র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার আলমগীর ওরফে রাসেল। ছবি: সংগৃহীত
টার্গেট বিধবা কিংবা স্বামী পরিত্যক্ত নারী। কায়দা করে বাসায় ডেকে নিয়ে তাদের ধর্ষণ করতেন মো. আলমগীর ওরফে রয়েল (৪০)। গোপনে সেই ধর্ষণের ভিডিও করে রাখতেন স্ত্রী হেলেনা খাতুন (৩০)। একইভাবে হেলেনা খাতুন ও তাঁর দুই বোনও ফাঁদে ফেলে পুরুষদের বাসায় নিতেন। জড়াতেন শারীরিক সম্পর্কে। তখন ভিডিও করতেন হেলেনার স্বামী আলমগীর।
পরে ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে আদায় করা হতো বিপুল অঙ্কের টাকা। টাকা আদায়ে এই চক্রটি ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে ফাঁকা স্ট্যাম্পে কিংবা চেকে স্বাক্ষরও নিয়ে রাখতেন। সর্বশেষ এক নারীর সঙ্গে এমন ঘটনার পর অভিযোগ পেয়ে র্যাব এই চক্রের চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে। তাদের বিরুদ্ধে রাজশাহী নগরীর চন্দ্রিমা থানায় মামলা হয়েছে।
চক্রের হোতা আলমগীর নগরীর চন্দ্রিমা থানার পদ্মা আবাসিক এলাকার ৩ নম্বর সড়কের এক বাসায় ভাড়া থাকতেন তিনি। এ বাসায় আলমগীরের স্ত্রী হেলেনা ছাড়াও শ্যালিকা দিলারা বেগম (৩৫) ও মমতাজ বেগম (৪২) থাকতেন। শুক্রবার রাতে এ বাড়ি থেকে তাঁদের সবাইকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-৫-এর একটি দল। এ সময় বাড়িটি থেকে কয়েকটি স্ট্যাম্প ও চেকবই জব্দ করা হয়।
শনিবার সকালে র্যাব-৫-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুনীম ফেরদৌস তাঁর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে জানান, গত বৃহস্পতিবার এক নারী নগরীর কোর্ট স্টেশনে গিয়ে তাঁর মোবাইল ফোন হারিয়ে ফেলেন। এ সময় আলমগীর তাঁর ফোন উদ্ধারের কথা বলে কৌশলে তাঁর ভাড়া বাসায় নিয়ে যান। সেখানে ওই নারীকে ধর্ষণ করা হয়। এ ঘটনার ভিডিও করেন হেলেনা।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুনীম ফেরদৌস আরও জানান, পরে এ ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে তিনটি ১০০ টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেন ও পাঁচ লাখ টাকা দাবি করেন রাসেল ও তাঁর স্ত্রী। টাকা না দিলে পাঁচ লাখ টাকা মূল্যে জমি দাবি করেন এই চক্রের সদস্যরা। ভুক্তভোগী নারী ওই বাসা থেকে পালিয়ে এসে বিষয়টি পরিবারের সদস্যদের জানান এবং থানায় মামলা করেন। বিষয়টি জানতে পেরে র্যাব চক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তার করে।
র্যাব অধিনায়ক জানান, আলমগীরের কাজই হলো স্বামী পরিত্যক্ত ও বিধবা নারীদের টার্গেট করে ফাঁদে ফেলে বাসায় নেওয়া। এরপর ধর্ষণ করে তার ভিডিও করা। এই ভিডিও করতেন তাঁর স্ত্রী ও দুই শ্যালিকা। আলমগীরের স্ত্রী-শ্যালিকারাও টার্গেট করা পুরুষদের ফাঁদে ফেলে বাসায় নিয়ে অনৈতিক সম্পর্কে লিপ্ত হতেন। আর তখন ভিডিও করতেন আলমগীর। পরে ভুক্তভোগীর কাছ থেকে একই কায়দায় টাকা আদায় করা হতো।
র্যাব অধিনায়ক জানান, তবে লোকলজ্জার ভয়ে ভুক্তভোগীরা কেউ মুখ খুলতেন না। সর্বশেষ ভুক্তভোগী এক নারী এ বিষয়ে মামলা করেছেন। এ মামলায় আলমগীর ও তাঁর স্ত্রী-শ্যালিকাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এ চক্রের সঙ্গে আর কেউ জড়িত ছিল কি না, তা র্যাব তদন্ত করে দেখছে। অন্য কারও সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে তাঁকেও আইনের আওতায় আনা হবে।
সুত্রঃ আজকের কাগজ