লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে সজিব আল মারুফ নামে জামায়াতের এক নেতার বিরুদ্ধে বিয়ের নামে স্কুলছাত্রীদের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে। প্রায় এক বছর আগে নবম শ্রেণির এক ছাত্রীকে বিয়ের পর স্ত্রী হিসেবে স্বীকৃতি না দিয়ে তথ্য গোপন করে গত শুক্রবার দশম শ্রেণির আরেক মেধাবী ছাত্রীকে বিয়ে করেন তিনি। এরপর বিষয়গুলো প্রকাশ্যে আসে।
অভিযুক্ত মারুফ উপজেলার লাইফ লাইন স্কুলে শিক্ষক হিসেবে কর্মরত। উপজেলার হাজিরহাট ইউনিয়নের মিয়াপাড়া এলাকার আবুল বারাকাতের ছেলে মারুফ ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি এবং জামায়াতের নেতা বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, লাইফ লাইন স্কুলে শিক্ষকতার সুবাদে মারুফের লোলুপ দৃষ্টি পড়ে একই বিদ্যালয়ের সুমাইয়া বিনতে ইমরান নামে নবম শ্রেণির এক ছাত্রীর ওপর। গত বছরের ৪ মে মারুফ কৌশলে অপ্রাপ্তবয়স্ক ওই ছাত্রীকে ফেনীতে নিয়ে ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে বিয়ে করেন। এ সময় পাঁচ লাখ টাকা দেনমোহরের একটি ভুয়া কাবিননামাও করা হয়। পরে ছাত্রীটিকে বাবার বাড়িতে পৌঁছে দিলেও সামাজিক স্বীকৃতি দিয়ে নিজের বাড়িতে নেননি তিনি। কিন্তু প্রায় এক বছর ধরে বিভিন্ন স্থানে ছাত্রীটির সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে আসছিলেন তিনি। এসব তথ্য গোপন করে মারুফ গত শুক্রবার রাতে সিদরাতুল মুনতাহা মুমু নামে আরেক স্কুলছাত্রীকে বিয়ে করেন। মিয়াপাড়া এলাকার প্রবাসী ফখরুল ইসলাম খোকন এবং চরফলকন জাজিরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা ফজিলাতুননেছা মুন্নী দম্পতির মেয়ে মুমু উপজেলার হাজিরহাট সরকারি মিল্লাত একাডেমির দশম শ্রেণির ছাত্রী। গত শুক্রবার রাতে হওয়া এ বাল্যবিয়েতে নিকটাত্মীয়রা উপস্থিত ছিলেন। হাজিরহাট ইউনিয়নের নিকাহ রেজিস্ট্রার বেল্লাল হোসেন পাঁচ লাখ টাকা কাবিনে বিয়েটি রেজিস্ট্রি করেন।
এ বিয়ের খবর পেয়ে সুমাইয়া রাতেই স্ত্রীর স্বীকৃতির দাবি নিয়ে ছুটে যান মারুফের বাড়িতে। স্ত্রীর মর্যাদা না পেলে সুমাইয়ার আত্মহত্যার হুমকিতে হট্টগোল শুরু হলে কমলনগর থানা পুলিশ অভিযুক্ত মারুফের বাড়িতে গিয়ে সমঝোতার আশ্বাসে সুমাইয়াকে মায়ের কাছে তুলে দেন। কিন্তু গত শনিবার দুপুর পর্যন্ত কোনো সমাধান না হওয়ায় সুমাইয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার হুমকি দেয়া হলে লাইফ লাইন স্কুলের পরিচালক মিজানুর রহমানসহ মারুফের লোকজনের টনক নড়ে। পরে মিজানের প্রচেষ্টায় তারা সুমাইয়ার পরিবারকে ম্যানেজ করে ল²ীপুর আদালতে নিয়ে নোটারি পাবলিকে নতুন কাবিননামার মাধ্যমে পুনরায় বিয়ে সম্পন্ন করেন।
এদিকে জামায়াত নেতার প্রতারণার মাধ্যমে অপ্রাপ্তবয়স্ক দুই ছাত্রীকে বিয়ে করার ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। এ নিয়ে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে মারুফসহ বাল্যবিয়ের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান। সুমাইয়ার মা পারভীন আক্তার জানান, মারুফের প্রতারণায় তার মেয়ের লেখাপড়াসহ জীবন নষ্ট হওয়ার পথে। তার একের পর এক বিয়ের কারণে মেয়ের ভবিষ্যৎ অন্ধকার বলে মন্তব্য করেন তিনি। হাজিরহাট সরকারি মিল্লাত একাডেমির সহকারী শিক্ষক মাইনউদ্দিন হিরন জানান, মুমু তাদের বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির মেধাবী শিক্ষার্থী। ১৬ বছর বয়সি মুমুর কিছুদিন পরই এসএসসি পরীক্ষা। কিন্তু এ সময়ে তার বিয়ে হওয়ায় পড়ালেখার মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটবে।
নিজে একজন স্কুলশিক্ষিকা হয়েও মেয়েকে বাল্যবিয়ে দেয়ার বিষয়ে জানতে মুমুর মা ফজিলাতুননেছা মুন্নীর মুঠোফোনে কল দেয়া হলে তিনি কোনো মন্তব্য না করে সংযোগ কেটে দেন। তবে, এ বাল্যবিয়ে রেজিস্ট্রি করা ভুল হয়েছে বলে স্বীকার করে হাজিরহাট ইউনিয়নের নিকাহ রেজিস্ট্রার বেল্লাল হোসেন জানান, মারুফ সম্পর্কে তার ভাগ্নে। বেআইনি হলেও স্বজনদের অনুরোধে তিনি এটা করেছেন।
লাইফ লাইন স্কুলের পরিচালক মিজানুর রহমান জানান, মারুফ তার প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক হলেও ঘটনাগুলো একান্ত তার ব্যক্তিগত। তবুও তিনি ঘটনাগুলো সমাধানের চেষ্টা করছেন। তবে এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ না করতে তিনি সাংবাদিকদের অনুরোধ করেন। কমলনগর থানার ওসি মোহাম্মদ সোলাইমান জানান, স্ত্রীর দাবিতে মারুফের বাড়িতে গিয়ে সুমাইয়া নামে এক মেয়ের আত্মহত্যার হুমকির খবর পেয়ে পুলিশ ছুটে যায়। পরে বিষয়টি সমাধানের জন্য দু’পক্ষকে নির্দেশ দেয়া হয়।
সুত্রঃ ভোরের কাগজ