ইন্দোনেশিয়ার প্রধান দ্বীপের একটি স্কুলে এক ডজনেরও বেশি মেয়ের মাথা আংশিকভাবে ন্যাড়া করে দেওয়া হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ঠিকমতো হিজাব না পরার অভিযোগ আনার পর সোমবার স্কুলটির প্রধান শিক্ষক এ তথ্য জানিয়েছেন। ঘটনাটি লামোনগানের পূর্ব জাভা শহরে অবস্থিত রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন জুনিয়র হাই স্কুল এসএমপিএন-১-এর।
অ্যাক্টিভিস্টরা বলছেন, ২৭০ মিলিয়ন জনসংখ্যার দ্বীপপুঞ্জের রক্ষণশীল অংশে মুসলিম ও অমুসলিম মেয়েদের হিজাব পরতে বছরের পর বছর ধরে বাধ্য করা হয়েছে।
তবে দেশটি ২০২১ সালে স্কুলগুলোতে এ ধরনের বাধ্যতামূলক পোশাক নীতি বাতিল করে।
স্কুলটির প্রধান শিক্ষক হার্তো জানিয়েছেন, তার স্কুলের একজন শিক্ষক গত বুধবার ১৪ জন মুসলিম মেয়ের চুল আংশিকভাবে কামিয়ে দিয়েছেন। তবে শিক্ষকের পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি।
স্কুলের ছাত্রীরা তাদের হিজাবের নিচে ক্যাপ পরেনি জানিয়ে হার্তো বলেন, স্কুল এ ঘটনায় ক্ষমাপ্রার্থী এবং ওই শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের হিজাব পরার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। তবে অভ্যন্তরীণ ক্যাপ পরার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আমরা তাদের মা-বাবার কাছে ক্ষমা চেয়েছি এবং মধ্যস্থতার পর একটি সাধারণ বোঝাপড়ায় পৌঁছেছি।’ এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের মানসিক সহায়তা প্রদানেও স্কুল প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
এদিকে অধিকার গোষ্ঠীগুলো ওই শিক্ষককে চাকরিচ্যুত করার আহ্বান জানিয়েছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ইন্দোনেশিয়া গবেষক আন্দ্রেয়াস হারসোনো একটি বিবৃতিতে বলেছেন, ‘লামোনগানের ঘটনাটি সম্ভবত ইন্দোনেশিয়ার সবচেয়ে ভয়ানক ঘটনা। কোনো শিক্ষককেই ছাত্র-ছাত্রীদের চুল কাটার দায়ে শাস্তি দেওয়া হয়নি। লামোনগানের শিক্ষা অফিসের উচিত এই শিক্ষককে নিষিদ্ধ করা, অন্তত তাকে স্কুল থেকে সরিয়ে দেওয়া এবং ভুক্তভোগীদের ট্রমা মোকাবেলায় মনোবিজ্ঞানী নিয়োগ করা।’
গোষ্ঠীটি ২০২১ সালের একটি প্রতিবেদনে বলেছে, কিছু স্কুলছাত্রী সঠিকভাবে হিজাব না পরায় তাদের হিজাব কেটে দেওয়া হয়েছে।
অন্যরা হিজাব না পরার জন্য শাস্তি বা বহিষ্কারের সম্মুখীন হয়েছে।
ইন্দোনেশিয়া ছয়টি প্রধান ধর্মকে স্বীকৃতি দেয়। তবে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশটিতে ক্রমবর্ধমান ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। হিজাব ইস্যুটি ২০২১ সালে শিরোনাম হয়েছিল, যখন পশ্চিম সুমাত্রার একজন খ্রিস্টান ছাত্রীকে হিজাব পরার জন্য চাপ দেওয়া হয়েছিল। কর্মকর্তারা ওই ঘটনাকে ‘কেঁচো খুঁড়তে সাপ বের হওয়া’ হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন।
সূত্র : এএফপি, দৈনিক কালেরকন্ঠ