বগুড়ার ধুনট থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কৃপা সিন্ধু বালার বিরুদ্ধে স্কুলছাত্রী ধর্ষণ মামলার আলামত নষ্টের প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
বিভাগীয় ও ফৌজদারি দুই আইনে দোষী সাব্যস্ত করে পুলিশের হেড কোয়ার্টারে গত ৩০ মার্চ পুলিশ মহাপরিদর্শকের দফতরে প্রতিবেদন জমা দিলেও এখনও পাবনায় বদলি দায়িত্বে বহাল ওই কর্মকর্তা। এতে ন্যায়বিচার না পাওয়ার শঙ্কা ভুক্তোভোগী পরিবারের।
গত বছরের নভেম্বরে তদন্ত শুরু করে পিবিআই বগুড়া। ৫ মাস পর গত ৩০ মার্চ প্রতিবেদন জমা দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করলেও তদন্তে কী পাওয়া গেছে সে সম্পর্কে কিছু বলেননি পিবিআই পুলিশ সুপার কাজী এহসানুল কবির।
বুধবার (১৭ মে) রাতে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, এটা একটা বিভাগীয় অনুসন্ধান ছিল। সেটা (প্রতিবেদন) সাবমিট করা হয়েছে। সবকিছু পজিটিভ পাওয়া গেছে।
তবে তদন্তে আলামত নষ্টের সত্যতা পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মামলার বাদী ও ভুক্তভোগীর মা। পুলিশ হেড কোয়ার্টারে পাঠানো তদন্ত প্রতিবেদনে পরিদর্শক কৃপা সিন্ধু বালাকে বিভাগীয় ও ফৌজদারি আইনে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
তিনি বলেন, কেবল আলামত নষ্টই নয়, টিকা কার্ড ও জন্মসনদ উপেক্ষা করে ১৭ বছর বয়সি ভুক্তভোগীর বয়স মেডিকেল রিপোর্টে ১৮ থেকে ১৯ দেখানো হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন বাদী। গত বছর অভিযোগ ওঠার পর পাবনায় বদলি হওয়া অভিযুক্ত কৃপা সিন্ধু বালা দায়িত্ব পালন করছেন বহাল তবিয়তে। সম্প্রতি হাইকোর্ট থেকে জামিন পেয়েছেন আসামি মুরাদুজ্জামানও।
ভুক্তভোগীর মা আরও বলেন, আসামি ছাড়া পাওয়ার পর থেকেই আমরা ভয়ে আছি। আমার বাচ্চাটা কলেজে যায়, কখন কী হয়, সে ভয়ে থাকি সবসময়।
প্রতিবেদন জমার পর দেড় মাস পেরিয়ে গেলেও এখনও কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় ন্যায়বিচার না পাওয়ার শঙ্কা ভুক্তভোগী বাবার।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, বিভিন্ন সোর্সের মাধ্যমে আমাদের স্নায়ুবিকভাবে আমাদের কষ্ট দিচ্ছে যে আপনারা মামলা তুলে নেন।
মামলার আলামত নষ্টের মতো গুরুতর অপরাধ প্রমাণিত হলে অভিযুক্তদের স্থায়ীভাবে চাকরিচ্যুত করার পাশাপাশি মোটা অঙ্কের অর্থদণ্ড প্রদান করে দৃষ্টান্ত স্থাপনের পরামর্শ অপরাধ বিশ্লেষকদের।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও অপরাধ বিশ্লেষক ড. তৌহিদুল হক বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যদি ধর্ষণ বা নারী ও শিশু নির্যাতনের ক্ষেত্রে অপরাধীদের সঙ্গে কোনো সখ্য তৈরি হয় এবং সেটা যদি প্রমাণিত হয় তাহলে অভিযুক্তদের স্থায়ীভাবে চাকরিচ্যুত করার পাশাপাশি মোটা অঙ্কের আর্থিক জরিমানা করতে হবে। তা নাহলে এ ধরনের অপরাধ দমন করা যাবে না। এ ছাড়াও ধর্ষণের দৃষ্টান্তমূলক বিচার নিশ্চিত করা না গেলে দেশে ধর্ষণ কমানো যাবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এদিকে একই অভিযোগে জেলা পুলিশের করা তদন্ত প্রতিবেদন পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য পাঠানো হয়েছে রাজশাহী রেঞ্জ ডিআইজির কার্যালয়ে।
জানা গেছে, ২০২২ সালের ৩ মার্চ। ভাড়াটিয়া প্রভাষক মুরাদুজ্জামানের পাশবিকতার শিকার হয় বগুড়া ধুনটের দশম শ্রেণির স্কুলছাত্রী। মোবাইলে সেই ভিডিও ধারণ করে ও ছোট ভাইকে হত্যার ভয় দেখিয়ে একাধিকবার ধর্ষণের শিকার হয় ভুক্তভোগী। গত ১২ এপ্রিল সকালে আবারও ধর্ষণের চেষ্টা করলে ভুক্তভোগীর চিৎকারে প্রতিবেশীদের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যান আসামি মুরাদুজ্জামান। এ ঘটনায় ১২ মে ধুনট থানায় ধর্ষণ মামলা দায়ের করলে ওইদিনই আসামিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। জব্দ করা হয় ধর্ষণের ভিডিও ধারণে ব্যবহৃত মোবাইল সেট।
ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ, আইন ভেঙে মামলার আলামত হিসেবে জব্দ করা দুটি মোবাইল অন্যত্র পাঠিয়েছিলেন তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কৃপা সিন্ধু বালা। মোবাইলে থাকা ভিডিও ফুটেজ বিশেষ কৌশলে নষ্ট করা হয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয় অভিযোগে।
সুত্রঃ সময় নিউজ