সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও বিভিন্ন সময় ঘাঁটি গেড়েছে বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠন। এদেশে জঙ্গি বা উগ্রপন্থি গোষ্ঠীর সংখ্যাটা জানলে অবাক হবেন যে কেউ। আইন শৃংখলা বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে কমপক্ষে ৫০টি উগ্রবাদ ও জঙ্গি সংশ্লিষ্ট সংগঠন কার্যক্রম চালাচ্ছে। এরমধ্যে নিষিদ্ধ করা হয়েছে মাত্র সাতটিকে।
বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও গোয়েন্দা রিপোর্ট থেকে জানা যায়, বাংলাদেশে ২০টি সংগঠন বর্তমানে জঙ্গিবাদ ও উগ্রবাদ ছড়াচ্ছে। বাকিগুলো সদস্যের অভাবে ঘুমন্ত অবস্থায় আছে। তবে যে ৭টি সংগঠনকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে সেগুলোর কর্মকাণ্ড পুরো বন্ধ হয়নি। বরং নিষিদ্ধগুলোই বেশি সক্রিয়। বাংলাদেশে বিভিন্ন সময় ত্রাস সৃষ্টিকারী জঙ্গি সংগঠনগুলো নিয়েই এই প্রতিবেদন।
জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)
বাংলাদেশে জঙ্গি সংঠনগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচনার জন্ম দিয়েছে এই জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)। ১৯৯৮ সালে শায়খ আবদুর রহমান প্রতিষ্ঠা করেন। উদ্দেশ্য বাংলাদেশে সশস্ত্র যুদ্ধের মধ্য দিয়ে ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। সিদ্দিকুর রহমান ওরফে বাংলা ভাই ছিল এর শীর্ষস্থানীয় নেতা। ২০০১ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর সাতক্ষীরার একটা সিনেমা হল ও সার্কাস প্যান্ডেলে বোমা হামলা চালিয়ে আত্মপ্রকাশ করে জেএমবি। ২০০৪ সালের ১ এপ্রিল রাজশাহীতে কথিত চরমপন্থীদের নৃশংসভাবে হত্যা করে। ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট দুপুর ১২টার দিকে দেশের ৬৩ জেলায় আদালত, জেলা প্রশাসন কার্যালয়সহ গুরুত্বপূর্ণ সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সামনে একযোগে প্রায় ৫০০ বোমা ফাটায়। ২০০৫ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি জেএমবিকে নিষিদ্ধ করে সরকার। ২০০৫ সালের ১৪ নভেম্বর ‘মানুষের বিচার করতে পারে একমাত্র সর্বশক্তিমান আল্লা’ এই বক্তব্য দিয়ে দুই বিচারককে আত্মঘাতী হামলায় হত্যা করে জেএমবি। ২০০৭ সালের ৩ মার্চ শায়খ আবদুর রহমান, দ্বিতীয় নেতা সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলা ভাইসহ ৬ জঙ্গির ফাঁসি হয়।
২০১৩ সালের ২০ জুন এই সংগঠনের ১০ সদস্যকে মৃত্যুদণ্ড দেন ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইবুনাল-৪। প্রধান নেতাদের ফাঁসির পর জেএমবি বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল বলে ধারণা করা হতো। কিন্তু ২০১৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি তারা তাদের অস্তিত্বের জানান দেয় দণ্ডপ্রাপ্ত তিন আসামিকে ছিনতাই ও এক পুলিশকে হত্যার মধ্য দিয়ে। এদিন তারা ত্রিশাল ও ভালুকার মাঝামাঝি সাইনবোর্ড এলাকায় পুলিশের প্রিজন ভ্যানের গতি রোধ করে এ ঘটনা ঘটায়।
হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী বাংলাদেশকেই (হুজি-বি)
হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী বাংলাদেশকেই (হুজি-বি) বলা হয় দেশের `ফার্স্ট জেনারেশন` জঙ্গি সংগঠন। এদেশের মাদ্রাসাগুলো থেকে তারা সদস্য সংগ্রহ করতো। চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজারের পাহারী এলাকায় তাদের প্রশিক্ষন কার্যক্রম পরিচালনা হতো। ১৯৯৯ সালে সাহিত্যিক শামসুর রহমানকে হত্যার চেষ্টা করে হুজি। ২০০১ সালে সংগঠনটি রমনা বটমূলে বর্ষবরণ উৎসবে বোমা হামলা চালায়। এতে আত্মঘাতি হামলাকারী সহ মোট দশ জন নিহত হয়। ২০০৪ এর ২১ আগস্ট এই সংগঠনটিই রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গ্রেনেড হামলা চালায়।
