ঢাকার আদালত প্রাঙ্গণ থেকে গত বছর দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতেন এমন একজনকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়ে র্যাব বলছে, ওই ব্যক্তি কারাগারে থাকা জঙ্গিদের সঙ্গে ছদ্মবেশে সাক্ষাৎ করতেন।
রোববার রাতে ডিজিএফআইয়ের তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা বিভাগের সহযোগিতায় নারায়ণগঞ্জের রুপগঞ্জ থেকে এই অভিযুক্তসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-১। সোমবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব সদর দপ্তরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
র্যাব জানিয়েছে, জঙ্গি ছিনতায়ের পরিকল্পনা জানা আব্দুর রাজ্জাক ওরফে ইসহাক ওরফে সাইবা নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের আশুলিয়া, সাভার, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর ও ময়মনসিংহ অঞ্চলের প্রধান সমন্বয়কারী এবং প্রশিক্ষণ শাখার প্রধান।
গ্রেপ্তার অন্যরা হলেন- মো. শরিফুল ইসলাম ওরফে মুরাদ, আশিকুর রহমান ওরফে উসাইমান, মুহাম্মদ জাকারিয়া ওরফে আবরার, মো. আল আমিন ওরফে রবিন ওরফে সামুরা ও মো. আবু জর ওরফে মারুফ। গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় বিপুল পরিমাণ উগ্রবাদী বই এবং অন্য সরঞ্জাম।
র্যাব বলছে, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার ইসহাক গত বছর ঢাকার আদালত প্রাঙ্গণ থেকে দুই দুর্ধর্ষ জঙ্গি সদস্য পালানোর পরিকল্পনা নিয়ে জানতেন। তবে পলাতক জঙ্গিদের বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে কোনো তথ্য দেননি তিনি। এ ছাড়া কাশিমপুর কারাগারে থাকা আনসার আল ইসলামের সদস্যদের সঙ্গে নিয়মিত সাক্ষাৎ ও স্বজনদের সঙ্গে তাদের দেখা করিয়ে দেয়ার কাজ করতেন ইসহাক।
জঙ্গি ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা জানতেন ইসহাক, ছদ্মবেশে যেতেন কারাগারেও
আব্দুর রাজ্জাক ওরফে ইসহাক
গ্রেপ্তারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে কমান্ডার মঈন বলেন, গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা বিভিন্ন উগ্রবাদি পুস্তিকা, মুসলমানদের ওপর নির্যাতন ও উগ্রবাদী নেতাদের বক্তব্যের ভিডিও সরবরাহ করতেন। এ ছাড়াও তারা সংগঠনের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ভুল তথ্য প্রদান করে তাদের আত্মীয়-স্বজন, বিভিন্ন মাদ্রাসা ও সদস্যদের কাছ থেকে নিয়মিত অর্থ সংগ্রহ করতেন।
তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন সময়ে তারা মসজিদ, বাসা বা বিভিন্ন স্থানে সদস্যদের নিয়ে গোপন সভা পরিচালনা করতেন বলে জানা যায়। পাশ্ববর্তী বিভিন্ন দেশের সমমনা ব্যক্তিদের সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যোগাযোগ বজায় রাখতেন এবং তারা সংগঠনের সদস্যদের তথাকথিত হিজরতের উদ্দেশে বিভিন্ন প্রশিক্ষণের জন্য অবৈধ পথে পার্শ্ববর্তী দেশে পাঠাতেন।
বর্তমান আমীর আবু ইমরানের সঙ্গে যোগাযোগ ইসহাকের, দিতেন প্রশিক্ষণ
র্যাব জানায়, দাখিল পর্যন্ত পড়াশুনা করা আব্দুর রাজ্জাক ওরফে ইসহাক ওরফে সাইবা ২০১৫ সালে সংগঠনের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের মাধ্যমে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে আনসার আল ইসলামে যোগ দেন। বিভিন্ন পেশার আড়ালে সংগঠনের দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করতেন।
