উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে একের পর এক জঙ্গি কারাগার থেকে বের হয়ে যাচ্ছেন। গত জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে জঙ্গিকাণ্ডে সম্পৃক্ত পাঁচ জন হাইকোর্ট থেকে জামিন পেয়েছেন। ঢাকা পোস্টের অনুসন্ধানে এ তথ্য উঠে এসেছে।
রাষ্ট্রপক্ষের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বলছেন, যারা দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আছে কিন্তু মামলার সাক্ষী বা চার্জশিট কোনোটিই হয়নি– এমন ক্ষেত্রে আদালত আসামিদের জামিন বিবেচনা করে থাকেন। দুর্ধর্ষ জঙ্গিদের জামিন পাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। তবে আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জঙ্গিদের জামিন শুনানির সময় রাষ্ট্রপক্ষকে আরও সতর্ক থাকা উচিত। কারণ জঙ্গিরা জেল থেকে বের হয়ে আবার নাশকতার কাজে সম্পৃক্ত হওয়ার নজির আছে। তারা যেন জামিন না পায়, এ সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় নথি আদালতের সামনে উপস্থাপন করতে হবে।
হাইকোর্টে জঙ্গি সদস্য আবদুল্লাহ জায়েদের জামিন
রাজধানীর পল্লবী থানায় দায়ের করা মামলায় নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সক্রিয় সদস্য আব্দুল্লাহ আল জায়েদকে গত ১১ জানুয়ারি জামিন দেন হাইকোর্ট। তার জামিন বিষয়ে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান ও বিচারপতি ফাহমিদা কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ তাকে জামিন দেন।
আদালতে আসামির পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট ফরহাদ আহমেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কামরুল আহসান খান আসলাম।
আইনজীবী ফরহাদ আহমেদ বলেন, আব্দুল্লাহ জায়েদ দুই বছরের মতো কারাগারে রয়েছেন। এখনো তার বিচার শুরু হয়নি। এ কারণে আদালত তাকে জামিন দিয়েছেন।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কামরুল আহসান খান আসলাম বলেন, আমরা জঙ্গি সদস্য আবদুল্লাহ আল জায়েদের জামিনের বিরোধিতা করেছি। তার জামিন আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করা হবে।
২০২১ সালের ৩০ এপ্রিল রাজধানীর পল্লবী ও মানিকগঞ্জের শিবালয় এলাকায় অভিযান চালিয়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সক্রিয় দুই সদস্য সজিব হোসেন খান (২২) ও আব্দুল্লাহ জায়েদকে (১৯) আটক করে র্যাব। পরে তাদের বিরুদ্ধে পল্লবী থানায় মামলা করা হয়। আটকের সময় তাদের কাছ থেকে আনসার আল ইসলামের বিভিন্ন উগ্রবাদী বই জব্দ করা হয়। তারা ধর্মীয় ব্যাখ্যা বিকৃত করে ধর্মপ্রাণ মানুষদের বিভ্রান্ত করায় সক্রিয় ছিল।
গাইবান্ধার দুই জঙ্গির হাইকোর্টে জামিন
নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন ‘আল্লাহর দলের’ দুই সদস্য আব্দুল আজিজ বাবু ও বাবুল খন্দকারকে গত ১৫ জানুয়ারি জামিন দেন হাইকোর্ট। বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান ও বিচারপতি ফাহমিদা কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ তাদের জামিন দেন।
২০১৯ সালের ২৩ ডিসেম্বর গাইবান্ধা জেলার পলাশবাড়ী উপজেলায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন ‘আল্লাহর দলের’ ছয় সদস্যক আটক করে র্যাব-২। পলাশবাড়ী উপজেলা সদরের হরিণমারী এলাকার একটি বাড়িতে জড়ো হয়ে বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা করছে এমন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বাড়িটি ঘেরাও করে অভিযান চালিয়ে ছয় জনকে আটক করা হয়। আটকরা হলেন– বাবুল খন্দকার (৩৫), আতোয়ার হোসেন (৬৭), আব্দুল আজিজ ওরফে বাবু (৩৯), ওসমান গণি (৫৬), আবু তাহের প্রধান (৫০) ও হোসেন প্রধান (৩৫)।
র্যাব-২ এর কোম্পানি কমান্ডার এসপি মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ফারুকী বলেন, আটকদের কাছ থেকে উগ্রবাদী বই ও লিফলেট এবং মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়।
তিনি বলেন, নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনের সদস্যরা দেশে বর্তমান শাসনব্যবস্থা বিপন্ন করে তাদের কথিত শাসনব্যবস্থা কায়েম করতে চায়। তারা মুসলিমদের জাকাত ব্যবস্থাকে অস্বীকার করে। এছাড়া তাদের মতাদর্শের সদস্যদের কাছ থেকে প্রতি মাসে চাঁদা আদায় করত।
জঙ্গি সদস্য মাহফুজুর রহমান অপুর জামিন
হরকাতুল জিহাদের সদস্য মাহফুজুর রহমান অপুকে গত ১৮ জানুয়ারি জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান ও বিচারপতি ফাহমিদা কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ তাকে জামিন দেন। অপুর পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী সাহিদা নূর নাহার।
জঙ্গি ছিনতাই : আসামি নাসির মিয়ার হাইকোর্টে জামিন
ঢাকার চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের মূল ফটক থেকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় আসামি নাসির মিয়া ফারুককে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি জামিন দেন হাইকোর্ট।
বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান ও বিচারপতি ফাহমিদা কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ তাকে জামিন দেন। তবে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এস এম ফজলুল হক বলেছেন, তিনি নাসির মিয়ার জামিন বিষয়ে কিছুই জানেন না।
গত বছরের ৩ ডিসেম্বর ঢাকার চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের মূল ফটক থেকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় করা মামলায় তিন জনকে রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। তারা হলেন– খোতেজা আক্তার লিপি, নাসির মিয়া ও তানভীর হোসেন। তারা এ মামলার এজাহারনামীয় আসামি ঈদী আমিনের আশ্রয়দাতা।
সুত্রঃ সিল্কসিটি নিউজ