সিসি ক্যামেরার ফুটেজ ও পলাতক দুই জঙ্গি
দিনে-দুপুরে আদালত প্রাঙ্গণ থেকে দুই জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনার এক বছর আজ (২০ নভেম্বর)। এই সময়ে ১৮-১৯ বার অভিযান চালালেও তাদের গ্রেফতার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। যদিও তারা দাবি করে আসছেন, ছিনতাই হওয়া জঙ্গিরা দেশেই আছেন। তাদের গ্রেফতারে অভিযানও অব্যাহত আছে। মামলার তদন্ত প্রতিবেদন এখনো দাখিল করা হয়নি। পরবর্তী দিন ধার্য আছে ১৭ ডিসেম্বর।
২০২২ সালের ২০ নভেম্বর দুপুরে পুলিশের ওপর পিপার স্প্রে করে প্রকাশক দীপন হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মইনুল হাসান শামীম ও আবু সিদ্দিক সোহেলকে ঢাকার চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত প্রাঙ্গণ থেকে ছিনিয়ে নেয় জঙ্গিরা। নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সদস্য ছিলেন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গি। এ ঘটনার পর রেড অ্যালার্ট জারি করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ঘটনার পর দেশের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালালেও এখনো অধরা জঙ্গিরা।
মামলার তদন্তকারী সংস্থা কাউন্টার টেরোরিজম ইনভেস্টিগেশন বিভাগ বলছে, ছিনতাই হওয়া জঙ্গিরা দেশেই আত্মগোপনে রয়েছেন। তাদের গ্রেফতার করতে এখন পর্যন্ত ১৮-১৯টি জায়গায় অভিযান চালানো হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য ছিল। তবে তদন্তকারী কর্মকর্তা প্রতিবেদন দাখিল করেননি। সে কারণে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ফারহা দিবা ছন্দা প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ১৭ ডিসেম্বর পরবর্তী দিন ধার্য করেন। দ্রুত প্রতিবেদন দাখিলের প্রত্যাশা করছেন আসামিপক্ষের আইনজীবী।
আদালত প্রাঙ্গণ থেকে দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়ার সময় আসামি আরাফাত ও সবুরকেও ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। যদিও ঘটনাস্থল থেকেই তাদের দুজকে আটক করতে সক্ষম হয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এ ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় কোর্ট পরিদর্শক জুলহাস বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় আরও ৭-৮ জনকে আসামি করা হয়।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, আনসার আল ইসলামের সামরিক শাখার নেতা সৈয়দ মোহাম্মদ জিয়াউল হক ওরফে সাগর ওরফে বড় ভাই ওরফে মেজর জিয়া (চাকরিচ্যুত মেজর) এ ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা ও নির্দেশনা দেন। তার নির্দেশনায় আয়মান ওরফে মশিউর রহমান (৩৭), সাব্বিরুল হক চৌধুরী ওরফে আকাশ ওরফে কনিক (২৪), তানভীর ওরফে সামশেদ মিয়া ওরফে সাইফুল ওরফে তুষার বিশ্বাস (২৬), রিয়াজুল ইসলাম ওরফে রিয়াজ ওরফে সুমন (২৬) ও মো. ওমর ফারুক ওরফে নোমান ওরফে আলী ওরফে সাদ (২৮) পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে আসামিদের ছিনিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করেন।
এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে দুটি মোটরসাইকেলযোগে আনসার আল ইসলামের অজ্ঞাতপরিচয় ৫-৬ জন সদস্য অবস্থান নেন। এছাড়া আদালতের আশপাশ ও মূল ফটকের সামনে অবস্থান নেন আনসার আল ইসলামের অজ্ঞাতপরিচয় আরও ১০ থেকে ১২ জন সদস্য। এরপর তারা পুলিশের কাছ থেকে আসামি ছিনিয়ে নেন।
মামলার এজাহারে আরও বলা হয়, ঘটনার দিন সকাল ৮টা ৫ মিনিটে কাশিমপুর থেকে ১২ জন আসামিকে প্রিজনভ্যানে ঢাকার আদালতে নিয়ে আসা হয়। সকাল ৯টা ৪০ মিনিটের দিকে ঢাকার প্রসিকিউশন বিভাগে আসামিদের হাজিরা দেওয়ার জন্য সিজেএম আদালত ভবনের সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনাল ৮-এ নিয়ে যাওয়া হয়।
মামলার শুনানি শেষে জামিনে থাকা ১৩ নম্বর আসামি মো. ঈদী আমিন (২৭) ও ১৪ নম্বর আসামি মেহেদী হাসান অমি ওরফে রাফি (২৪) আদালত থেকে বের হয়ে যান। এরপর বেলা ১১টা ৫৫ মিনিটের দিকে আদালতের মূল ফটকের সামনে পৌঁছা মাত্র আগে থেকেই দুটি মোটরসাইকেলযোগে অজ্ঞাতপরিচয় আনসার আল ইসলামের ৫-৬ জন সদস্য ও আদালতের আশপাশে অবস্থানরত আরও ১০-১২ জন সদস্য হামলা চালান।
জঙ্গিরা কনস্টেবল আজাদের হেফাজতে থাকা আসামি মইনুল হাসান শামিম ওরফে সিফাত ওরফে সামির ওরফে ইমরান (২৪), মো. আবু সিদ্দিক সোহেল (৩৪) মো. আরাফাত রহমান (২৪) ও মো. আ. সবুর ওরফে রাজু ওরফে সাদ ওরফে সুজনকে (২১) ছিনিয়ে নিতে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলা চালায়। কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যরা জঙ্গিদের এ কর্মকাণ্ডে বাধা দিলে আসামিদের মধ্যে কোনো একজন হাতে থাকা লোহা কাটার যন্ত্র দিয়ে কনস্টেবল আজাদের মুখে আঘাত করেন।
এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কাউন্টার টেরোরিজম ইনভেস্টিগেশন বিভাগের পরিদর্শক আজিজ আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘আদালত থেকে দুই জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনায় করা মামলায় এখন পর্যন্ত ২০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। দুজন আসামি ঘটনার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। একজন সাক্ষীও জবানবন্দি দিয়েছেন। পলাতক দুই জঙ্গি দেশেই আছেন। তাদের গ্রেফতারে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ১৮-১৯ বার অভিযান চালিয়েছি। পলাতক দুই জঙ্গিকে গ্রেফতার করতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’
এ বিষয়ে আসামিপক্ষের আইনজীবী আব্দুল আউয়াল জাগো নিউজকে বলেন, ‘মামলাটির তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। তদন্ত শেষ করে দ্রুত প্রতিবেদন দাখিল যেন করা হয় এ প্রত্যাশা আমাদের। ন্যায়-অন্যায় বিচারের মাধ্যমে প্রমাণিত হবে।’
সুত্রঃ জাগোনিউজ২৪ ডটকম