ধর্ষণ ঘটনার দ্রুত বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ায় অসংখ্য কন্যাশিশু ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। দিনে দিনে ধর্ষণচেষ্টা, ধর্ষণ, ধর্ষণের পর হত্যা, সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ও সংঘবদ্ধ ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনা বেড়েছে। করোনাকালে বাল্যবিয়ে বেড়েছে আশংকাজনক হারে। ফলে আমাদের কন্যাশিশুরা আজ নানামুখী সংকটে।
এমতাবস্থায় আজ ১১ অক্টোবর আন্তর্জাতিক কন্যা শিশু দিবস পালিত হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, পৃথিবীজুড়ে লিঙ্গ বৈষম্য দূর করতে ২০১২ সালের ১১ অক্টোবর প্রথম এ দিবসটি পালন করা হয়। জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রসমূহ প্রতি বছর এ দিবসটি পালন করে থাকে। মেয়েদের শিক্ষার অধিকার, পরিপুষ্টি, আইনি সহায়তা ও ন্যায় অধিকার, চিকিৎসা সুবিধা ও বৈষম্য থেকে সুরক্ষা, নারীর বিরুদ্ধে হিংসা ও বলপূর্বক বাল্যবিবাহ বন্ধে কার্যকর ভূমিকা পালনের উদ্দেশ্যে এ দিবসের সূচনা করা হয়।
প্রথম আন্তর্জাতিক কন্যা শিশু দিবসের প্রতিপাদ্য ছিল- ‘বাল্যবিবাহ বন্ধ করা’। এবারের প্রতিপাদ্য ‘ডিজিটাল প্রজন্ম-আমাদের প্রজন্ম’।
সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারী সংস্থা দিবসটি উপলক্ষে কর্মসূচী গ্রহণ করেছে। কন্যাশিশুদের তথ্য-প্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ করে গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি নিয়ে দিবসটি পালিত হলেও আমাদের কন্যারা নিরাপদে নেই।
করোনাকালে কন্যাশিশুর বাস্তব পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন নারী অধিকার নিয়ে কর্মরত দেশী-বিদেশী সংস্থাগুলো।
নারী-শিশু তথা মানবাধিকার বিষয়ে কর্মরত সংগঠন সমাজ কল্যাণ ও উন্নয়ন সংস্থা (স্কাস) চেয়ারম্যান জেসমিন প্রেমা কালের কণ্ঠকে বলেন, অধিকাংশ পরিবারে কন্যাশিশুরা খাওয়া-দাওয়া, পোশাক-পরিচ্ছদ এমনকি সামাজিক মর্যাদার ক্ষেত্রেও অবহেলা ও বঞ্চনার শিকার হতে দেখা যায়। দেশে শিশু সুরক্ষার জন্য শিশু অধিকার আইন-নীতিমালা ইত্যাদি থাকা সত্ত্বেও অঞ্চলভেদে বৈষম্য রয়েছে। আর করোনা মহামারি ও প্রাকৃতিক দূর্যোগের প্রভাবে কন্যাশিশুদের জীবন হত্যা-ধর্ষণ-বাল্যবিয়েসহ নানামূখী সংকট বেড়েছে।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত ৮ মাসে এক হাজার ৮৯ কন্যাশিশু ধর্ষনের শিকার হয়েছে।
নির্যাতনের শিকার হয়েছে এক হাজার ৪০২ জন। এ বছর শুধুমাত্র সেপ্টেম্বর মাসেই, ১৮৫টি বাল্যবিয়ের ঘটনাসহ ৩৩৮ জন কন্যাশিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছে।
জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের তথ্য মতে, গত আট মাসে ৮১৩ জন কন্যাশিশু ধর্ষনের শিকার হয়েছে। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৫৮ জনকে। বিভিন্ন কারণে হত্যা করা হয়েছে ১৯৩জনকে। আর ১৫৬ জন কন্যাশিশু আত্মহত্যা করেছে।
সংস্থাটির তথ্য মতে, গত বছরের তুলনায় ১৩ ভাগ বেশি বাল্যবিয়ে সংঘটিত হয়েছে। ১৩৬টি ইউনিয়নে জরিপ পরিচালনা করেছে এই ফেরামটি। জরিপে এক হাজার ২৫৭ জন কন্যাশিশুর বিয়ের কাগজপত্র সংগ্রহ করা গেছে। আর অলিখিতভাবে এক হাজার ৫৩৫টি বাল্যবিয়ের সংঘটিত হওয়ার তথ্য পেয়েছে। সবমিলিয়ে ১৩৬ ইউনিয়নে বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে ২ হাজার ৭৯১ জন কন্যাশিশু।
এ বিষয়ে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি মেহের আফরোজ চুমকি কালের কণ্ঠকে বলেন, কন্যাশিশু মানে সেও একজন মানুষ। তাকে সুনাগরিক করে গড়ে তুলতে হবে। তাহলে তারা দেশ ও সমাজের জন্য কাজ করতে পারবে। তিনি বলেন, কন্যাশিশুরা যে একটি ছেলের থেকে কোন অংশে কম নয়, সেটা নিশ্চিত করার জন্য শিক্ষার পাশাপাশি ক্ষমতায়নের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। বাল্যবিয়ে বন্ধ করতে হবে। সরকার এ বিষয়ে কাজ শুরু করেছে। কিন্তু সরকারের একক ভাবে এই গুরুত্বপূর্ণ কাজটি করা অসম্ভব। এ বিষয়ে সম্মিলিতভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু দিবস প্ল্যান ইন্টারন্যাশনালের ‘কারণ আমি একজন মেয়ে’ নামক আন্দোলনের ফসল। এ আন্দোলনের মূল কর্মসূচি হল- ‘গোটা বিশ্বজুড়ে কন্যার পরিপুষ্টি সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টি করা’। এ সংস্থার কানাডার কর্মচারীরা এ আন্দোলনকে বিশ্বদরবারে প্রতিষ্ঠিত করতে কানাডা সরকারের সহায়তা নেয়। কানাডাই প্রথম জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু দিবস পালনের প্রস্তাব দেয়। পরে ২০১১ সালের ১৯ ডিসেম্বর তারিখে জাতিসংঘের সাধারণ সভায় এ প্রস্তাব গৃহীত হয়। ফলে ২০১২ সালের ১১ অক্টোবর তারিখে প্রথম আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু দিবস পালন করা হয়। বাংলাদেশ সরকার এই দিবসটি পালনের পাশাপাশি একই লক্ষ্য নিয়ে ৩০ সেপ্টেম্বর জাতীয় কন্যাশিশু দিবস পালন করে থাকে।
সুত্রঃ কালেরকন্ঠ