ঢাকাস্থ ইরাকি দূতাবাসের উচ্চপদস্থ এক কর্মকর্তা দূতাবাসের ভাইস কনসাল ইমাদ আলী জালাল মৌসাবির বিরুদ্ধে চাকরির ও বিয়ের প্রলোভন দিয়ে ধর্ষণ ও নির্যাতনের অভিযোগে ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালে মামলা করেছেন এক বাংলাদেশি নারী। আদালতের নির্দেশে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) মামলাটি তদন্ত করছে। আগামী ২৬শে ফেব্রুয়ারি এ মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য্য রয়েছে।
পিবিআই’র পরিদর্শক গোলাম মুক্তার আশরাফ গতকাল মানবজমিনকে বলেন, মামলায় ধর্ষণের অভিযোগ করা হয়েছে। আমরা তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছি। তদন্ত কার্যক্রম শেষে রিপোর্ট দাখিল করা হবে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০ (সংশোধিত-২০০৩) এর ৯(১) ধারায় মামলাটি করা হয়েছে।
সম্প্রতি ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামলটি তদন্ত করে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে রিপোর্ট দাখিলের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দিয়েছেন। আদালতের আদেশে বলা হয়েছে, ফৌজদারি কার্যবিধির ১৮৯৮ এর ২০০ ধারার বিধান মতে অভিযোগকারীর জবানবন্দি গ্রহণ করা হলো। অভিযোগকারীর জবানবন্দি, দাখিলি অভিযোগ, হলফনামা ও দাখিলি কাগজপত্র পর্যালোচনায় আনীত অভিযোগ সম্পর্কে প্রাথমিক অনুসন্ধান (inquiry) করা সমীচীন বলে পরিলক্ষিত হয়।
মামলার অভিযোগে যা বলা হয়েছে: অভিযোগে বলা হয়েছে, বিগত ৩১শে মার্চ ২০২৩ ইং তারিখে বনানীর কামাল আতাতুর্ক এভিনিউস্থ Arabic Restaurant-এ বাদীর সঙ্গে অত্র আসামির প্রথম পরিচয় ঘটে। আসামি স্বেচ্ছায় বাদিনীর খাওয়ার টেবিলের সামনে এসে বাদিনীর অনুমতি নিয়ে আসন গ্রহণ করে নিজের পরিচয় প্রদান করে। কথা বার্তার এক পর্যায়ে আসামি নিজে, তার অপর বন্ধুর, অত্র বাদিনীর এবং ১নং সাক্ষীর জন্য খাবারের অর্ডার প্রদান করেন। অতঃপর আসামি খাওয়ার বিল পরিশোধ করে অত্যন্ত ভদ্রভাবে বাদিনী এবং ১নং সাক্ষীর মোবাইল ফোন নম্বর প্রার্থনা করলে উভয়ে সরল বিশ্বাসে তাদের ফোন নম্বর প্রদান করেন। এরপর থেকে আসামি নিয়মিতভাবে ফোনে অত্র বাদিনীর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতো। অত্র আসামি ইরাকি দূতাবাসে চাকরি করার জন্য অত্র বাদিনীকে প্রস্তাব দেন। অতঃপর বাদিনী ও আসামির মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সুসম্পর্ক গড়ে উঠায় আসামি বিগত ১০/০৪/২০২৩ইং তারিখে বাদিনীকে তার বাসায় ইফতারের দাওয়াত দেন। বাদিনী সরল বিশ্বাসে উক্ত দাওয়াত গ্রহণ করে ওই তারিখে আসামির বাসস্থানে ইফতারে অংশগ্রহণ করেন।
