জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বামীকে হলে আটকে স্ত্রীকে জঙ্গলে নিয়ে ধর্ষণ করেন ছাত্রলীগ নেতা ও এক বন্ধু; আর তাদেরকে নানাভাবে সহায়তা করেন আরও চারজন।
শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলসংলগ্ন জঙ্গলে এ ধর্ষণের ঘটনার পর ভুক্তভোগীর স্বামী বাদী হয়ে সাভার থানায় ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।
এর মধ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও জাবি শাখা ছাত্রলীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমানসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তারে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে।
ছাত্রলীগ নেতা মোস্তাফিজুর ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা উপজেলার বালিয়াহাটি গ্রামের বাসিন্দা। তিনি ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেলের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
গ্রেপ্তার অন্য তিনজন হলেন- জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বগুড়ার শেরপুর উপজেলার পারভবানিপুর গ্রামের সাব্বির হাসান সাগর, কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার নেওয়াশী গ্রামের সাগর সিদ্দীকি এবং রংপুরের কোতোয়ালি সদর থানার গন্দাদাশ গ্রামের হাসানুজ্জামান।
পলাতক রয়েছেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসম্পাদক নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলার আমন্ত গ্রামের মুরাদ হোসেন এবং একই গ্রামের বাসিন্দা মো. মামুনুর রহমান মামুন।
রোববার দুপুরে আশুলিয়া থানায় এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ঢাকা জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অবস) আব্দুল্লাহিল কাফি।
পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “ভুক্তভোগীর স্বামী রাতেই বাদী হয়ে আশুলিয়া থানায় ছয়জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেছেন। আমরা সাভার ও আশুলিয়া থানা সমন্বয় করে আসামিদের চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে। বাকি দুজনকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
“মামলায় মোস্তাফিজ ও মামুনুর রশীদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ আনা হয়েছে। এ ছাড়া বাকি চারজনের বিরুদ্ধে মারধর ও আসামিদের পালাতে সহায়তা করার অভিযোগ আনা হয়েছে।”
আব্দুল্লাহিল কাফি বলেন, ১৯ বছর বয়সী ওই তরুণীর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে পাঠানো হয়েছে। গ্রেপ্তারদের সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।
শনিবার রাতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মোশাররফ আবাসিক হলে ‘এ’ ব্লকের ৩১৭ নম্বর কক্ষে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে বোটানিক্যাল গার্ডেনে কৌশলে নিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ করেন আসামি মোস্তাফিজ ও মামুনুর রশীদ মামুন।
ওই নারীর অভিযোগ, “মামুন আমাদের বাসায় ভাড়া থাকত। সে আমার স্বামীর মাধ্যমে ফোন দিয়ে আমাকে তার রেখে যাওয়া জিনিসপত্র নিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে বলে। আমি তার জিনিসপত্র নিয়ে ক্যাম্পাসে যাই। তখন সে আমাদের বাসায় থাকবে না মোস্তাফিজ ভাইয়ের কাছে থাকবে বলেও জানায়।
“এরপর মামুন আমার কাছ থেকে তার জিনিসপত্রগুলো নিয়ে হলে রেখে আসে। পরে আমার স্বামী অন্যদিকে থেকে আসবে বলে আমাকে হলের সামনে থেকে পাশের জঙ্গলের মধ্যে নিয়ে যায়। তার সঙ্গে মোস্তাফিজ ভাইও ছিল। তখন তারা আমাকে ধর্ষণ করে।”
এদিকে ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে ধর্ষণের ঘটনা জানাজানি হলে বিশ্ববিদ্যালয়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। রোববার ভোরে এক বিজ্ঞপ্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সব কার্যক্রম থেকে আন্তজাতিক বিষয়ক সম্পাদক মুস্তাফিজুর রহমানকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল ও সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটন স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, “নীতি আর্দশ ও সংগঠনবিরোধী কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হলো। এ ছাড়া স্থায়ী বহিষ্কারের জন্য কেন্দ্রে সুপারিশ করা হলে কেন্দ্রীয় কমিটির উপ-দপ্তর সম্পাদক সাদি মোহাম্মদ আকাশের স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তাকে স্থায়ী বহিস্কার করা হয়।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক সাব্বির আলম বলেন, “অপরাধী যেই হোক তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, “পুলিশ আমাদের কাছে যে কোনো ধরনের সহযোগিতা চাইলে, আমরা সহযোগিতা করতে প্রস্তুত আছি। হলের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে অভিযুক্তদের শনাক্ত করা হয়েছে।”
আশুলিয়া থানার ওসি এ এফ এম সায়েদ বলেন, “পলাতক মামুনুর রহমান মামুন ও মুরাদকে গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।”
সুত্রঃ বিডিনিউজ24.কম