প্রতীকী ছবি
রাজশাহীতে দুই নারীকে প্রকাশ্যে বিদ্যুতের খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ নিয়ে শুক্রবার দিবাগত রাতে নগরের চন্দ্রিমা থানায় একটি মামলা হয়েছে। এর আগে গত বুধবার সকালে নগরের আসাম কলোনী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগী পরিবার বলছে, স্থানীয় একটি পরিবারের সদস্য হয়ে ছাত্র আন্দোলনকারীদের পরিচয়ে আসা একদল ছাত্র তাদের মারধর করে।
ছাত্র পরিচয়ে যারা এসেছিল তারা গায়ে সবুজ রঙের কটি পরেছিল। পরে মারধরের বিষয়টি মীমাংসা করার অজুহাতে দুই দিন থানায় মামলা করতে দেওয়া হয়নি। মীমাংসা না হলে শুক্রবার রাতে থানায় মামলা করা হয়।
মামলার বাদীর নাম রফিকুল ইসলাম।
এজাহারে তার স্ত্রী আকলিমা খাতুন ওরফে শাপলা (৩২) ও তার ছোট ভাই মিজানুর রহমানের স্ত্রী শারমিন আক্তারকে (৩১) বিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন করার অভিযোগ করা হয়েছে।
মামলায় আসামি হিসেবে আসাম কলোনীর বাসিন্দা শাহিন, তার স্ত্রী সাহিদা বেগম (৪২), মেয়ে স্নেহা (১৬) ও মনিরের মেয়ে মুক্তার (৩৫) নাম উল্লেখ করা হয়েছে। আর ছাত্র পরিচয়ে যারা এসেছিলেন তাদের নাম উল্লেখ না করে অজ্ঞাতনামা লেখা হয়েছে। আকলিমা ও শারমিনকে বাঁচাতে গেলে বাড়ির মূল মালিক স্বপন হাসানের ভাবী সোনিয়া খাতুনকেও (২৮) মারধর করা হয়।
মামলার এজাহারে নগদ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার লুটের অভিযোগও করা হয়।
ঘটনার পর বাড়ির মালিক স্বপন হাসান জানিয়েছিলেন, তারা মামলার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু দুই ছাত্র ফোন করে ওই দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত মীমাংসা করে দেওয়ার সময় নিয়েছিলেন। সন্ধ্যায় তারা এসে সব শুনে বলেছিলেন, হামলাকারীরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আন্দোলনকারীদের কেউ নন। তারা এ ব্যাপারে আইনি ব্যবস্থা নিতে পারেন।
এরপর রাতে তারা থানায় মামলা করতে যান। থানায় ভুক্তভোগী শারমিন, তার জা আকলিমা ও স্বপন হাসানের ভাবি তাদের নির্যাতনের বর্ণনা দেন। শারমিন বলেন, প্রতিবেশী শাহিনের অটোরিকশার গ্যারেজের শব্দদূষণ নিয়ে তার সঙ্গে ঘটনার দিন সকালে একটা ঝামেলা হয়। তারপর তারা ওই ছাত্রদের নিয়ে এসে তাদের বাড়িতে হামলা চালায়।
শারমিন বলেন, সানিয়া ভাবী (বাড়িওয়ালার ভাইয়ের স্ত্রী) ওদের অনুরোধ করে বললেন, ‘তোমরা একটু থামো বাবা, ওরা বাচ্চাদের একটু খাওয়াচ্ছে।’ ওরা বলল, ‘খাওয়াচ্ছে? এক মিনিট সময় দিলাম। এক মিনিটের মধ্যে বের না হলে আমরা ভাঙচুর করব।’ তখন আমরা ভাবিকে বাইরে রেখে দরজা বন্ধ করে দিয়েছি। ওরা ভাবিকে মাটিতে ফেলে নির্যাতন করে। এক মিনিট পার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দরজা ভেঙে আমাদের দুই জাকে টেনে-হিঁচড়ে বাইরে বের করে বিদ্যুতের খাম্বার সঙ্গে বেঁধে লাঠি দিয়ে পেটাতে লাগল।
তিনি বলেন, ‘ছাত্রদের দলে একজন মেয়ে ছিল। মেয়েটি দূর থেকে এসে আমার পেটের ওপরে জোরে লাথি মারল। আমার তিনটা বাচ্চা অপারেশন করে হয়েছে। সেই পেটে লাথি মারল। এরপর খবর পেয়ে সেনাবাহিনী এলে ওরা পালিয়ে যায়।’
স্বপন হাসান জানান, সেই দিনও থানায় মামলা করার সময় ওলিউল্লাহ নামের এক ছাত্র পরিচয় দিয়ে আবার মীমাংসা করে দেওয়ার কথা বলে মামলা না করার জন্য অনুরোধ করেন। তার কথা মতো সেই রাতে রফিকুল ইসলাম বাদী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করে তারা চলে আসেন।
চন্দ্রিমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইসমাইল হোসেন মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।