টাঙ্গাইলের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক খালেদা ইয়াসমিনকে বোমা মেরে হত্যার হুমকি দিয়ে চিঠি দিয়েছে উগ্রবাদী সংগঠন। এ ছাড়া তাকে কোথায় কিভাবে হত্যা করা করা হবে সেটাও উল্লেখ করা হয়েছে চিঠিতে।
এ দিকে তাকে হত্যা করতে না পারলে পরবর্তী ভয়ঙ্কর পরিকল্পনার কথাও চিঠিতে লিখেছে উগ্রবাদী সংগঠনটি। এই চিঠিকে কেন্দ্র করে টাঙ্গাইলের বিচারাঙ্গনে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। জোরদার করা হয়েছে বিচারকদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। খালেদা ইয়াসমিন শুক্রবার দুপুরে বিষয়টি সাংবাদিকদের জানান।
আদালত সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার একটি খাকি খামে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক খালেদা ইয়াসমিনের কাছে একটি চিঠি আসে। সেখানে প্রেরকের স্থানে ‘জুবায়ের রহমান’ লেখা রয়েছে।
চিঠি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বিচারক খালেদা ইয়াসমিন জানান, চিঠিটি পাওয়ার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। এছাড়া তিনি ও তার পরিবারের লোকজন বর্তমানে আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। দুই পৃষ্ঠার চিঠিটি লেখা হয়েছে হাতে। চিঠির লেখাগুলো এখানে হুবুহু তুলে ধরা হলো-
বিচারককে পাঠানো চিঠির প্রথম অংশ
‘ম্যাডাম- আপনাকে উদ্দেশ্য করে চিঠি দিলাম। বিস্তারিত পড়ে দেখুন। আমরা উগ্রবাদী সংগঠনের লোক। তাই জীবনে চলার পথে অনেক অন্যায় কাজ করেছি এমনকি এখনো করি। আমরা যখন যাকে টার্গেট করি তখন তাকে ছলে বলে কৌশলে হত্যা করি। এটাই আমাদের পেশা। এবার আপনাকে হত্যা করার পালা। কারণ আপনি নারী ও শিশু কোর্টে আসার পর থেকে এ পর্যন্ত অনেকটি বড় ধরনের মামলার রায় দিয়েছেন। তাতে আমাদের লোকজনের খুব বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে। তাই আল্লাহর দোহাই দিয়ে বলছি যদি নিজের জীবনের প্রতি মায়া থাকে তাহলে টাঙ্গাইল থেকে বদলি হয়ে চলে যান। যদি কথা না শুনেন তাহলে আমরা আপনাকে হত্যা করতে বাধ্য হবো। আর আমাদেরকে যারা সহযোগিতা করতেছে তারা কয়েকজন আইনজীবী এমনকি জজ কোর্ট ও ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের স্টাফদের সমন্বয়ে।’
চিঠিতে আরো লেখা ছিল-
‘আপনাকে যেভাবে হত্যা করা হবে তার ২টি নমুনা :
টার্গেট-১। অফিস হতে বাসা এর মধ্যে আসা যাওয়ার পথে আপনার গাড়িতে বোমা নিক্ষেপ করা হবে।
টার্গেট-২। অফিস চলাকালীন সময়ে লোকজনের ভিড়ের মধ্যে গিয়ে আপনার এজলাশ বা খাসকামরার মধ্যে বোমা নিক্ষেপ করা হবে।
তবে একটা কথা মনে রাখবেন আপনাকে পুলিশ যতই নিরাপত্তার মধ্যে রাখুক না কেন আপনাকে আমাদের বোমার হাত থেকে রক্ষা করতে পারবে না। তাই প্রাণ বাঁচাতে চাইলে টাঙ্গাইল হতে তাড়াতাড়ি বদলি হয়ে চলে যান।’
চিঠির দ্বিতীয় অংশে উগ্রবাদীরা অপহরণ ও হত্যার হুমকি দিয়ে লিখেছে-
‘যদি আপনাকে হত্যা করতে ব্যর্থ হই। তাহলে আমাদের হিংস্রতার টার্গেট রয়েছে আরেকটি। সেটা হলো-আপনার নারী ও শিশু কোর্টে ‘আউট সোর্সিং’ হিসেবে প্রসেস সার্ভার পদে যে ছেলেটি চাকরি করে সে নাকি আপনার খুব ঘনিষ্ট আত্মীয়। তাই আমাদের লক্ষ্য ছেলেটাকে অফিসে আসা যাওয়ার পথে বা কোর্ট থেকে বাইরে যাওয়া মাত্রই আমরা ছেলেটাকে অপহরণ করবো। পরে গহীন জায়গায় নিয়ে আটকিয়ে রেখে কমপক্ষে ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করবো। আর যদি টাকা না দিতে পারেন তাহলে ছেলেটাকে জবাই করে হত্যা করা হবে। পরে লাশ যমুনা নদীতে ফেলে দেয়া হবে। কথাটা মনে রাখবেন। ইতি, উগ্রবাদী সংগঠন।’
এ বিষয়ে টাঙ্গাইল র্যাব-১২-এর কোম্পানি কমান্ডার লে: কমান্ডার আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, র্যাবের সকল টিম বিষয়টি নিয়ে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে।
পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায় বলেন, বিচারক খালেদা ইয়াসমিন আমাদেরকে বিষয়টি জানিয়েছেন। বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখা হচ্ছে। বিচারক খালেদা ইয়াসমিন ও তার পরিবারের লোকজনদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া তার আসা যাওয়ার পথে এবং আদালতের নিরাপত্তার ব্যবস্থাগ্রহণ করা হয়েছে।
4 comments
জঙ্গীদের এই হুমকি ও আস্ফলন এখনি শক্তভাবে গুরত্ব দিয়ে অঙ্কুরে বিনাশ করতে হবে।
আমাদের আইন-সৃংখলা বাহিনী খুবই মেধাবী এই জঙ্গীদের ধরা তাদের কাছে সময়ের ব্যাপার মাত্র
বাংলাদেশে জঙ্গীদের কোন খাওয়া নেই কারণ আমাদের দেশের মানুষ জঙ্গীবাদ পছন্দ করে না।
জঙ্গীরা এত সাহস পায় কোথা থেকে বিষয়টি খবই চিন্তার কারণ আইন-সৃংখলা বাহিনীর যখন এত সচেতন তারপর এধরণে এধরনের ঔদত্যপূর্ণ চিঠি।