র্যাব আরও জানায়, তিনি সংগঠনের রাজধানীর আশুলিয়া, সাভার, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগের প্রধান সমন্বয়ক এবং প্রশিক্ষণ শাখার প্রধানের দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। আনসার আল ইসলামের বর্তমান আমীর আবু ইমরানের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ ছিল ইসহাকের। আমীরের নির্দেশেই তিনি রাজধানীর আশুলিয়া, সাভার, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর ও ময়মনসিংহ অঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সংগঠনের বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলেন।
অনলাইনে নতুন সদস্য সংগ্রহ করতেন ইসহাক
খন্দকার আল মঈন বলেন, অনলাইন মাধ্যমে জঙ্গিবাদ ও জিহাদে উদ্বুদ্ধ করে সংগঠনের জন্য নতুন সদস্য সংগ্রহ করতেন। তার নির্দেশে সংগঠনের নতুন সদস্যদের গাজীপুর, টঙ্গি ও ময়মনসিংহের বিভিন্ন আনসার হাউজে তাত্ত্বিক ও শারীরিক কসরতসহ বিভিন্ন ধরণের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হতো। তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিভিন্ন গোপনীয় অ্যাপস ব্যবহার করে সংগঠনের শীর্ষ স্থানীয় নেতাসহ অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতেন ও শীর্ষস্থানীয় নেতাদের কাছ থেকে নির্দেশনা নিতেন এবং সংগঠনে তার অনুসারীদের সব দিকনির্দেশনা দিতেন।
তিনি আরও বলেন, সংগঠনে নতুন রিক্রুট করা সদস্যদের কাট আউট সিস্টেম সম্পর্কিত বিষয়ে মৌখিক এবং লিখিত প্রশিক্ষণ দিতেন ইসহাক। কাট আউট সিস্টেমের নীতিমালা মেনে চলার নির্দেশনা দিতেন।
পাশ্ববর্তী দেশের জঙ্গিদের সঙ্গে যোগাযোগ, পাঠাতেন প্রশিক্ষণের জন্যও
পাশ্ববর্তী বিভিন্ন দেশের সমমনা ব্যক্তিদের সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের গোপন অ্যাপসের মাধ্যমে যোগাযোগ বজায় রাখতেন ইসহাক। তার নির্দেশনায় গ্রেপ্তার শরিফুল সংগঠনের বেশকিছু সদস্যকে তথাকথিত হিজরত ও বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণের জন্য অবৈধ পথে পার্শ্ববর্তী দেশে পাঠিয়েছিলেন। ইসহাকের নির্দেশে পাশ্ববর্তী দেশে পাঠানো ৪ জন সদস্য এ বছরের মাঝামাঝি সে দেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীরা হাতে গ্রেপ্তার হন।
কারাগারে বন্দি জঙ্গিদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ
কাশিমপুর কারাগারে বন্দি আনসার আল ইসলামের সদস্যদের সঙ্গে নিয়মিত দেখা করতেন ইসহাক। তাদের আত্মীয়-স্বজনদের দেখা করিয়ে দিতেন। তিনি আনসার আল ইসলামের শীর্ষ স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে সমন্বয় করায় সংগঠনটির অন্যতম সমন্বয়ক সাইবা হিসেবে পরিচিত পান।
রকমারি ব্যবসার আড়ালে দাওয়াতি কাজ করছেন জাকারিয়া
খন্দকার আল মঈন বলেন, গ্রেপ্তার জাকারিয়া ওরফে আবরার স্থানীয় একটি মাদ্রাসা হতে হাফেজি পড়া সম্পন্ন করেন। তিনি ২০২০ সালে সংগঠনের শীর্ষ স্থানীয় নেতৃবৃন্দের মাধ্যমে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে আনসার আল ইসলামে যোগ দেন। তিনি ভ্রাম্যমাণ রকমারি ব্যবসার আড়ালে সংগঠনের দাওয়াতি কার্যক্রম ও নতুন সদস্য সংগ্রহের কার্যক্রম পরিচালনা করতেন। তিনি রাজধানীর আশুলিয়া, সাভার এবং মানিকগঞ্জ জেলার সংগঠনের সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন।
জাকারিয়া গ্রেপ্তার আশিকের নির্দেশে কারাতে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন এবং ব্লাকবেল্ট অর্জন করেন। পরবর্তীতে তিনি গ্রেপ্তার ইসহাকের নির্দেশে সংগঠনের সদস্যদের সাভার ও গাজীপুর, টুঙ্গির বিভিন্ন আনসার হাউজে শারীরিক (কারাতে) প্রশিক্ষণ প্রদান করতেন। এ ছাড়াও তিনি নতুন সদস্য সংগ্রহসহ সদস্যদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিভিন্ন গোপনীয় অ্যাপসের মাধমে যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দিতেন।
সুত্রঃ নিউজ বাংলা