ছবি : সংগৃহীত
নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সক্রিয় তিন সদস্যকে আটক করেছে র্যাব।
শুক্রবার (২৮ জুন) সকালে র্যাব-১৫ এর কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তাদের আটকের বিষয়টি জানানো হয়।
এর আগে বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) রাতে কক্সবাজার সদরের চৌফলদন্ডী হতে তাদের আটক করে র্যাব-১৫ কক্সবাজার ও র্যাব-৭ চট্টগ্রামের যৌথ টিম।
এ সময় উগ্রপন্থি ১০টি বই, ২৯টি লিফলেট, একটি ডায়েরি, দুটি মাদ্রাসা পরিচয়পত্র, দুটি এনআইডি, একটি অ্যান্ড্রয়েড ও একটি বাটন মোবাইল এবং ৪ হাজার ৫৯০ টাকা উদ্ধার করা হয়।
র্যাবের ফোর্সেস আইন ও গণমাধ্যম শাখা পরিচালক আরাফাত ইসলাম বলেন, নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনগুলো একত্র হয়ে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা জঙ্গিদের নিয়ে দেশে হামলা ও নাশকতার পরিকল্পনা নিচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে কক্সবাজারে বৈঠক করতে এসেছিল আটকরা। একইসঙ্গে ১৮-২০ বছরের ছেলেদের টার্গেট করে সদস্য সংগ্রহও করছে তারা। বর্তমানে পার্শ্ববর্তী একটি দেশ থেকে নিষিদ্ধ সংগঠন ‘আনসার আল ইসলাম’ সংগঠনটি পরিচালিত হচ্ছে। বাংলাদেশকে তাদের একটি শাখা বলে দাবি করে সংগঠনটি।
আটকরা হলো, জামালপুরের ইসলামপুরের আবদুল ওহাবের ছেলে মো. জাকারিয়া মন্ডল (১৯), ভোলার বোরহান উদ্দিনের নুরুল আমিনের ছেলে মো. নিয়ামত উল্লাহ (২১) ও ফেনীর সোনাগাজীর ইদ্রিস আলীর ছেলে মো. ওজায়ের (১৯)।
র্যাবের ফোর্সেস আইন ও গণমাধ্যম শাখা পরিচালক বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটকরা জানায়, তারা নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন ‘আনসার আল ইসলাম’র সক্রিয় সদস্য। তারা আফগানিস্তানে তালেবানের উত্থানে উদ্বুদ্ধ হয়ে আলকায়েদা মতাদর্শের জঙ্গি সংগঠন ‘আনসার আল ইসলাম’ এ যোগদান করে। র্যাবসহ অন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়মিত অভিযানের ফলে আনসার আল ইসলাম এর কার্যক্রম প্রায় স্তিমিত হয়ে পড়ে। পরে সংগঠনের নতুন সদস্য সংগ্রহসহ অন্যান্য কার্যক্রম পরিচালনা করতে আনসার আল ইসলাম মতাদর্শী ‘আস-শাহাদাত’ নামে নতুন একটি জঙ্গি গ্রুপ তৈরি করে নতুন সদস্য সংগ্রহসহ দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করছিল। এই গ্রুপটি পার্শ্ববর্তী একটি দেশ হতে পরিচালিত হচ্ছে এবং এই সংগঠনের সদস্য সংখ্যা আনুমানিক ৮৫-১০০ জন। এই গ্রুপটির উদ্ভাবক হলেন পার্শ্ববর্তী দেশের নাগরিক হাবিবুল্লাহ এবং কথিত আমির সালাহউদ্দিন।
তিনি আরও জানান, এ গ্রুপটির বাংলাদেশের আঞ্চলিক শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত আমির ইসমাইল হোসেনকে র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে। অন্যান্য সদস্যরা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান করছে। বর্তমানে আনসার আল ইসলামের নাম ব্যবহার না করে ‘আস-শাহাদাত’ গ্রুপের নামে সদস্য সংগ্রহ ও দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করছিল। তাদের মূল উদ্দেশ্য হলো বাংলাদেশে ইসলামি খেলাফত প্রতিষ্ঠা করা। ধর্মীয় অপব্যাখ্যার মাধ্যমে সদস্যদের মাঝে দেশের বিচার ও শাসন ব্যবস্থা সম্পর্কে বিতৃষ্ণা তৈরি করে। এ উদ্দেশ্যে সংগঠনের সদস্যদের তারা বিভিন্ন উগ্রবাদি পুস্তিকা, মুসলমানদের উপর নির্যাতন ও উগ্রবাদী নেতাদের বক্তব্যের ভিডিও বিভিন্ন হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ, টেলিগ্রাম ও বিপ গ্রুপের মাধ্যমে সরবরাহ করত। তাদের গোপনীয়তা রক্ষার স্বার্থে গোপনীয় অ্যাপসের মাধ্যমে যোগাযোগ এবং সংগঠনের সকল প্রকার নির্দেশনা প্রদান করত।
র্যাবের এ কর্মকর্তা আটকদের বরাতে আরও জানায়, সংগঠনকে পুনরুজ্জীবিত করতে নতুন সদস্য রিক্রুটিং করছে। উঠতি বয়সী কিশোরদের অপব্যাখ্যা দিয়ে সহজে ব্রেন ওয়াশের মাধ্যমে ভুল পথে নেওয়া যায়, বিধায় কোমলমতি কিশোরদের তারা প্রথমে টার্গেট করত। তাই এই সংগঠনের বেশিরভাগ সদস্যই ১৮-২০ বছর বয়সী তরুণ এবং মাদ্রাসার ছাত্র ও শিক্ষক।
তিনি আরও জানান, আটক জাকারিয়া ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়াস্থ একটি মাদ্রাসায় অধ্যয়নরত। বিগত এক বছর পূর্বে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সংগঠনের আমির সালাহউদ্দিন ও ইসমাঈলের সঙ্গে তার পরিচয়। সে আনসার আল ইসলাম মতাদর্শী ‘আস-শাহাদাত’ গ্রুপের ময়মনসিংহ ও জামালপুর অঞ্চলের দাওয়াতি শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। আর নিয়ামত এবং ওজায়ের চট্টগ্রামের পটিয়ার একটি মাদ্রাসার কিতাব শাখায় অধ্যয়নরত। তারাও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম গ্রুপের এক জঙ্গি নেতার সঙ্গে পরিচয়ের সূত্র ধরে উগ্রবাদী কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়েন।
তবে, কক্সবাজারে কার সঙ্গে তারা বৈঠক করছিল বা তারা তিন জেলার তিন তরুণ কীভাবে একত্র হলো সেই বিষয়ে কোনো তথ্য খোলাসা করা হয়নি। তারা দুর্গম কিংবা পাহাড়ি কোনো এলাকায় বৈঠকে না গিয়ে সহজ যাতায়াতযোগ্য সদরের চৌফলদন্ডীর কোনো এলাকায় তারা বৈঠক করছিল, তা স্পষ্ট উল্লেখ করেনি র্যাব।
তবে দেশের কোথাও জঙ্গি হামলার আশঙ্কা নেই বলে উল্লেখ করেছেন গোয়েন্দা সংস্থার দায়িত্বশীল সূত্র। এ ধরনের কোনো তথ্যও তাদের কাছে নেই বলে সূত্রটি নিশ্চিত করেছে।
সুত্রঃ কালবেলা