আলাপাচারিতার একপর্যায়ে জানায় যে সে তার চাকরির জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে, কিন্তু এখনও সম্ভব হয়নি। আসামি অত্র বাদিনীকে আরও জানান যে, অত্র আসামি তাকে (বাদিনীকে) বিবাহ করতে ইচ্ছুক। বিবাহ করলে দূতাবাসে বাদিনীকে চাকরি দেয়া সহজ হবে। এর কিছুক্ষণ পরই আসামিপক্ষের একজন লোক, একজন মৌলভী সাহেবকে নিয়ে আসামির বাসায় প্রবেশ করেন। যেহেতু পূর্ব থেকে অত্র আসামির সঙ্গে বাদিনীর পরিচয় ছিল, সেহেতু তার নিজের ও পরিবারের ভবিষ্যৎ, আর্থিক, নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে ‘রেজিস্টার্ড কাবিন’ মূলে বিবাহে সম্মত হয়। অতঃপর অত্র আসামি বলেন যে, ‘ইসলামী শরীয়াহ মতে বিবাহে কাবিনের কোনো প্রয়োজন নেই আল্লাহ্কে সাক্ষী রাখিয়া বিবাহ করা ইসলামে জায়েজ আছে। তাছাড়া বাংলাদেশে প্রচলিত আইন অনুযায়ী কাবিন রেজিস্ট্রি করতে হলে শিগগিরই সে তার ব্যবস্থা করবে।
এরপর থেকে বাদিনী ও আসামি স্বামী-স্ত্রী হিসেবে জীবন-যাপন করতে থাকেন। অত্র আসামি প্রথম দিকে বাদিনীর সঙ্গে স্বাভাবিক আচরণ করলেও কিছুদিনের মধ্যেই বাদিনীকে জানায় যে, তার বাসায় কিছু মেহমান আসবে বিধায় বাদিনীকে কিছুদিনের জন্য তার পিত্রালয়ে থাকতে হবে এবং অত্র আসামি বাদিনীর পিত্রালয়ে গিয়ে দেখা-সাক্ষাৎ করবে। বাদিনী রেজিস্ট্রার্ড কাবিনের কথা বললে আসামি মাঝে-মধ্যে প্রচণ্ড ক্ষিপ্ত হয়ে বলতো ‘ ইসলামী মতে আমাদের বিবাহ হইয়াছে, আবার মাঝে-মধ্যে আশ্বস্ত করিয়া বলিত যে, সময় সুযোগ করিয়া রেজিস্টার্ড কাবিন করিয়া লইবে।’ উল্লেখ থাকে যে, ‘বারংবার স্মরণ করাইয়া দেওয়া সত্ত্বেও অত্র আসামি দূতাবাসে বাদিনীর চাকুরীর কোন ব্যবস্থা করিয়া দেয় নাই।’
বিগত ২০/১০/২০২৩ইং তারিখে বাদিনী অত্র আসামির বাসস্থানে অবস্থানকালে রাত অনুমান ১০ ঘটিকার সময় আসামিকে স্পষ্টভাবে জানাইয়া দেয় যে, দেশে প্রচলিত আইন অনুযায়ী রেজিস্টার্ড কাবিন ব্যতীত অত্র আসামির সঙ্গে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে জীবন-যাপন করা তার পক্ষে সম্ভব নহে। অতঃপর আসামি ক্ষিপ্ত হয়ে বাদিনীকে এলোপাতাড়িভাবে শরীরের বিভিন্নস্থানে কিল-ঘুষি মারে। বাদিনীকে পরে হুমকি দেয়া হয় যে, আসামির কাছে ফিরে না গেলে বাদিনী এবং আসামির বিভিন্ন সময়ের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছাড়িয়ে দেয়া হবে। বাদিনী উক্ত বিষয়ে বিগত ৩১/১২/২০২৩ইং তারিখে বাড্ডা থানায় জিডি করেন। যার নম্বর- ২৪৭৬।
মামলায় বলা হয়, ‘অত্র আসামি প্রতারণার আশ্রয় লইয়া বাদিনীর বৈধ স্বামী বলিয়া বাদিনীকে বিশ্বাস করাইয়া ৬(ছয়) মাস ধরে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে জীবন-যাপন করিয়া এবং ইরাকি দূতাবাসে বাদিনীকে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখাইয়া উহার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করিয়া, সর্বোপরী আসামির বাসায় অত্র বাদিনীকে আটকাইয়া রাখিয়া বাদিনীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে যৌন সঙ্গম ও শারীরিক নির্যাতন করিয়া নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০ (সংশোধনী-২০০৩) এর ৯(১) ধারায় অপরাধ করিয়াছে।’
সুত্রঃ মানবজমিন