নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্কীয়ার শীর্ষ নেতা শামীন মাহফুজ কৃষিবিদ সেজে পাহাড়ে ২০১১ সাল থেকে জঙ্গি প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালাতেন। তার লক্ষ্য ছিল এই অঞ্চল নিয়ে একটি ‘ইসলামি রাষ্ট্র’ কায়েম করা। গহিন অরণ্যে ছাগলের খামারের কথা বলে গোপনে চালাতেন জঙ্গি কার্যক্রম। তবে পুলিশের অভিযানে তিনি গ্রেফতার হন ২০১১ সালে। জঙ্গি কার্যক্রম চালিয়ে এই অঞ্চলকে ইসলামি রাষ্ট্র বানানোর কথা পুলিশের কাছে স্বীকারও করেছিলেন। থানচি থানায় তার বিরুদ্ধে দুটি মামলা রয়েছে, যার চার্জশিটও দেওয়া হয়। তবে জামিনে মুক্ত হয়ে তিনি পলাতক রয়েছেন।
কৃষি কার্যক্রম চালাতে শামীন ২০১১ সাল বান্দারবানের থানচি উপজেলার বলিপাড়ায় যান। খোলেন কানসালটেন্সি অফিস। তবে তাদের হাবভাব ভালো না লাগায় আশপাশের মানুষ গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তাদের বিষয়টি জানায়। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা পুলিশকে জানান। বান্দরবানের তৎকালীন এসপি কামরুল আহসান (বর্তমানে সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি) অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করেন। সঙ্গে আরেক জন জঙ্গি ইসমাইল হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়। ইসমাইলের বাড়ি চাঁদপুরে।
পুলিশের কাছে জিজ্ঞাসাবাদে শামীন বলেন, মানুষের কৃষি আবাদ করার বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে থাকেন তিনি। গহিন অরণ্যে ফার্ম রয়েছে। পুলিশ থানচি উপজেলার সেই গহিন অরণ্যে অভিযান চালিয়ে ছাগলের ফার্মের কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পায়নি। এমন কোনো প্রকল্প সেখানে নেই। একপর্যায়ে শামীন পুলিশের কাছে স্বীকার করেন, তিনি গহিন অরণ্যে জঙ্গি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র করবেন। এই অঞ্চলকে নিয়ে ইসলামি রাষ্ট্র বানানোই তার পরিকল্পনা। পুলিশ গহিন অরণ্যে অভিযান চালিয়ে এক বস্তা গ্রেনেড বানানোর সরঞ্জামসহ অনেক বিস্ফোরক দ্রব্য উদ্ধার করে। থানচি থানায় শামীনের বিরুদ্ধে দুটি মামলা হয়। একটি মামলা নম্বর ৩ (তারিখ:৩০.০৩.২০১১)। বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের চার ধারায় এই মামলা করা হয়। আরেকটি মামলার নম্বর ২ (২৯.০৩.২০১১)। জঙ্গি, অরাজকতা, নিরাপত্তায় বিঘ্ন ঘটানোর দায়ে সন্ত্রাস দমন আইনে এই মামলা করা হয়। বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলার চার্জশিট দেওয়া হয় ২০১১ সালের ৫ মে। আর সন্ত্রাস দমন আইনের মামলার চার্জশিট ২০১১ সালের ১৬ মে দেওয়া হয়। পরে জামিনে বের হয়ে যান শামীন মাহফুজ। পরে র্যাব ও কাউন্টার টেররিজম ইউনিট নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্কীয়ার শতাধিক জঙ্গিকে গ্রেফতার করে।
নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন থেকে সদস্য এনে নতুন জঙ্গি প্ল্যাটফরম তৈরিতে শামীনের ভূমিকা অগ্রগণ্য। নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্কীয়া তাদের বাছাই করা তরুণদের ছোট ছোট গ্রুপে সিনিয়র সদস্যের হেফাজতে রাখে। সেখানে একে-৪৭ রাইফেল, পিস্তল ও কাটা বন্দুক চালানো, বোমা (আইইডি) তৈরি এবং চোরাগোপ্তা হামলার (অ্যাম্বুশ) প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। ছদ্মবেশে সংগঠিত হচ্ছিল তারা। পার্বত্য অঞ্চলকে প্রশিক্ষণ শিবির হিসেবে বেছে নেওয়ার অন্যতম কারণ হলো তাদের সদস্যদের নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা বজায় রাখা। পার্বত্য অঞ্চল থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে সমতল ভূমিতে এসে হামলা করে যেন নিরাপদে আবারও ক্যাম্পে ফিরে যেতে পারে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলছে, দেশের প্রায় সব জঙ্গি সংগঠন সরকার নিষিদ্ধ করেছে আগেই। ফলে জঙ্গি সংগঠনগুলো তাদের কার্যক্রম চালাতে নতুন প্ল্যাটফরম খুঁজছিল। এ কারণেই নতুন নাম দিয়ে সংগঠনের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছিল জঙ্গিরা।
সুত্রঃ দৈনিক ইত্তেফাক
3 comments
কি যন্ত্রনা! ইসলামি রাষ্ট্র কায়েম করতে হলে জঙ্গি দলে যোগ দিতে হবে কেন? প্রিয় আওয়ামী লীগে যোগ দিলেইত হয়।
বান্দরবানে দুর্গম পাহাড়ে জঙ্গিদের সামরিক প্রশিক্ষণ দেয় KNF. তাই সরকারের উচিত আরো কঠোরভাবে এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া।
‘হিজরতের’ নামে ঘরছাড়া তরুণরা পাহাড়ে প্রশিক্ষণ শেষে নাশকতা ও সশস্ত্র হামলার পরিকল্পনা ছিল। বান্দরবান ও রাঙামাটির দুর্গম এলাকায় কেএনএফের একাধিক প্রশিক্ষণ শিবিরে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ৫০ জনের বেশি জঙ্গি প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন।