নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র আমির আনিসুর রহমান ওরফে মাহমুদ দেশেই রয়েছেন। তিনি দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাননি। তবে কোথায় আছেন, সেটা নিশ্চিত করতে র্যাবের গোয়েন্দারা কাজ করছেন।
মঙ্গলবার (৬ জুন) দুপুরে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এ তথ্য জানিয়েছেন। এদিন নতুন জঙ্গি দলের তিনজনকে গ্রেফতার বিষয়ে তিনি কথা বলেন।
নতুন জঙ্গি দলের সদস্যরা তাদের আমিরের নির্দেশে বিভিন্ন জায়গায় যাচ্ছেন। তাহলে আমিরকে গ্রেফতার করা সম্ভব হচ্ছে না কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে মঈন বলেন, আমরা যতটুকু জানতে পেরেছি আমিরের নির্দেশেই তারা সব করছেন। আমরা আমিরের অবস্থান জানতে প্রতিনিয়ত কাজ করছি। যতটুকু তথ্য আছে তাদের আমির আনিসুর রহমান ওরফে মাহমুদ দেশের অভ্যন্তরেই আছেন। তবে তিনি দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাননি। তাকে আইনের আওতায় আনতে গোয়েন্দারা কাজ করছেন।
র্যাব বলছে, সংগঠনের আমির আনিসুর রহমান ওরফে মাহমুদের সঙ্গে কেএনএফ প্রধান নাথান বমের সুসম্পর্ক ছিল। নাথান বমের সঙ্গে তাদের অর্থের বিনিময়ে চুক্তি হয়। এরপর তারা পাহাড়ে আশ্রয়, অস্ত্র ও রসদ সরবরাহ এবং সশস্ত্র প্রশিক্ষণ দেয়। বিভিন্ন সময় কেএনএফ-এর প্রধান নাথান বম, বাংচুং, রামমোয়, ডিকলিয়ান, পাহল ও কাকুলিসহ অনেকেই প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে আসতো।
কী পরিমাণ সদস্য এই দলে আছে এমন প্রশ্নে র্যাবের কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, আমরা প্রাথমিকভাবে ৫৫ জনের নাম দিয়েছি। আমাদের ধারণা এখন পর্যন্ত তাদের সদস্য সংখ্যা শতাধিক। অনেক ক্ষেত্রে সদস্য সংখ্যা বলা কঠিন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের কারণে তারা আত্মগোপনে আছেন; তবে সদস্য সংখ্যা সঠিকভাবে বলা যায় না। অনেকে গোপনে সদস্য হয়ে আছেন কিন্তু অভিযানের কারণে চুপচাপ রয়েছেন। জঙ্গি রাকিব, মাঈনুলের মাধ্যমে একটা দল সদস্য হয়েছে। তাদের মধ্যে এক ধরনের চেইন আছে।
জঙ্গি দলটির কাছে অস্ত্র আছে। সামনে নির্বাচন। নির্বাচন ঘিরে নতুন জঙ্গি দলকে রাজনৈতিক দল কাজে লাগাতে পারে কি না এমন প্রশ্নে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, দেশের মানুষ কখনও জঙ্গিদের প্রশ্রয় দেয় না। সাধারণ মানুষের সহায়তা ছিল বলেই, জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে র্যাব অনেকটা সফল। কোনো রাজনৈতিক দল যদি তাদের ফাঁয়দা নেবার জন্য জঙ্গিদের কাজে লাগায় এটা তাদের ভুল সিদ্ধান্ত। দেশের জনগণ তাদের মেনে নেবে না। নির্বাচন ঘিরে জঙ্গি, সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের আমাদের গোয়েন্দারা নজদারিতে রেখেছেন। তথ্য পেলেই তাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। আমাদের কাছে এখন পর্যন্ত তথ্য নেই, কোন রাজনৈতিক দল তাদের ব্যবহার করবে।
নির্বাচন ঘিরে জঙ্গি হামলার আশঙ্কা আছে কি না এমন প্রশ্নে মঈন বলেন, জঙ্গিদের মুভমেন্ট বা কোনো কর্মকাণ্ডের তথ্য পেলে আমরা সঙ্গে সঙ্গে আইনের আওতায় আনছি। নির্বাচন ঘিরে কোনো তৎপরতা আছে এমন তথ্য আমাদের কাছে আসেনি।
‘মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে জঙ্গিদলের কাছে দেশ বিদেশ থেকে টাকা আসছে। এ ব্যাপারে আমরা বেশকিছু তথ্য পেয়েছি। পার্বত্য চট্টগ্রামে যেসব তথ্য পাঠানো তাও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে পাঠানো হয়।’
সিএনজিতে অস্ত্র-টাকাসহ মধুপুর যাচ্ছিল জামাতুল হিন্দাল শারক্বীয়ার তিন সদস্য:
নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র তিন সদস্য তাদের সাংগাঠনিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য গাজীপুর থেকে টাঙ্গাইলের মধুপুর বনাঞ্চলের যাচ্ছিলেন। সোমবার রাতে সিএনজি যোগে যাওয়ার পথে রাজেন্দ্রপুরে র্যাবের চেকপোস্টে তল্লাশির সময় তাদের গ্রেফতার করা হয়। এ সময় একটি বিদেশি পিস্তল ও নগদ ১২ লাখ ৪০ হাজার টাকাসহ বিভিন্ন উগ্রবাদী লিফলেট উদ্ধার করা হয়।
লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফীল হিন্দাল শারক্বীয়া’র সূরা সদস্য ও অর্থ শাখার প্রধান মোশারফ হোসেন রাকিবসহ তিন সদস্যকে বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র ও বিপুল পরিমাণ অর্থসহ গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুর এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা গাজীপুর হয়ে টাঙ্গাইলের মধুপুরের দিকে যাচ্ছিলেন।
র্য্যাব-১ ও র্যাব-৭ এর আভিযানিক দল গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুর এলাকায় চেকপোস্ট স্থাপন করে একটি সিএনজি থেকে সংগঠনের শুরা সদস্য ও অর্থ শাখার প্রধান মোশারফ হোসেন রাকিব, জাকারিয়া হোসাইন এবং আহাদুল ইসলাম মজুমদার সিফাত ওরফে মামিদ। অভিযান চলাকালীন কিছু সদস্য পালিয়ে যায়।
কমান্ডার মঈন বলেন, পাহাড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাঁ
ড়াশি অভিযানের কারণে তারা চলে এসেছেন। এসব সশস্ত্র প্রশিক্ষণ নেওয়া সদস্যরা বিভিন্ন অপরাধের জন্য সংগঠিত হচ্ছিলেন।
সুত্রঃ জাগোনিউজ২৪.কম