চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট থানার ওসি সেলিম রেজার বিরুদ্ধে বিয়ের আশ্বাসে একাধিকবার ধর্ষণ ও নির্যাতনের অভিযোগ তুলেছেন এক নারী উদ্যোক্তা। বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) দুপুরে জেলা শহরের একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলন করে ওই নারী এ অভিযোগ করেন।
এদিকে, ওই নারীকে নিয়ে থানায় হট্টগোল ও অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে প্রাথমিক তদন্ত সাপেক্ষে ওই ওসিকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। পরে তাকে চট্টগ্রাম রেঞ্জে সংযুক্ত করেছে কর্তৃপক্ষ।
সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী নারী উদ্যোক্তা অভিযোগ করেন, ‘২০২০ সালের শেষ দিকে ওসি সেলিম রেজা নাচোল থানার ওসি থাকাকালে আমার সঙ্গে পরিচয় হয়। পরে মামলা সংক্রান্ত কাজে যাওয়া-আসা সূত্রে আন্তরিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। যা পরে প্রেমের সম্পর্কে গড়ায়। পরে বিয়ের আশ্বাস দেখিয়ে জেলা শহরের নাখেরাজপাড়ায় ওসির ভাড়া করা বাসায় নিয়ে একাধিকবার ধর্ষণ করে।’
তিনি দাবি করেন, ‘বিভিন্ন সময়ে হোটেলে নিয়েও ধর্ষণ করেছে ওসি। নাচোল থানার পর জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে বিশেষ শাখায় ও ভোলাহাট থানায় কর্মরত থাকাকালেও আমাদের সম্পর্ক ছিল। একপর্যায়ে ওসির স্ত্রী আমাদের সম্পর্কের কথা জেনে ফেললে আমার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। প্রথমদিকে ওসির সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের সময় জানায়, তার স্ত্রীকে ডিভোর্স দিয়েছে এবং আমাকে বিয়ে করতে চায়। যার কারণে আমি তার প্রতি সরল বিশ্বাস রেখে এতদূর পর্যন্ত সম্পর্ক নিয়ে গেছি। পরে জানতে পারি, তার স্ত্রীকে ডিভোর্স দেয়নি। সে যোগাযোগ বন্ধ করতে চাইলেও আমি তাকে পেতে যোগাযোগের চেষ্টা অব্যাহত রাখি। এরই ধারাবাহিকতায় চলতি বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি তাকে বিয়ের দাবিতে ভোলাহাট থানায় যাই। এ সময় আমাকে বেধড়ক মারধর করে ও পুলিশের অন্যান্য সদস্যরা শারীরিকভাবে নির্যাতন করে।’
বিয়ের দাবিতে থানায় একাধিকবার অনশন করার কথা জানিয়ে তিনি আরও দাবি করেন, ‘গত ২২ ফেব্রুয়ারি ভোলাহাট থানায় গেলে ওসি নিজে এবং থানার কনস্টেবল ও ড্রাইভার দিয়ে আমাকে বেধড়ক মারধর করে। আমাকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি ও মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়ার হুমকি দেয় তারা। বিয়ের দাবিতে অনশন করলে ৫৪ ধারায় পুলিশের কাজে বাধাদানের অভিযোগে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠায়। পরে সাত দিন কারাগারে থাকার পর ফিরে এসে জব্দ হওয়া মোবাইল থানা থেকে মোবাইল ফেরত নিয়ে আসি। থানা থেকে মোবাইল এনে দেখি, ওসি আমাদের কথোপকথনের অডিও ও ভিডিও সবকিছু মুছে দিয়েছে এবং আমাদের সম্পর্কের কথা অস্বীকার করে। উপায় না পেয়ে বাধ্য হয়েই বুধবার পুলিশের রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি ও বৃহস্পতিবার চাঁপাইনবাবগঞ্জ পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ দিয়েছি। আমি তাকে বিয়ে করতে চাই। বিয়ে না করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’
এবিষয়ে কথা বলতে ওসি সেলিম রেজার মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি রিসিভ করেননি।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল কালাম সাহিদ বলেন, ‘আজকের আগ পর্যন্ত ওই নারী আমাদের কাছে এমন কোনও লিখিত অভিযোগ দেননি। তবে থানায় বিশৃঙ্খলা হওয়ার একটি ভিডিও ক্লিপ পেয়ে প্রাথমিকভাবে তদন্ত করে ওসি সেলিম রেজাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। কিন্তু ওই নারীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কের বিষয়ে তদন্তের আগে নিশ্চিত করে বলা যাবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে পুলিশ সদরদফতর তদন্ত করবে। তদন্ত সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা হবে। থানায় বিশৃঙ্খলা তৈরির জন্যই প্রাথমিকভাবে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।’
সুত্রঃ বাংলা ট্রিবউন.কম