সাতকানিয়ায় ১১ বছরের মাদ্রাসার হেফজখানার শিক্ষার্থীকে বলাৎকারের অভিযোগ উঠেছে খন্ডকালিন হাফেজের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় স্থানীয়ভাবে মীমাংসার মাধ্যমে অভিযুক্তকে বাঁচানোর চেষ্টা করছেন স্থানীয় ইউপি সদস্য।
মঙ্গলবার (২ জানুয়ারি) রাত আনুমানিক ৯টায় উপজেলার কেওচিয়া ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড জনার কেওচিয়া হাজী আমির হোসেন হেফজখানা ও এতিমখানার ছাদে উক্ত ঘটনা ঘটে।
এ বিষয়ে ভিকটিম শিশুটির পিতা আবদুল গফুর বাদী হয়ে মঙ্গলবার (৯ জানুয়ারি) সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে একটি অভিযোগ করেছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার কেওচিয়া ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড, জনার কেওচিয়া মাইজ পাড়ার আব্দুল আলমের পুত্র অভিযুক্ত হাফেজ মোঃ মিসকাত (২৪) ভিকটিমের প্রতিবেশি ও পার্শ্ববর্তী বাড়ীর লোক।
এবং স্থানীয় হাজী আমির হোসেন হেফজখানা ও এতিমখানায় শিক্ষকদের অনুপস্থিতিতে শিক্ষকতাসহ মাজন আলী জামে মসজিদে ইমামের অনুপস্থিতিতে ইমামতি করে থাকেন।
ভিকটিম শিশুটিও একই হেফজখানা ও এতিমখানায় হিফয শাখার আবাসিক শিক্ষার্থী। মঙ্গলবার (২ জানুয়ারি) রাত আনুমানিক দশটায় বাড়ীতে এসে কান্নাকাটি করতে থাকে শিশুটি।
তখন শিশুটি মা-বাবা কি হয়েছে জানতে চাইলে শিশুটি জানায় রাত আনুমানিক ৯টার সময় ভাত খাওয়ার জন্য ছুটি দিলে সেখানে থাকা অন্যান্য ছাত্রদের সাথে ভাত খেতে যাওয়ার সময় অভিযুক্ত হাফেজ মোঃ মিসকাত শিশুটিকে এতিমখানার ছাদে নিয়ে মুখ চেপে ধরে বলাৎকার করে।
এরপর উক্ত ঘটনার বিষয়টি কাউকে জানালে আমার ছেলেকে খুন করে ফেলবে বলে হুমকি প্রদান করে।
শিশুটির মা পারভীন আকতার বলেন, ২০২২ সালের জুন মাসেও ফোরকানিয়া পড়তে সকালে মাদ্রাসায় গেলে মসজিদ পরিস্কার করার কথা বলে মসজিদের ভিতরে বলাৎকার করে ওই শিক্ষক। তখন অভিযুক্ত হাফেজ মোঃ মিসকাতের মাসহ পায়ে ধরে মাফ চেয়ে এই ধরনের ঘটনা আর কখনো করবেনা বললে বিষয়টি নিয়ে কোন অভিযোগ করা হয়নি।
এবারের ঘটনার কথা জানতে পেরে স্থানীয় ইউপি সদস্য মফিজুর রহমান ঘটনার বিষয়ে কোন বিচার না করে বিষয়টি আপোষ করে দেওয়ার কথা বলেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় ইউপি সদস্য মফিজুর রহমান ঘটনার কথা অস্বীকার করে কোন ধরনের বলাৎকারের ঘটনা ঘটেনি বলে দাবি করেন। তিনি বলেন,ছোট ঘটনা তাই স্থানীয়ভাবে মীমাংসা করার চেষ্টা করা হয়েছে। বলাৎকার হয়েছে কিনা সেটা কি তিনি নির্ধারণ করার অধিকার রাখেন কিনা এবং বলাৎকার অথবা ধর্ষণের বিচার স্থানীয়ভাবে তিনি করতে পারেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ছোট ঘটনা তাই স্থানীয়ভাবে মীমাংসা করার চেষ্টা করেছি, আমি নতুন মানুষ তাই বুঝতে পারিনি।
অভিযুক্তকে বাঁচানোর বিষয়ে জানতে চাইলে কেওচিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ওসমান আলী বলেন, বলাৎকার হয়েছে কিনা সেটা নির্ধারণ করা এবং বলাৎকার অথবা ধর্ষণের বিচার স্থানীয়ভাবে করার কোন ধরনের সুযোগ নেই।
এ বিষয়ে ইউপি সদস্য আমাকে জানায়নি, আমি আজকেই বিষয়টি শুনেছি। ইউপি সদস্য যদি অভিযুক্ত হয় তাহলে সেটার দায় একান্তই তাঁর। প্রশাসন বিষয়টি খতিয়ে দেখে দোষী হলে ব্যাবস্থা গ্রহণ করতে পারে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে হাজী আমির হোসেন হেফজখানা ও এতিমখানার শিক্ষক হাফেজ মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন বলেন, অভিযুক্ত মিসকাত এই মাদ্রাসায় খন্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে থাকার বিষয়টি সত্যি নয়। আমি তাঁকে কখনো দেখিনি, শুধুমাত্র ঘটনার দিন রাতে সে মাদ্রাসায় এসেছিলো এবং শিশুটির সাথে আমার কাছে এসে পরদিন তাঁর বাড়িতে ৪/৫ জন হাফেজকে ভাত খাওয়ার দাওয়াত দেয়।
এর পরের কিছুই আমি জানিনা, তবে ঘটনার দিন রাত আনুমানিক ১১টায় স্থানীয় ইউপি সদস্য এসেছিলো এবং ভিকটিম শিশুটির সাথে কথা বলে কিছু বিষয়ে জিজ্ঞেস করে চলে যায় আমি আর কিছুই জানিনা। মাদ্রাসার ছাদে বলাৎকার করার বিষয়টি আমি জানিনা।
এ বিষয়ে জানতে হাজী আমির হোসেন হেফজখানা ও এতিমখানার প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আলীর মোবাইলে একাধিকবার কল করলেও তিনি ফোন না ধরায় তাঁর বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
সাতকানিয়া থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রিটন সরকার বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে পাঠানো অভিযোগ পেয়েছি, ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে, তদন্ত পূর্বক যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিল্টন বিশ্বাস দৈনিক আজাদীকে বলেন, শিশুটির পিতার অভিযোগ পেয়েছি। যেহেতু এটি একটি ফৌজদারি অপরাধ তাই সাতকানিয়া থানার ওসি সাহেবকে এ বিষয়ে তদন্ত পূর্বক ব্যাবস্থা নিতে বলেছি। অভিযুক্তকে স্থানীয় ইউপি সদস্য মফিজুর রহমান বাচাঁনোর চেষ্টায় স্থানীয় ভাবে মিমাংসা করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বলাৎকার অথবা ধর্ষনের বিচার স্থানীয় ভাবে মিমাংসা করার কোন ধরনের সুযোগ এবং এখতিয়ার কারও নেই। তদন্তে ইউপি সদস্যের গাফেলতি অথবা সংশ্লিষ্টতার প্রমাণিত হলে তিনিও অভিযুক্ত হবেন এবং তাঁর বিরুদ্ধেও আইনি ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সুত্রঃ দৈনিক আজাদী