প্রকাশিত শোভার ছবিটি অনেকে নিজেদের প্রফাইল পিকচার হিসেবেও ব্যবহার করেছেন।
অপুষ্টি, ক্রমাগত শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের ফলে শোভার মা প্রতিমা রানী দাশ অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। টিউশনি টাকায় নিজের খরচ চালানোর পাশাপাশি এতদিন শোভা মায়ের চিকিৎসাও করিয়েছেন। এখন তাঁর মা ন্যাসোলাবিয়াল সিস্টে আক্রান্ত হয়েছেন। এরই মধ্যে মানুষ মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন শোভার মায়ের চিকিৎসার ভার নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা আমেরিকায় থাকা বাংলাদেশি প্রকৌশলী চন্দ্র নাথ লিখেছেন, ‘আমি মাথা নত করে শ্রদ্ধা ও সম্মান জানিয়েছি শোভাকে। কথা দিয়েছি, সামনের দিনগুলোতে আমরা আছি সবসময়। আর তাঁর মাকে নিয়ে একটা আশ্রয়ের ব্যবস্থাও করার চেষ্টা করব।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতে শোভার মায়ের দ্রুত অপারেশনে হয় সে ব্যবস্থাও করছেন লেসেথোয় থাকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাংলাদেশি ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক লন্ডনে থাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এক অধ্যাপকও আগামী যাত্রায় শোভার পাশে থাকতে চেয়েছেন। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্টের সচিব অধ্যক্ষ মো. শাহজাহান আলম সাজু জানিয়েছেন, শোভার মায়ের স্থায়ী একটা আবাসের জন্য সরকারের উচ্চ পর্যায়ে কথা বলবেন।
জীবনে অনেক প্রতিকূলতা এসেছে। কিন্তু শোভা কখনো হাল ছাড়েননি। এসএসসি এবং এইচএসসিতে গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছেন। এরপর বুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রুয়েট, কুয়েট, চুয়েটসহ দেশের সেরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি পরীক্ষায় মেধা তালিকায় প্রথম দিকে আছেন শোভা। সর্বশেষ দেশের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায়ও সমন্বিত মেধা তালিকায় ৬ষ্ঠ হয়েছেন।
আগামী ১০ তারিখে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তির মাধ্যমে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) পথচলা শুরু হবে শোভার। তিনি বলেছেন, ‘গেল কয়েকদিন ধরে অসংখ্য মানুষ পাশে দাঁড়াতে চেয়েছেন। এত বড় বড় মানুষদের সঙ্গে যোগাযোগ হবে জীবনে কল্পনাও করিনি। আমি সত্যিই খুব আনন্দিত এবং কৃতজ্ঞ। কিন্তু সবাইকে বলেছি, আপাতত আর্থিক সাহায্যের খুব একটা দরকার নেই। আপনাদের মানসিক সমর্থন আমাকে অনেক শক্তি দিয়েছে। টিউশনি করেই চলতে পারব। আমার মতো আরো অনেক শোভা আছে গ্রামেগঞ্জে, তাদের পাশে দাঁড়ালে খুশি হব। আমিও পড়াশোনা শেষ করে সেইসব অবহেলিত শোভাদের পাশে দাঁড়াতে চাই।’
আর্থিক সাহায্য নিতে না চাইলে যেন নিজ নিজ সন্তানকে শোভা যেন পড়ান- এমন অফারও দিয়েছেন অনেক অভিভাবক। মানুষের ভালোবাসায় আপ্লুত শোভার মা প্রতিমা রানী দাশ। তিনি বললেন, কালের কণ্ঠসহ সবার কাছে আমি কাছে কৃতজ্ঞ।
শোভা ও তাঁর মাকে স্যালুট জানিয়ে প্রবন্ধ লিখেছেন উইমেন চ্যাপ্টারের সম্পাদক সুপ্রীতি ধর। তিনি লিখেছেন, ‘কালের কণ্ঠে প্রকাশিত ফিচারটি যে কতবার পড়েছি, বলতে পারব না। বারবারই বুকের ভেতরটা খামচে ধরেছে এক চিরচেনা কষ্ট।…এই মেয়েরা হেরে যায় না কখনো, এই মায়েরাও হারেন না।’
সুত্রঃ কালেরকন্ঠ
1 comment
শোভা তুমি এগিয়ে যাও, আমরা তোমার পাশে আছি, তুমি যে অভূতপূর্ব ধৈর্য্যের পরিচয় দিয়েছো তা আরো শোভাদের এগিয়ে যেতে অনুপ্রেরণা দেবে।