হিজবুত তাহরীর
বাংলাদেশে ২০০১ সাল হতে আনুষ্ঠানিকভাবে এ দলটি তাদের কার্যক্রম শুরু করে। ২০০৯ সালের অক্টোবরে স্বরাষ্ষ্ট্র মন্ত্রণালয় দলটিকে নিষিদ্ধ করে। হিজবুত তাহরীর সন্ত্রাসকে লালন এবং উৎসাহিত করে। সাম্প্রদায়িক ঘৃণা ছড়াতে প্রচারণা চালায়। বাংলাদেশের মতো বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে হিযবুত তাহরীরকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। বেশ কিছু আরব দেশ, রাশিয়া ও তুরস্কেও এটি নিষিদ্ধ। হিজবুর তাহরীরের বিরুদ্ধে সশস্ত্র হামলার অভিযোগ কম পাওয়া যায়। তাদের মূল লক্ষ্য হলো উগ্রবাদে তরুণদের আকৃষ্ট করা।
শাহাদত-ই-আল হিকমা
২০০২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি রাজধানী ঢাকায় সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে শাহাদাত-ই আল হিকমা নামে একটি সংগঠনের আত্মপ্রকাশের ঘোষণা দেন কাওসার হুসাইন সিদ্দিকী। ওই সংবাদ সম্মেলনে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকে ‘সন্ত্রাসী কার্যকলাপ’ উল্লেখ করে রাষ্ট্র ও সরকারের বিরুদ্ধে আপত্তিকর বক্তব্য দেওয়া হয়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ মহানগরীজুড়ে রাষ্ট্রবিরোধী পোস্টার ছড়িয়ে দেয় এই সঙ্গঠনটি। পরবর্তীতে শাহাদাত-ই আল-হিকমাকে জঙ্গি সংগঠন আখ্যায়িত করে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে সরকার। ২০১৭ সালে সংগঠনটির প্রধান কাওসারকে ২ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এরপর থেকে শাহাদাত-ই আল-হিকমার বিষয়ে আর কিছু জানা যায় নি।
আনসারুল্লাহ বাংলা টিম
আনসারুল্লাহ বাংলা টিমও বিভিন্ন সময় আলোচনায় এসেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জঙ্গিবাদ ছড়ানো এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে শিক্ষিত মেধাবী তরুণদের সদস্য হিসেবে দলে টানার দিকেই বেশি মনোযোগী তারা।
এছাড়াও বাংলাদেশে যেসব দল জঙ্গিবাদ ও উগ্রবাদী আদর্শ ধারণ করে এবং তা ছড়িয়ে দিতে কাজ করছে সেগুলো হলো আল্লাহর দল, ইসলামিক সলিডারিটি ফ্রন্ট, তামীরউদ্দীন বাংলাদেশ, তৌহিদী ট্রাস্ট, হিজবুত তাওহিদ, শাহাদত-ই-নবুয়ত ও জামাত-আস-সাদাত, জামিউতুল ফালাহ, ইসলামিক সলিডারিটি ফ্রন্ট, আরাকান রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন, আরাকান পিপলস আর্মি, আরাকান মুজাহিদ পার্টি, মিয়ানমার লিবারেশন ফোর্স, রোহিঙ্গা লিবারেশন ফোর্স, রোহিঙ্গা ইনডিপেন্ডেন্স পার্টি, রোহিঙ্গা প্যাট্রিয়টিক ফ্রন্ট, মুসলিম মিল্লাত, আল হারাত-আল-ইসলামিয়া, ওয়ার্ল্ড ইসলামিক ফ্রন্ট, তৌহিদী জনতা, জুমা`আতুল আল সাদাত, তামিরউদ্দীন দ্বীন বাংলাদেশ, আল খিদমত, হিজবুল মাহদি, হিজবুল্লাহ ইসলামী সমাজ, দাওয়াতি কাফেলা, বাংলাদেশ এন্টি টেররিস্ট পার্টি, আল মারকাজুল আল ইসলামী, আল ইসলাম মার্টেনস ব্রিগেড, সত্যবাদ, মুসলিম মিল্লাত, শরিয়া কাউন্সিল, জমিয়ত আহলে হাদিস আন্দোলন, আহলে হাদিস আন্দোলন বাংলাদেশ, তাজির বাংলাদেশ, হায়াতুর ইলাহা, ফোরকান মুভমেন্ট, জামিউতুল এহজিয়া এরতাজ, আনজুমানে তালামিজ ইসলামিয়া, কলেমার জামাত, সাহাবা পরিষদ, কাতেল বাহিনী, মুজাহিদিন-ই-তাজিম, এশার বাহিনী, আল ফাহাদ, হরকাতুল মুজাহিদিন ও জাদিদ আল কায়দা।
সুত্রঃ বাংলা ইনসাইডার